‘তজম্মুল স্যার কর্মগুণে চিরকাল বেঁচে থাকবেন’ নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা

00000 copyসর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ ছিলেন তজম্মুল আলী। ১৯৬৩ সালে যখন রামসুন্দর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন তখন থেকে তিনি শিক্ষার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন। রামসুন্দর বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কিংবা শিক্ষার মান উন্নয়নই নয়; অর্ধশতাব্দির ইতহাসে পুরো বিশ্বনাথের শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতায় জগতে এক অবিস্মরনীয় নামে পরিণত হয়েছেন।
আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই; তাঁর রেখে যাওয়া গুণাবলী আমাদের বারবার অনুপ্রাণিত করে। তিনি মহৎ মানুষ ছিলেন, সজ্জন ছিলেন, বিভিন্ন গুণের অধিকারী নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। গঠনে-বলনে তিনি যত ছোটখাটো মানুষ হলেও তার হৃদয় ছিল বড়, মহৎ এবং আলোকিত। আজকের নাগরিক স্মরণসভায় মধ্য দিয়ে সাবেক ছাত্রসহ বিশ্বনাথবাসী তাঁর আলোকিত জীবনকে ধারণ করব। আর বর্তমান ছাত্ররা তার শিক্ষার দিকগুলো অনুসরণ করবেন এবং এর মাধ্যমেই তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তার কর্মময় জীবনের মহৎকে অনুপ্রাণিত হয়ে।
শনিবার সিলেটের বিশ্বনাথের রামসুন্দর অগ্রগামী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি তজম্মুল আলী স্মরণে অনুষ্ঠিত নাগরিক স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিলের বক্তব্যে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পংকী খানের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) ডা: আব্দুল মালিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধু পাসের উদ্দেশ্যে বিদ্যা নয়; বরং নিজেকে গড়তে, মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে নৈতিকতা শিক্ষার পাশাপাশি ভালো শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা যাতে সৃজনশীল শিক্ষার্জন করতে পারে সেজন্য শিক্ষকদেরকে গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যার যার ধর্মের উপর বিশ্বাস ও নৈতিকতা বজায় রেখে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে শিক্ষার্থীদেরকে। কোন অবস্থায় জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না। কারণ ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। মাদক একটি অভিশাপ, তাই মাদক থেকে সবাইকে অবশ্যাই দূরে থাকতে হবে। এতে সবাই পাবে সুস্থ ও সুন্দর একটি জীবন।
তিনি প্রয়াত তজম্মুল আলীকে স্মরণ করে বলেন, প্রয়াত তজম্মুল আলী বিশ্বনাথের আলোকবর্তিতা ছিলেন। তিনি শিক্ষার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বনাথের যারা আলোকিত হয়েছেন তারা তার হাত ধরেই হয়েছেন। এ কারণে পুরো বিশ্বনাথ বাসী তাকে স্মরণ করবে। তার রেখে যাওয়া কর্মগুণের কারণে তিনি আজীবন বিশ্বনাথবাসী হৃদয়ে থাকবেন। এমনি ভাবে বর্তমান শিক্ষকদের তজম্মুল আলীর মতো নিবেদিত হয়ে শিক্ষাদানের আহ্বান জানান তিনি।
বিশ্বনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবুল কালাম কছির, সাহাব উদ্দিন ও সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারীর সঞ্চালনায় নাগরিক শোক সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আ.ন.ম শফিকুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহ ফরিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ চৌধুরী, বিশ্বনাথ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল হক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দে, উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নেছার আহমদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য আবু তালেব মুরাদ, দেওকলস দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মুকিদ, জালালাবাদ টিটি কলেজের অধ্যক্ষ হাসমত উল্লাহ, দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী, অলংকারী ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল, প্রাক্তন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোলায়েমান হোসাইন, রামসুন্দর অগ্রগামী মডেল উচ্চ বিদ্যায়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নবেন্দু জ্যোতি দে, শিক্ষক আবদুল ওয়াদুদ বিএসসি, সুনামগঞ্জ জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শুকুর আলী, প্রাইম ব্যাংকের ম্যানেজার তাজ উদ্দিন, চিকিৎসক শাহনুর আলী মামুন, এম এ এম খান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাজী আবদুল হাই, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জয়নাল আবেদীন, জেলা যুবলীগ নেতা শেখ মো. আজাদ, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মকদ্দছ আলী, যুগ্ম আহবায়ক আলতাব হোসেন, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোসাদ্দিক হোসেন সাজুল, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী শিপন। বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হুমায়ুন কবির, শিক্ষার্থী তাহমিনা চৌধুরী তমা, ইফতেখার আহমদ, প্রথমা ভৌমিক অথৈ।
স্মরণ সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মৌলানা মো. মহসিন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজ। মিলাদ পরিচালনা করেন বিশ্বনাথ বায়তুল নাজাত জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আশফাক উদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মরহুম তজম্মুল আলী স্যারের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে তাঁরই সুযোগ্য পুত্র মিজানুর রহমান বলেন, তার মরহুম পিতার প্রতি বিশ্বনাথবাসী চেয়ে ভালবাসা দেখিয়েছেন এরজন্য তার পরিবার কৃতজ্ঞা।
১৯৪২ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন তজম্মুল আলী। তার পিতা ছিপত আলী পন্ডিত ও মাতা মোছাম্মৎ সায়রা বানু । ১৯৬৩ সাল থেকে ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি রামসুন্দর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্ত্রী ওয়াহীদা খাতুনকে নিয়ে ছিল তাঁর সুখের সংসার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। গত ১১ জুলাই রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Developed by: