ইভ্যালির চেয়ারম্যান এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তার স্বামী ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেন। শনিবার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুদক গত ১৫ জুলাই তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এদিকে আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন ভিত্তিক অর্থ স্থানান্তর (এমএফএস) সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। শনিবার নিজ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিকাশ জানায়, গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষায় কয়েকটি মার্চেন্টের জন্য বিকাশ-এর পেমেন্ট গেটওয়ে সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

এর আগে ৯ জুলাই ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ৩৩৮ কোটি টাকা জালিয়াতি বা আত্মসাত বিষয়ে দুদকের তদন্ত চলমান থাকায় এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। গত ৪ জুলাই, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেয়া ৩৩৮ কোটি টাকা আত্মসাত কিংবা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা করে ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে দুদক। এজন্য ৮ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছে কমিশন। টিমের আরেক সদস্য হলেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শিহাব সালাম।

গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় যে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭.১৮ কোটি টাকা। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ ২১৩.৯৪ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের নিকট হতে ১৮৯.৮৫ কোটি টাকার মালামাল বাকিতে গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৩.৮০ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১৪ কোটি টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে পণ্য ডেলিভারি না দেয়া ও মার্চেন্টদের ১৯০ কোটি টাকা পাওনা ফেরত দেয়ার বিষয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকেও নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির প্রকৃত দেনা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় গত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে। এজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলকে কোম্পানির ডাটাবেজে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ।

তবে শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের এ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ রাসেল। সেখানে তিনি ইভ্যালিকে আরেকটু সময় দিতে গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানান। স্ট্যাটাসে রাসেল বলেন, ‘ইভ্যালির পক্ষে বিপক্ষে অনেক মতামত সোস্যাল মিডিয়াতে পেয়েছি এবং দেখেছি। এতদিন ইভ্যালির যে লস সেটা শুধু বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এর এই ইনভেস্টমেন্ট গিয়েছে। এখন ইভ্যালির অর্গানিক সেলস অনেক বেড়েছে। অনেকে এই সময় মতামত দিচ্ছেন বন্ধ করে পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি করা হোক।’

‘কিন্ত এখন তো আমরা অগ্রিম টাকা পাই না। গত দুই সপ্তাহ কিভাবে তাহলে পুরাতন অর্ডার থেকে ৪০ কোটি টাকার অধিক ডেলিভারি করা হলো? আমরা বড় বড় সেলারদের ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি পেমেন্ট দিয়েছি। তারা আমাদের পাশে থাকতে চান। কিন্ত মিডিয়া অথবা সোস্যাল মিডিয়া যখন ডেসটিনি এর মতো কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করেন, তখন যে কেউ ভয় পেয়ে যান। আমরা বিজনেস সবাই বুঝি। এটা একটা চলমান সম্পর্কে থাকার বিষয়। সেলস থাকলে সেলার থাকবে এবং সেলার থাকলে পণ্য থাকবে।’

Developed by: