আদালতে কাঁদলেন পরীমণি বললেন, ‘ফাঁসানো হচ্ছে’ 

আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) কাঁদলেন গ্রেফতার নায়িকা পরীমণি। নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেছেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ‘ফাঁসানো’ হচ্ছে। এদিকে, আদালতে গিয়েছিলেন পরীমণির বয়োবৃদ্ধ নানা শামসুল হক গাজী। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, পরীমণি পরিস্থিতির শিকার। সে কোনো অপরাধ করেনি। অপরদিকে পরীমণি, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ও মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে ফের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যে পরীমণি ও মৌ দুই দিনের এবং রাজের দু’টি মামলায় ৬ দিনের রিমান্ড হয়েছে।

দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শুনানি শেষে ঢাকার হাকিম আদালত থেকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত জনতার সামনে পরীমণি দাবি করেন, তিনি নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা শতভাগ মিথ্যা। সাংবাদিক, আপনারা কী করছেন?’

বনানী থানার মাদক আইনের মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে পরীমণিকে আদালতে হাজির করে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল সিআইডি। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরীমণির সঙ্গে গ্রেপ্তার তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকেও দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।

আদালতে কাঁদলেন পরীমণি বললেন, ‘ফাঁসানো হচ্ছে’ শুনানি শেষে এজলাস থেকে বেরিয়ে লিফটে ওঠার আগে ভিড় করে থাকা উৎসুক জনতাকে উদ্দেশ্য করে পরীমণি বলেন, ‘আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে, আর আপনারা হাসছেন!’ এর আগে আদালতে শুনানির সময় পরীমনি কাঁদতে থাকেন। মিনিট পাঁচেক ধরে তিনি কাঁদতে থাকেন। আশরাফুল ইসলাম দীপুও কাঁদছিলেন। আর পরীমনির এক সিনেমার প্রযোজক রাজ ছিলেন বিমর্ষ। আদালতে তারা কোন কথা বলেননি।

রিমান্ড শুনানি চলাকালে পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান দাবি করেন, পরীমণি গ্রেপ্তার হওয়ার পর যে পোশাক পরে ছিলেন, আজও সেই পোশাক পরে আছেন। তিনি তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার বা কথা বলার কোনো সুযোগ পাননি। এটি একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। এই আইনজীবী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘একশ কয়েক ঘণ্টা ধরে তিনি একই কাপড় পড়ে আছেন।’ তখন পরীমণির পাহারায় থাকা নারী পুলিশ সদস্য এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিচারককে বলেন, এই চিত্রনায়িকা হাজতে অন্য পোশাকে ছিলেন। এজলাসে আসার সময় তিনি পোশাক পাল্টে আগের পোশাকই পড়েছেন।

সিএমএম আদালতে পরীমনির আসার সংবাদে ব্যাপক ভিড় হয়। দুপুর ১২টার দিকে আদালতে আসেন পরীমনির বৃদ্ধ নানা শামসুল হক গাজী। আদালতে শুনানির সময় অবশ্য তিনি অন্য কক্ষে ছিলেন। তার সঙ্গে পরীমনির দেখা হয়নি। ঢাকার বনানীর বাসায় পরীমনির সঙ্গেই থাকতেন শামসুল হক গাজী। আদালত প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরীমনি নিজের জন্য জীবনে কিছুই করেনি। সব মানুষের জন্য সে দান করেছে। আর এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছে। র‌্যাবের অভিযানের দিন শামসুল হক গাজীও বনানীর ওই বাসায় ছিলেন। বাসা থেকে মাদক উদ্ধারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, খালি বোতল ছিল। এখন সেগুলো মাদকের বোতল নাকি কিসের বোতল জানি না। বাবা-মাকে হারানোর পর পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার সিংহখালী গ্রামে নানাবাড়িতেই তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে।

নানা শামসুল হক এক সময় স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরে পরীমনির সঙ্গে তিনিও ঢাকায় চলে আসেন। পরীমনির মুক্তি দাবি করে তার নানা বলেন, নিজে একটা ফ্ল্যাট করে নাই, কিছু করে নাই। এফডিসিতে প্রত্যেক বছরে গরীবদের জন্য গরু কোরবানি দেয়। নিজে কিছু করে নাই, সে সব মানুষের জন্য বিলিয়ে দেয়। আল্লাহ পাক যদি ওরে মাফ করে আর কি। তিনি বলেন, মেয়েটার বাপ মা কেউ নাই। আমার কাছেই বড় হয়েছে, মানুষ হয়েছে। ওর জন্য দুশ্চিন্তায় আমার ঘুম হয় না। কেউ নেই ওকে দেখার জন্য। আমার নিজেরও কিছুদিন আগে অপারেশন হয়েছে। এখনো আমি অসুস্থ। তাকে কতদিন দেখি না। তাই বাধ্য হয়েই এখানে এসেছি।

মাদক মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ চারজনকে ফের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। বনানী থানার মাদক আইনের মামলায় পরীমণি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দুই দিন করে রিমান্ডে পেয়েছে সিআইডি। আর প্রযোজক রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে মাদক ও পর্নগ্রাফি আইনের দুই মামলায় মোট ছয়দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। এদিকে মাদক দ্রব্যসহ গ্রেফতার কথিত মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার দুই দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় আরও পাঁচ দিনের হেফাজত চাওয়া হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Developed by: