লন্ডনে চৌ দ্দ দি ন

২৩শে জানুয়ারি ২০২৩
সো ম বা র

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতার এয়ারওয়েজে ২২শে জানুয়ারি, রবিবার রাত ৯.৩০মি. যাত্রা করি ইংল্যান্ডের উদ্দেশে। আমাকে ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয় ভাগনা জুবেল। রাতে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কাতার এয়ারওয়েজ দোহার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। একজন যাত্রী খুঁজছিলাম হিথ্রো পর্যন্ত যাকে গাইড হিসেবে অবলম্বন করা যায়। শেষ পর্যন্ত গোলাপগঞ্জের একজন ষাটোর্ধ্ব মুরব্বি পেয়ে গেলাম। এক সাথেই কাতার এয়ারওয়েজে উঠলাম। সীটের তফাৎ থাকায় উভয়ের অবস্থান বেশ দূরে হয়ে গেল। তবে আমার পাশের সীটে পেয়ে গেলাম মৌলভীবাজারের অধিবাসী ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ী সাদেক সাহেবকে। তিনি বারী ভাইসহ অনেককেই চিনেন। ব্যবসায়ী কাজে ঢাকায় এসেছিলেন। তার সাথে জমে উঠলো আলাপ। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ভালোবাসেন কিন্তু ব্যবসা ছাড়া কিছুই বুঝেন না। দোহাতে নেমে আর তাকে পেলাম না। গোলাপগঞ্জের মুরব্বি আমার জন্য অপেক্ষা করলেন এবং আমাকে দিকনিদের্শনা দিলেন। সে অনুসারে আমি দোহা টু হিথ্রোগামী কাতার এয়ারলাইন্সে উঠি। এবার পাশের সীটে সাদা ভদ্রমহিলা।

Exif_JPEG_420

হিথ্রো এয়ারপোর্টে কাতার এয়ারওয়েজ ল্যান্ড করার সাথে সাথে মোবাইলের সময় পালটে গেল। ইংল্যান্ডের সময় তখন দুপুর ১২টা। সুশৃঙ্খল লাইনে ইমিগ্রেশন শেষ করে বেরুলাম। কথা ছিল বারী ভাইয়ের বড় ছেলে সামিউল বারী সৌরভ আমাকে হিথ্রো থেকে রিসিভ করবে। সৌরভকে অবগত করলাম আমি হিথ্রো বিমানবন্দরে অবস্থান করছি। সেও আসছে জানালো। সম্ভবত সৌরভের সাথে বাংলাদেশে আমার একবার দেখা হয়েছিল। এখন দ্বিতীয়বার। ভাবছি তাকে চিনতে পারব কি না। কিন্তু সে-ই আমাকে প্রথম দর্শনে চিনে ফেলল। সৌরভ আমার জন্য কপি নিলো। আমরা এসেক্সের দিকে যাত্রার উদ্দেশ্যে সৌরভের জীপে উঠলাম এবং পাশাপাশি বসলাম।
হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতেই দেখি নীরব নিস্তব্ধ প্রকৃতি। ¯েœা পড়ে আছে। লোকজন নেই, কোলাহল নেই, শুধু গাড়ি
চলছে রাস্তায়। ইংল্যান্ডে প্রথম ভ্রমণ তাই দৃশ্যগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছি এবং সৌরভের সাথে আলাপ করছি। পথিমধ্যে সৌরভের মোবাইল বেজে উঠলো। ভাবীর ফোন, ‘তোমার চাচাকে কি রিসিভ করেছ? উনাকে নাশতা খাওয়াইছ বাবা। ঠিক আছে চলে আসো।’ আমার সাথেও আলাপ হলো ভাবীর।
সৌরভ জানালো ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগবে বাসায় পৌঁছতে। দ্রæত এগুচ্ছে গাড়ি। রাস্তার আশপাশের দৃশ্যগুলো অবলোকন করছি। পাতাবিহীন গাছ। নিচে ধবধবে সাদা ¯েœা। সূর্যবিহীন ও মানুষবিহীন দুপুর। পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে একদম ভোর। শুধু দ্রæতযানে মানুষ চড়ছে। গাড়ির পিছনে গাড়ি। প্রতিযোগিতা নেই। সুশৃংখল লাইনেই এগুচ্ছে গাড়িগুলো। হর্নের কোনো শব্দ নেই। হর্ন বাজানোর প্রয়োজন নেই। অনর্থক হর্ন বাজালে ট্র্যাফিক জরিমানা।

Exif_JPEG_420

ওয়েলো লজ
গ্রেসের এসেক্সের ওয়েলো লজে পৌঁছলাম। দোতলা বাড়ি। সামনের উঠোনে পার্কিং ব্যবস্থা। উঠোনে দুইটি কার রাখা। বাড়ির একদিকে খালি মাঠ অন্যদিকে একটু গ্যাপের পরেই আরেকটা বাড়ি। খুব নিরিবিলি পরিবেশ। দরজা খুলে ভাবী ও ভাই সাব আমাকে রিসিভ করলেন। জানতে চাইলেন ঠিক আছিতো। আমি বললাম ঠিক আছি। কোনো সমস্যা নেই। ভাইসাব বললেন, ঠান্ডা লাগাবে না। ঠান্ডা লাগলেই সমস্যা হয়ে যাবে। হাতমুখ ধুয়ে নাও। সকালের নাশতা করব। আর আমরা বিকালে বাইরে বের হব। তোমার জন্য ঠান্ডার কিছু কাপড় কিনব। বাংলাদেশের এসব কাপড়ে হবে না।
হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। ভাবী নানান জাতের পিঠাসহ নাশতা দিলেন। আমি ও ভাই সাব খাওয়া শুরু করলাম। ভাই সাবের ফোন নিয়ে মোসাইদ বন্ধুকে জানালাম বাসায় পৌঁছেছি এবং বিকেলে রয়েল রিজেন্সিতে দেখা হবে তাও ঠিক করলাম।
তারপর আমার জন্য সংরক্ষিত দোতলায় নির্ধারিত রুমে ভাইসাব নিয়ে গেলেন। সবকিছু দেখিয়ে দিলেন। ওয়াইফাই সংযোগ দিলেন। রেস্ট নিতে বললেন এবং লাঞ্চ করে আমাকে নিয়ে বিকালে বেরুবেন তাও জানালেন।

দোতলায় চারটি বেডরুম। অন্য বেডরুমগুলোতে তারা থাকলেও আমার জন্য সংরক্ষিত বেডরুমে সম্ভবত কেউ থাকেন না। আমার জন্য সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। চমৎকার সুন্দর পরিপাটি বেডরুমে ডুকে সৌন্দর্য অবলোকন করলাম। ঘুমোতে চেষ্টা করলাম। ঘুমাতে পারি নি। কারণ দিনে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস আমার নেই। শুরু করলাম একটার পর একটা ফোনালাপ। সবাইকে জানান দিলাম লন্ডনে আছি। অনেকে অবাকই হলেন। কারণ আমার ইংল্যান্ডের ভিসাপ্রাপ্তি কিংবা ইংল্যান্ড ভ্রমণ সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এমনকি ইংল্যান্ডে যারা থাকেন তাদের মধ্যেও দুই চারজন যারা ভিসা প্রসেসিংয়ে জড়িত ছিলেন, তারা শুধু জানেন। তবে তারাও কাউকে বলেন নাই। কথা হয়েছিল আমি ইংল্যান্ড পৌঁছার পরেই সবাইকে জানানো হবে। তারাও কথা রেখেছিলেন। তাই ইংল্যান্ডের কথা শুনে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি অনেকে অগ্নিমূর্তি। কেউ কেউ ক্ষোভে বলাবলি শুরু করলেন এত ঘনিষ্ট সম্পর্ক অথচ একদিনও বলেনি ইংল্যান্ডের ভিসা হয়েছে! ইংল্যান্ড যাবে। ইংল্যান্ড পৌঁছে এখন ফেসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছে!
তারপর মোসাইদ বন্ধুর সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতা। ২৫ জানুয়ারির সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকে-এর অনুষ্ঠান কিভাবে সাজানো হয়েছে। দক্ষিণ সুরমাবাসী প্রোগ্রাম কিভাবে সফল করা যায় ইত্যাদি ছিল আলোচনার মূল বিষয়। পরিশেষে কথা হলো বিকেলে যখন দেখা হচ্ছে তখন বসে সবকিছু আলাপ করা যাবে।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভাইসাব লাঞ্চের জন্য ডাকলেন। তিনি ভাবছেন আমি হয়তো ঘুমিয়ে আছি। কিন্তু আমি ঘুমাইনি। ভাইসাব, ভাবী ও আমি একসাথে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলাম। লাঞ্চ করলাম। বাংলাদেশি আইটেমের খাবার। যেন বাংলাদেশের সিলেটের খাবার। এর একটা কারণও ছিল ভাবী ও ভাইসাব আমার একদিন পূর্বেই বাংলাদেশ থেকে লন্ডন পৌঁছেছেন। তাই তারা বাংলাদেশের হরেক রকম তরিতরকারি, শাকসবজি ও মাছ নিয়ে এসেছেন।
বিকেলে বেরুবার কথা আগে থেকেই ছিল। তাই খাওয়া শেষে আমাকে রেডি হতে বললেন। আমি রেডি হলাম। চমৎকার সুন্দর ও আকর্ষণীয় গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসলেন ভাইসাব। আমি পাশের সীটে বসলাম। সীটবেল্ট লাগাতে বললেন, তারপর স্টার্ট দিয়ে বললেন, আমরা আগে কিছু শপিং করে নিই। তারপর রয়েল রিজেন্সিতে যাব।
পৌঁছলাম বিশাল একটি শপিংমলে। অবাক হয়ে দেখলাম শপিংমলের চেয়েও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা বিশাল মনে হলো। পার্কিংয়ে গাড়ি সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গাড়ি সাজিয়ে রাখার দিকনির্দেশনা দেওয়ার লোকবল নেই সেখানে। নিজ নিজ দায়িত্বে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে গাড়ি। পার্কিং স্পটে বেশির ভাগই কারজাতীয় গাড়ি নজর কাড়ল। বিশাল এ শপিংমলের এক তলা ও দোতলায় কাপড়ের আইটেম। ভাইসাব আমার জন্য শীতের কাপড় জাম্পার, সুইটার, মোজা কিনলেন। আর কিছু কিনতে চাইলেন আমি বারণ করলাম। আবার গাড়িতে চড়লাম। পৌঁছে গেলাম বাঙালির সুপরিচিত ও আমার কাক্সিক্ষত অভিজাত কমিউনিটি সেন্টার রয়েল রিজেন্সিতে। পৌঁছে দেখি মোসাইদ বন্ধু আমাদের জন্য অফিসে অপেক্ষা করছেন। মোলাকাত করলাম। কুশলাদি জানা হলো। একসাথে রয়েল রিজেন্সির অফিসে বসলাম।

Exif_JPEG_420

মোসাইদ বন্ধু ২৫শে জানুয়ারির সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকে-এর আয়োজন বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন। বারী ভাইকে আমন্ত্রণ করলেন এবং দক্ষিণ সুরমাবাসীর পক্ষ থেকে আমাকে নিয়ে একটি আয়োজনের ব্যবস্থা করা যায় কি না বারী ভাইয়ের পরামর্শ চাইলেন। সাথে সাথে আজিজ চৌধুরীর সাথে ইতঃপূর্বে এ ব্যাপারে আলাপ হয়েছে এ বিষয়টিও জানালেন। বারী ভাই সব শুনে বললেন, ‘তাকে নিয়ে বসার দরকার আছে। তবে আরও কিছু মানুষ সংযুক্ত করলে ভালো হয়।’ তিনি আজিজ চৌধুরীর সাথে ফোনে আলাপ করলেন এবং দক্ষিণ সুরমার দাউদপুর ইউনিয়নের অধিবাসী রাজনীতিবিদ মো. নাসির উদ্দিনকে ২৫শে জানুয়ারির অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানালেন। কথা দিলেন আজিজ চৌধুরী ও বারী ভাই ২৫শে জানুয়ারির সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের অনুষ্ঠানে থাকবেন এবং অনুষ্ঠান শেষে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব কিভাবে দক্ষিণ সুরমাবাসীকে নিয়ে অনুষ্ঠান করা যায়। বন্ধু মোসাইদ ও আমি খুব বেশি খুশি হলাম। আয়োজনের দায়িত্ব কমিউনিটির দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিয়েছেন বলে।
রয়েল রিজেন্সির আলোচনা শেষ করে বারী ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মোসাইদ বন্ধুর বাসায় দুই দিনের আশ্রয় নিতে যাত্রা শুরু করলাম। হল থেকে বেরিয়েই বন্ধু মোসাইদ আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন ওয়েস্টার কার্ড। তিনি আমার জন্য ওয়েস্টার কার্ড ক্রয় করে রেখেছিলেন। আমি যাতে সেই কার্ড ব্যবহার করে বাস ও ট্রেন চড়তে পারি। ওয়েস্টার কার্ড দিয়েই শুরু হলো বাসযাত্রা। বাস এসে থামলো ইস্ট লন্ডন মসজিদের পাশে। বাস থেকে নেমেই বহুদিনের কাক্সিক্ষত এবং বাংলাদেশি মুসলমানদের নির্মিত আধুনিক ও নজরকাড়া স্থাপত্যশিল্প ইস্ট লন্ডন মসজিদ চোখের সামনে পড়ল।

ইস্ট লন্ডন মসজিদ
লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নির্মিত এক অসাধারণ স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন ইস্ট লন্ডন মসজিদ। বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিশেষ করে সিলেটিদের মিলনমেলার কেন্দ্রস্থল হোয়াইটচ্যাপলে অবস্থিত এ মসজিদটি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায়কে ধর্মীয় সেবা প্রদান করে থাকে।
প্রায় সাত হাজার মুসল্লি এই মসজিদে একই সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা এই সুবিশাল মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে মূলত তিন তলা ভবনের এই মসজিদের কাজ শুরু হয় যা শেষ হয় ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন মুসলিম সেন্টার এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে মারিয়াম সেন্টারের কাজ সম্পন্ন হয়। বিশাল এই মসজিদ কমপ্লেক্স তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২২.৩ মিলিয়ন পাউন্ড। এই মসজিদে দুটি অংশের একটি হলো লন্ডন মুসলিম সেন্টার এবং মারিয়াম সেন্টার।
২০১১ সালে ইংল্যান্ডের উগ্রপন্থী দল ইংলিশ ডিফেন্স লীগ মসজিদের সামনে দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘোষণা দিলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের প্রতিরোধের মুখে সরকার মসজিদের সামনে সব রকমের সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সমগ্র ইউরোপে ইসলাম ধর্মের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে প্রতি মাসে এই মসজিদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে আসেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানসহ মসজিদ ‘আল হারাম’ এবং ‘মসজিদ আল নববী’র ইমাম সাহেব এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। জানা যায় বছরের একটি বিশেষ সময়ে এই মসজিদের দরজা খুলে দেওয়া হয় অমুসলিমদের জন্য যাতে তারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারেন।

মোসাইদ বন্ধু হেঁটে হেঁটে নিয়ে গেলেন মাইক্রোবিজনেস সেন্টারের ফেইথ প্রিন্টার্সে। সেখানে মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত বাংলাদেশিদের একটা জমজমাট আড্ডা থাকে। প্রথম দর্শনেই সেখানে দেখা হলো কবি হামিদ মোহাম্মদের সাথে। হামিদ মোহাম্মদের কবিতা ও নামের সাথে দীর্ঘদিন যাবত পরিচিত হলেও এটাই স্বশরীরে প্রথম সাক্ষাৎ। একজন স্পষ্টভাষী, জড়তাবিহীন, মমতায় ঘেরা মানুষ হামিদ মোহাম্মদ। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনর্গল কথা বলতে লাগলেন। সিলেটের সাহিত্যাঙ্গন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নও করতে লাগলেন। তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন কবির কথার উত্তরগুলো খুবই সতর্কতার সহিত দিতে হলো। কারণ বারবার বিপদের সম্ভাবনা মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখলাম হামিদ মোহাম্মদ অগ্রজ বন্ধুর মতো, ছায়ার মতো, আমার শেষ দিন পর্যন্ত পাশে ছিলেন। একজন ভালো মনের মানুষ। একজন বন্ধুবৎসল মানুষ হামিদ মোহাম্মদ ভাই।

ফেইথ প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী মোসলেহ উদ্দিন আহমদ ভাইয়ের ব্যবসায়ী ভীষণ ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে তবুও তাঁর সাথে চলছে সরব আড্ডা। মোসলেহ ভাই একসময় ‘যুগভেরী’ পত্রিকায় কাজ করতেন। সিলেটের মিডিয়া জগতের প্রায় সকলের সাথে তাঁর সুপরিচয় রয়েছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সিলেটের মিডিয়া জগতের বিভিন্ন জনের কুশলাদি জানতে চাইলেন। শান্তশিষ্ট মোসলেহ ভাইয়ের এই প্রিন্টিং প্রেস মনে হচ্ছে সিলেটি সৃজনশীল মানুষের অবসরের একটি সরব আড্ডাঘর।
ফেইথ প্রিন্টার্স থেকে মোসাইদ বন্ধু ২৫শে জানুয়ারির অনুষ্ঠানের ক্রেস্ট, ব্যানার দেখলেন। দক্ষিণ সুরমাবাসীর আয়োজনের ব্যানার ও দাওয়াতনামার ডিজাইন করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেল। মোসাইদ বন্ধুর বাসা থেকে ভাবী বারবার ফোন দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা উঠতে পারছি না। তারপর মোসাইদ বন্ধুর বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম।
অনেক রাতে মোসাইদ বন্ধুর কিংক্রসের বাসায় পৌঁছলাম। ভাবী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাচ্চারা আমাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। বাচ্চাদের সাথে সকালে দেখা হবে না। কারণ সকালে আমরা ঘুমে থাকা অবস্থায় তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাবে। তাদের সাথে দেখা হলো, কথা হলো। ভাবী খাবাব দিলেন, আমরা খেলাম।
আমি বন্ধুর সদ্য ভ‚মিষ্ঠ হওয়া ‘গলিত মমের শহরে’ কাব্যগ্রন্থ তার হাতে দিলাম। তারপর বন্ধু মোসাইদ বের করলেন আমার জন্য খরিদ
করা লাইকা মোবাইলের সীম। যার নাম্বার ০৭৪৪০৬৬১৬৩৫। পর্যটক ব্যাগ, শীতের কাপড়, সেইভিং ক্রিমসহ চৌদ্দ দিনের চলার পথে আমার যা যা দরকার সবই সাজিয়ে রেখেছেন। আমি অবাক হয়ে দেখলাম। তার ভালোবাসাকে গভীর থেকে অবলোকন করলাম। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত চললো বন্ধুর সাথে আলাপ আলোচনা। আবিষ্কার করা হলো একজন নাট্যকারকে। যাকে কবি ও গীতিকার হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে
চিনতাম। এখন মনে হচ্ছে একজন ভালো নাট্যকার। তার অনেক নাটক লন্ডনের ‘বেতার বাংলা’য় প্রচারিত হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষার নাটকগুলো বেশ ফুরফুরে মজাদার মনে হলো। ডেস্কটপে সংরক্ষিত দুইটি নাটক শুনলাম। ভালো ম্যাসেজ আছে নাটকগুলোতে। স্কিপ্টগুলো হাতে করেই নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু ঘষামাজার কথা বলে তিনি রেখে দিলেন। তারপরও আশাবাদী আগামী মেলায় তার নাটকগুলোর সমগ্র প্রকাশিত হবে। রাতভর চললো লেখালেখি নিয়ে আলোচনা। আমাকে তার বেডে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিলেন।

(চলবে)

 

Developed by: