জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতাল, ঢাকা-এর সহকারী অধ্যাপক, বিশিষ্ট মরমি কবি ডা. মোঃ জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী বলেছেন, পৃথিবীতে মানবজাতির আগমনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কল্যাণ সাধনা করা। আল কুরআন সেই কল্যাণচিন্তাকেই মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। আল কুরআন যেমন মানবজাতির পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করে, তেমনি দুনিয়াতেও সম্মানজনক জীবন উপহার দেয়। সিলেট মুসলিম সেন্টার কুরআনকে মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়ার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মানবকল্যাণে নিবেদিত জীবনই সফল জীবন। তাই জীবনে সফলতা পেতে হলে অবশ্যই কুরআনকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।
‘সিলেট মুসলিম সেন্টার’ ও ‘সিলেট লেখক ফোরাম’-এর যৌথ উদ্যোগে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক শায়খ শফিকুর রহমান আল মাদানী অনূদিত সহজ বাংলায় কোরআনুল কারিমের বঙ্গানুবাদ ‘আল কুরআনুল কারিম’ এবং শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ খ্রি.) বিশ্বনাথের শাহ্ আমিন উল্লাহ মাদরাসায় সিলেট লেখক ফোরামের সভাপতি কবি নাজমুল ইসলাম মকবুলের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহ্ আমিন উল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড বিয়ানীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক তাজ উদ্দিন আহমদ, সিলেট মুসলিম সেন্টারের অন্যতম পরিচালক লেখক, প্রকাশক ও সংগঠক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল, কবি ও সাংবাদিক সাইফুর রহমান কায়েস, সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী আজিজ মিয়া।
মাদরাসার শিক্ষক হাফিজ মোঃ সাদিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এবং কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাদরাসার জেনারেল সভাপতি ওয়ারিছ আলী মেম্বার, মাদরাসার দায়িত্বশীল মোঃ চুনুমিয়া, মাদরাসার সেক্রেটারী কামরুল ইসলাম। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোঃ আব্দুল মালিক, গৌছ আলী, শমসের আলী, মস্তফা মিয়া, হেলাল আহমদ, ময়না মিয়া শাহ, ইমাম হেলাল উদ্দিন, শাহ মোঃ আছকির মিয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শেষে প্রধান অতিথিসহ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের হাতে একটি করে পবিত্র কুরআনুল কারিম উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এছাড়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী বলেন, আল কুরআন বিশ্বমানবতার মুক্তির একমাত্র সঠিক ও নির্ভুল রোডম্যাপ। একে বিশ্বাস এবং ধারণের মাধ্যমেই উভয় জাহানের শান্তি ও মুক্তি অর্জন করা সম্ভব। অথচ মানবজাতি আজ আল কুরআন থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। আল কুরআনের সাথে মানুষকে জুড়ে দিতে সিলেট মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগ সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। আমরা যত বেশি আল কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়তে পারবো, তত বেশি সাফল্য আমাদের হাতে ধরা দেবে। এই মাদরাসায় সেই আল কুরআনকে শিক্ষা দেওয়া হয়। আমি আশা করি, এই ছোট্ট-ছোট্ট শিশুরাই একদিন এ জাতির নেতৃত্ব দেবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড বিয়ানীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক তাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা আজ সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। কারণ আমরা আল্লাহর কালামের বিতরণের অনুষ্ঠানে আসতে পেরেছি। এটা চাইলেই পারা যায় না। আল্লাহর রহমত ছিল বলেই আসতে পেরেছি। আল কুরআনও আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। সিলেট মুসলিম সেন্টারের এই কুরআন বিতরণ অনুষ্ঠান একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
প্রকাশক ও সংগঠক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল বলেন, সিলেট মুসলিম সেন্টার-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহ এবং তাঁর আল কুরআনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে দেওয়া। এ লক্ষ্যেই আমরা মানুষের কাছে আল কুরআনুল কারিমকে তুলে দিচ্ছি। ব্যক্তিকে পরিবর্তন করে দেওয়া কিংবা আদর্শিক সমাজ গঠন, এই দুটো বিষয়ের জন্য আল কুরআন শিক্ষাগ্রহণ এবং বাস্তবায়ন সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের মিশন। আর এই লক্ষ্যেই সিলেট মুসলিম সেন্টার কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা প্রায় আট হাজার কপি কুরআনুল কারিম দেশ-বিদেশের কুরআনপ্রেমিক মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।
কবি ও সাংবাদিক সাইফুর রহমান কায়েস বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে যারাই উপস্থিত হয়েছেন তারা সবাই ভাগ্যবান। তবে আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য কুরআনকে বিতরণ এবং গ্রহণ। আল কুরআনকে গ্রহণ করে একে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারলেই আমরা সত্যিকার অর্থে ভাগ্যবান হয়ে উঠবো।
সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী আজিজ মিয়া বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আল কুরআনকে সঠিক করে তেলাওয়াত এবং একে বুঝে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারলেই মানুষ সত্যিকার মানুষ হয়ে ওঠে। সিলেট মুসলিম সেন্টার এই উদ্দেশ্য নিয়ে আল কুরআন বিতরণের আয়োজন করেছে। যা আমাদের মতো মানুষদেরকে অনুপ্রাণিত করছে। আর সিলেট লেখক ফোরাম শিক্ষাসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে আমাদের ছোট্ট-ছোট্ট শিশুদেরকে প্রেরণা দিচ্ছেন। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট লেখক ফোরাম-এর সভাপতি কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল বলেন, সাহিত্য আমাদের ধ্যান-জ্ঞান। সাহিত্যের মাধ্যমেই আমরা লেখকরা সমাজ পরিবর্তনে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ। আল কুরআন সমাজ পরিবর্তনের একমাত্র নির্ভুল এবং সঠিক মূলমন্ত্র দীক্ষা দেয়, যা স্বয়ং আল্লাহ তায়া’লা কর্তৃক সিদ্ধান্তকৃত। মানুষকে আল কুরআনের আলোকে গড়ে তোলার জন্যই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছ। পাশাপাশি শিক্ষাসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে আমাদের শিশুরা যাতে আল কুরআনের স্পর্শে সত্যিকার মানুষ হতে পারে, এই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের পথযাত্রা। আমি আশা করি, আল কুরআনকে ছড়িয়ে দেওয়ার যে মহান মিশন সিলেট মুসলিম সেন্টার পালন করে যাচ্ছে, এতে লেখক ফোরামও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।