9644f9dc5a3978a8a75d251e683d9ae7 অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিহ্নিত রাজাকার আলবদর আল শামস বাহিনী প্রধানদের দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে বিচারকার্য শুরু করা হবে। ভবিষ্যতে রাজাকার, আলবদর ও মানবতাবিরোধীদের উপজেলাভিত্তিক তালিকা করার বিষয়েও মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে।

গতকাল সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রায় ৪৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত ও সনদ দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যার বেশিরভাগই সঠিক নয়। এ কারণে বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্ত তালিকা নতুন করে যাচাই বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় কমিটি করে প্রকাশ্য সামনা-সামনি শুনানির মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করা হবে।

বর্তমান সময় পর্যন্ত সারা দেশে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯৬ জন সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন বলে তিনি জানান।  বর্তমানে প্রশাসনে পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তার (আমলা) বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দুদকের তদন্ত রিপোর্ট প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুল রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মন্ত্রণালয় অভিযোগটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তদন্তে দোষী হলে কোন পদমর্যাদা বিবেচনা করা হবে না, ভুল তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিলে তা অবশ্যই বাতিল করা হবে। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী মানব ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা সংগঠিত করে বাংলাদেশকে পরিণত করেছিল বধ্যভূমিতে। বাঙালি জাতির পাকিস্তানি বাহিনীর এরূপ ঘৃণ্য বর্বরতাকে কখনও ভুলবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের এ জাতি মনে রাখবে আজীবন, স্মরণ করবে অন্তকাল। আগত প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রেখেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনের বিচারের রায় প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং অন্যান্যের বিচার কার্যও এগিয়ে চলছে। এনিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য সেলিনা বেগমের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে বর্তমানে সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের সনদ ও গেজেট বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর সরজমিন তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৮২ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি তাদের গত ৩০ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবরে অন লাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন যাচাই বাছাইপূর্বক গেজেটভূক্ত করে তাদের নামে সনদ ইস্যু করা হবে। আগামী ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করা হবে। সরকারি দলের সদস্য বেগম আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী জানান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক যে সকল নারীরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন এবং যারা নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও তালিকা করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় হতে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত তালিকা অনুযায়ী নারী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২০৯ জন।

Developed by: