
শনিবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশ করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ দলের চেয়ারপার্সনকে সরাসরি দুষেছেন এই বইয়ে।
এতে মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কাছে ওই সময় তাঁর দুই সন্তান তারেক ও কোকোর ভাগ্যই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো আলোচনায় যেতে রাজি ছিলেন না খালেদা জিয়া। নানা রকম চাপেও অনড় ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। সে সময়ে দেশের মানুষের নেত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন কিংবা একজন রাজনীতিবিদের চেয়েও একজন মা হিসেবে দুই সন্তানের মুক্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন খালেদা জিয়া।’
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) থেকে প্রকাশিত বইটি মওদুদ লিখেছেন কারাবন্দী থাকা অবস্থায়। ইংরেজিতে লেখা বইটিতে মওদুদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে সেনা কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনের অবস্থা, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি, রাজনৈতিক সমঝোতা, সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ভূমিকা এবং ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।
একদিকে দলের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগের গুনগানও গেয়েছেন মওদুদ আহমদ তার এই বইয়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বইয়ের একটি অধ্যায়ে ওই নির্বাচনের ফলকে নীরব বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করেন লেখক।
তিনি লিখেছেন- ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে শেখ হাসিনার অবস্থান, জঙ্গিবাদের বিপক্ষে অবস্থান এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের পক্ষে পরিবর্তনের আহ্বান দেড় কোটি তরুণ ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাশাপাশি ১০ টাকায় চাল, বিনা মূল্যে সার, প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে।
এসব ইতিবাচক ভোটের পাশাপাশি বিএনপির নেতিবাচক ভোটও বিজয়কে এগিয়ে নিয়েছে বলে মনে করেন মওদুদ আহমদ।
বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার সম্পর্কে মওদুদ লিখেছেন- বিএনপি সরকারের অপশাসন, বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা, বিএনপির সরকারের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতি এবং ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিতর্কটি সমাধানে ব্যর্থ হয়ে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দায়িত্ব দেওয়ায় বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন ভোটাররা।
তবে বইয়ে আওয়ামী লীগকে মওদুদ পুরোপুরি ছেড়ে কথা বলেন নি। তিনি লিখেছেন- ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যারা দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেখতে চায় এ দেশের মানুষ, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।’
আর প্রকাশনা উৎসবে তিনি বলেছেন, কোনো প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে নয়, আমরা যাতে ইতিহাসের প্রকৃত সত্য ভুলে না যাই সে জন্যই এগুলো লিখে রাখা।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজ উদ্দিন আহমেদ, ইংরেজি দৈনিক নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইউপিএলের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত থেকে বইটির প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন।