অভিজিৎ হত্যার দায়ে আটককৃত ফারাবীর সিলেটের বাসায় পুলিশের তল্লাশি

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হতাকান্ডের সাথে জড়িত আটক শফিউর রহমান ফারাবীর সিলেটের বাসায় পুলিশের একটি দল তল্লাশি অভিযান চালায়। এ সময় তারা বাসা থেকে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার জব্ধ করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার বেলা সোয়া ১২টার দিকে নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার ১৬/ডি ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমানের ৫ম তলা বাসার তৃতীয় তলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল তল্লাশি চালায়। এ সময় সিলেট কোতোয়ালী থানার ৫ সদস্যের একটি টিম
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো। পুলিশের তল্লাশিকালে ফারাবীর বাসায় তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তল্লাশি শেষে ডিএমপি পুলিশ ফারাবীর ব্যবহৃত একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার জব্ধ করে নিয়ে যায়।

জানা যায়, নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার ১৬/ডি ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমানের ৫ম তলা বাসার তৃতীয় তলায় সৎমা ও বোনকে নিয়ে থাকতেন ফারাবী। প্রায় বছর খানিক আগে এ বাসাটি ভাড়া নেন তিনি। ভাড়া নেয়ার সময় অভিভাবক হিসেবে ফারাবীর সৎমা বাসার মালিকের সাথে মাসিক ৭ হাজার টাকার চুক্তিতে বাসাটি ভাড়া নেন। এর পর থেকে ঐ বাসায় থাকতেন ফারাবী। জানালেন বাসার মালিক ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান। ফারাবীর বোন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে ডাক্তারী পড়ছেন। মূলত মা ও বোনকে নিয়েই ফারাবী এ বাসায় থাকতেন। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় ফারাবী জানিয়ে ছিলেন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করেন। তার বাবা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন তিনি মারা গেছেন। তাদের ঢাকায় বাসা রয়েছে। তার বাবার রেখে যাওয়া টাকা পয়সা এবং ঢাকায় তাদের নিজস্ব বাসার ভাড়া দিয়ে তাদের পরিবার চলে। এর বাহিরে আর কিছু তার জানা নেই বলে জানান বাসার মালিক মুজিবুর রহমান।
এলাকাবাসীর কয়েক জনের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, প্রায় এক বছর থেকে ফারাবী ওই এলাকায় থাকলেও এলাকার অনেকেই তাকে চেনেন না। এমনকি পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনের সাথেও তার বা তার পরিবারের খুব একটা সম্পর্ক ছিল না। তবে স্থানীয় মসজিদে তাকে প্রায়ই নামাজে এবং রাস্তাঘাটে বের হলে অধিকাংশ সময় মোবাইলফোনে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। মসজিদে একাধিক বার তাকে মোবাইল ব্যবহারে নিষেধও করা হয়। চোখে কালো ফ্রেমের চশা, মুখে দাড়ি ফারাবী প্রায় সময় সাধারণ সার্ট-প্যান্ট ও মাথায় টুপি পরে চলাফেরা করতেন। যে কারণে অনেকেই মনে করতেন তিনি হয়ত কোন মাদ্রাসায় পড়েন অথবা পড়ান। কিন্তু ব্লগার ও অভিজিৎ রায় হত্যাকান্ডে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার ছবি প্রকাশ হলে অনেকেই তাকে চিনতে পারেন।

উল্লেখ্য, বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ও ব্লগার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়কে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানী ঢাকার বাংলা একাডেমী চত্বরের একুশের বইমেলা থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। অভিজিৎ মুক্তমনা নামে একটি ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয় শফিউর রহমান ফারাবীকে। কারণ ফারাবী বিভিন্ন সময় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিজিৎ হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী (গণজাগরণ মঞ্চ) ব্লগার রাজীব হায়দারের জানাযা পড়ানো ইমামকে হত্যার হুমকি দেয়ায় ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তাকে আরেকবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রায় ৫ মাস জেল খাটার পর ওই বছরের ২১ আগষ্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান।

Developed by: