গোলাম মোস্তফা ফারুক, লন্ডন থেকে যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি সভা পদবঞ্চিত বিদ্রোহী বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিবাদে পণ্ড হয়ে গেছে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপি অফিসের চেয়ার-টেবিলও ভাংচুর করেছে। এ নিয়ে নতুন কমিটি এবং পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুপক্ষই মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে উভয় গ্র“প। নতুন কমিটিকে মিটিং করতে না দিয়ে বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা বিএনপির অফিস শুধু ভাংচুরই করেনি, তারা ওইসব নেতাকে খুঁজেও বেড়াচ্ছেন।
বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপ্পল এলাকায় বিএনপির নতুন অফিসে নবগঠিত কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছিল। সভাটি মূলত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন আগমন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক ও বিভিন্ন কর্মসূচি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে। সভা শুরুর আগেই সেখানে বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। সন্ধ্যা ৭টার আগে তারা হোয়াইট চ্যাপ্পল ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির নতুন অফিসে ডাকা হয়েছিল সভা। হোয়াইট চ্যাপ্পল পাতাল রেলের উপরে তিন তলায় একটি রুম সম্প্রতি বিএনপির অফিস হিসেবে ভাড়া নেয়া হয়। তিনতলা বিল্ডিংয়ে উঠার একটি ছোট দরজা। এ দরজার সম্মুখে বিএনপি বিদ্রোহী গ্র“পের নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা ৭টা থেকে এসে অবস্থান নেন। এ সময় নতুন কমিটির সহসভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, সহসাধারণ সম্পাদক রাজন আলী সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম আহমদ অফিসে ঢোকার চেষ্টা করে বিদ্রোহীদের কাছে বাধাগ্রস্ত হন। এ সময় বিদ্রোহীরা তাদের কাছে সভা শুরুর নির্দিষ্ট সময় জানতে চাইলে উত্তরে তারা বলেন, সভার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। কোথায় পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা তারা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় বিদ্রোহীদের বেশ কয়েকজন নিচ তলার গেটে এসে জড়ো হন, অবস্থার বেগতিক দেখে নতুন কমিটির যে তিনজন এসেছিলেন তারাও সটকে পড়েন।
পরবর্তীকালে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদের নেতৃত্বে কয়েকজন অফিসের পার্শ্ববর্তী একটি বাঙালি মিষ্টির দোকানে থেকে অফিসের দিক আসতে চাইলে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার নেতৃত্বে তাকে ধাওয়া দিয়ে ধর ধর বলে চিৎকার করতে থাকে। এ অবস্থায় সাধারণ সম্পাদকও ওই স্থান থেকে দ্রুত পালিয়ে যান।
বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা এ সময় বিএনপির নতুন অফিসে অবস্থান নিয়ে আসবাবপত্র ভাংচুর করে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। পার্শ্ববর্তী দোকান ও মার্কেটের লোকদের মধ্যে এ সময় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। হোয়াইট চ্যাপ্পল মার্কেটে আসা লোকজন দাঁড়িয়ে থেকে দুগ্র“পের ধাওয়া প্রত্যক্ষ করেন। কয়েকজন শ্বেতাঙ্গও এ সময় ব্যাপারটি দাঁড়িয়ে দেখেন। বিদ্রোহী বিএনপি নেতাদের ধাওয়ার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন আগমনের প্রস্তুতিমূলক সভাটি সে স্থানে আর অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। পরবর্তীকালে নবগঠিত কমিটির নেতারা ব্রিকলেইন বাংলা টাউনের একটি রেস্টুরেন্টে এ সভাটি করেন।
এদিকে বিএনপির নতুন এবং বাদপড়া পুরনো নেতাকর্মীদের মাঝে এর রেশ এখনও বিদ্যমান। টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে উভয় গ্র“পের মধ্যে। সংঘর্ষের আশংকাও রয়েছে। তবে বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা পরবর্তী সভায় যাওয়ার আর চেষ্টা বা সাহস কোনোটিই করেননি। যদি তারা জানতেন সভাটি কোথায় হচ্ছে, সেখানে নবগঠিত কমিটির একক কর্তৃত্ব রয়েছে। আর পরবর্তী সভাটি হয়েছে সাধারণ সম্পাদকের নিজের রেস্টুরেন্টের বেইসমেন্টে। সেখানে বিদ্রোহীরা যেতে সাহস দেখাননি।
যুক্তরাজ্যে বিএনপির ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে এমনভাবে কখনো কমিটি গঠন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়নি। কমিটি গঠনের পূর্বে সব জোনাল কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছিলেন। লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র সহসভাপতি তরেক রহমান বৈঠকে তাদের কাছে নতুন কমিটির রূপরেখা মতামত ইত্যাদি জানতে চেয়েছেন। সবার পরামর্শের ভিত্তিতে নতুন কমিটিতে ত্যাগী ও আদর্শবান লোককে স্থান দেয়ার কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু কমিটি গঠনের পর এর কোনো কিছুর প্রতিফল না দেখতে পেয়ে পুরনো ত্যাগী নেতাকর্মীদের একাশং বিদ্রোহী হয়ে উঠেন। তাদের দাবি যুক্তরাজ্যের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে থেকে এভাবে একনায়কোচিত কমিটি গঠন কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া ২৫ বছর থেকে যারা বিএনপিকে শহীদ জিয়ার আদর্শকে লালিত করে আসছেন, তাদের কমিটিতে স্থান না দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের মনমতো কিছু লোক যাদের বিএনপি করার কোনো ইতিহাসই নেই তাদের কেন স্থান দেয়া হয়েছে। সে প্রতিবাদই বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা বারবার করে আসছে। তাদের বাদ দেয়ার কোনো কারণই আজ পর্যন্ত জানানো হয়নি। উল্টো সহসভাপতি পদে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারটিও নেতাকর্মীরা বলছেন।