শুভ জন্মদিন কবি ফকির ইলিয়াস

fb_img_1482914284357আজ ২৮ ডিসেম্বর বুধবার এই সময়ের বিশিষ্ট কবি প্রাবন্ধিক, গল্পকার, গ্রন্থসমালোচক, সাংবাদিক ফকির ইলিয়াস এর জন্মদিন। ১৯৬২ সালের এই দিনে তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রবাসে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি- লালন ও চর্চায় তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা চৌদ্দটি। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-`অবরুদ্ধ বসন্তের কোরাস`, `বৃত্তের ব্যবচ্ছেদ`, `গুহার দরিয়া থেকে ভাসে সূর্যমেঘ`, `ছায়াদীর্ঘ সমুদ্রের গ্রাম`, `গৃহীত গ্রাফগদ্য`, `অনির্বাচিত কবিতা`। এছাড়াও `কবিতার বিভাসূত্র` (প্রবন্ধ সংকলন), `চৈতন্যের চাষকথা` (গল্প সংকলন), `অনন্ত আত্মার গান` (গীতি সংকলন) এর জন্য তিনি নন্দিত হয়েছেন পাঠক মহলে।
২০১৬ সালে বেরিয়েছে তার সর্বশেষ প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সাহিত্যের শিল্পঋণ’। আসছে বইমেলা-২০১৭ তে তার তিনটি গ্রন্থ প্রকাশের কথা রয়েছে।

তার লেখা নিয়মিত ছাপা হচ্ছে ঢাকা ,কলকাতা, লন্ডন, নিউইয়র্ক, কানাডা, সুইডেন, ইতালী, অষ্ট্রেলিয়া, জাপানসহ দেশে-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, ম্যাগাজিন, সাহিত্যপত্রে। ওয়েব, ব্লগ, ই নিউজ গ্রুপেও তিনি লিখছেন নিয়মিত। সাহিত্য কর্মের জন্য তিনি `ফোবানা সাহিত্য পুরস্কার` , `ঠিকানা শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পুরস্কার` পেয়েছেন। তিনি দ্যা একাডেমি অব আমেরিকান পোয়েটস, দ্যা এ্যমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিষ্টস, আমেরিকান ইমেজ প্রেস- এর সদস্য। সহধর্মিনী কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি ও দু`কন্যা নাহিয়ান ইলিয়াস ও নাশরাত ইলিয়াসকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন নিউইয়র্কে।

মাসিক বাসিয়া ও বাসিয়া টুয়েন্টি ফোর ডটকমের পক্ষ থেকে কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে পাঠকদের জন্য কবির একগুচ্ছ কবিতাঃ

দ্বিধার প্রহর
—————————————————–
কাহিনিগুলো দীর্ঘ হবে না জেনেও বলতে শুরু করি। এর আগে
পশলা বৃষ্টি ধুয়ে নিয়ে গ্যাছে পদছাপ। তাই যারা অতিক্রম করে
গিয়েছিল কালের গলুই, তাদের কোনো বাহুচিহ্ন ধরে রাখা যায়নি।
এবং শুরুর অন্তিমে যারা লুকিয়ে রেখেছিল কয়েকটি লালগোলাপ,
তাদের নামের তালিকা থেকেও ঝরেছে অক্ষর, ফলে নামগুলো নিয়ে
বেড়েছে সন্দেহ আর দ্বিধার প্রহর ।
অস্পষ্ট জলছাপ আর ধূসর পাতার অবয়ব পড়ে বর্ষাও লিখতে
শিখে আষাঢ়ের প্রথম পয়ার। সে কাহিনী মানুষ বোঝে না। ঢেউ
গোনতে জানে যে মাঝি , কেবল সে ই – পাথারসমগ্র বুকে নিয়ে
তাকায় আকাশের দিকে, আরেকটা তুফান শেষ হলে গাঙে ভাসাবে
নৌকা, অসমাপ্ত শ্লোকের রঙিন পাল।
চাঁদনগর
———————————————-
টেনে যাচ্ছি আর ক্রমশ’ই দীর্ঘ হচ্ছে সুতোসন্ধ্যা
পিয়ানোটাতে বসেছে যে পতঙ্গ, সে ও বার বার
গেয়ে যাচ্ছে বেদনার গান
সুরঘোরে আমিও ডুবে যাচ্ছি মদের মধ্যমায়।
বারিবৈষম্য জেনে এই দিগন্তে বৃষ্টিপাত থেমে
যাবার পর, আকাশও থামিয়ে দিয়েছে ছায়ার
পরিমাণ। তাই যে সব প্রেমিক-প্রেমিকারা
ভেজার আগুন নিয়ে খেলতে চেয়েছিল,
তারাও সংক্ষিপ্ত করেছে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা।
আঙুলের অন্তরায় চাঁদনগরের রূপসীরাতগুলো
কখন নেমে আসবে-
সেই প্রতীক্ষায় আমি যখন পার করছি প্রহর,
তখনই হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি
কাঁটা’টা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই
ছেঁড়াসুতোর উন্মীলন তাকিয়ে আছে তোমার
দুটি চোখকে আবারও চিনবে বলে…………..
 

এইম ইন লাইফ
——————————————-
হাজিরা না দিলে নাম মুছে যায়। দস্তখতের দুয়ারে
বেড়িবাঁধ হয়ে পড়ে থাকে ফাইলের দাগ। লাল
কালি আর রক্তের পার্থক্য নির্ণয়ে  শিশুরা খেলে
জলডুবি খেলা।
পাখিরা পঙ্গুত্ব বরণ করে ডাল থেকে ছিটকে
মাটিতে পড়ে। কিছু কিছু শিকারী,  পঙ্গু পাখি
শিকারেও কসুর করে না। কুড়িয়ে পাওয়া গুলির
খোসা থেকে নতুন বুলেট তৈরি করে নব্য
অস্ত্র ব্যবসায়ী।
হত্যাযজ্ঞ চলে, ঘাতক বদল হয়
শোষণ চলে,  শোষক বদল হয়
হামাগুড়ি চলে, হাঁটু বদল হয়
মৃত সাপের ফণায় অস্তগামী হতে থাকে
আমাদের এইম ইন লাইফ.।

Developed by: