‘গত বছর রোজার পর আমরা সরকারের নির্দেশ মতো অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। ঘর ভাড়া, গ্যাস ও কারেন্ট বিল, শিক্ষক, কর্মচারীদের বেতন- এসব কুলিয়ে উঠতে না পাড়ার কারণে ২০২১ সালে এসে আমরা স্কুলটা বন্ধ করতে বাধ্য হলাম,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং কলেজ ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে, সারাদেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। সেখানে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে আসছিল। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্কুল যেমন বন্ধ হয়েছে তেমনি নতুন করে স্কুল খুলতে শিক্ষকদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জ।
ঢাকার পপুলার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক আমেনা বেগম তামান্না বলছেন, স্বল্পসংখ্যাক শিক্ষক নিয়ে শুরু করলেও এখন স্কুলে শিশুদের ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ।
‘আমার স্কুলের ৫০ থেকে ৬০ ভাগ স্টুডেন্ট বিভিন্ন কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। আমি নিজে ৩০টা পরিবারে গিয়েছি স্কুলে আসার জন্য তাদের অভিভাবকদের রাজি করাতে। কিন্তু তারা নিম্নবিত্ত পরিবারের। ফলে কাজ থেকে তারা আর স্কুলে ফিরবে না। এখন স্টুডেন্ট যদি না আসে তাহলে আমি স্কুল চালাবো কীভাবে!’ বলেন তামান্না।
বাংলাদেশে সব কিন্ডারগার্টেন ব্যক্তিমালিকানাধীন। তাদের খরচ চলে মূলত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় এখন অনেক স্কুলের শিক্ষক অন্য পেশা গ্রহণ করেছেন।
ঢাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তকবির আহমেদ বলছেন তার স্কুলে পাঠদান করানোর মত শিক্ষক এখন আর নেই। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং কলেজ ঐক্য পরিষদ দাবি করছে ১০ হাজারের মত স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, রবিবার বোঝা যাবে কয়টা স্কুলের পাঠদান শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘যেসব স্কুল এখনো চালু আছে তাদের ঘুরে দাঁড়াতে হলে সরকারি সহযোগিতা দরকার। কিন্তু আমরা সরকারের বিভিন্ন স্তরে ঘুরে কোনো আশ্বাস পাইনি। আগামীকালই বোঝা যাবে কয়টা স্কুলের তালা খোলে আরা কয়টা স্কুলের তালা বন্ধ থাকে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং গবেষণা ইন্সটিউটের অধ্যাপক কাজী আফরোজ জাহান আরা বলছেন, এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই।
‘অভিভাবকদের এমনভাবে বোঝাতে হবে যে, তাদের শিশুরা কাজ করে সাময়িকভাবে হয়তো টাকা পাচ্ছে। কিন্তু সেটা ভবিষ্যতে তাদের পরিবার এবং সমাজের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। ঝরে পড়া এসব শিশুরা স্কুলে ফিরে আসলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে চালানো যাবে।’
সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এখন এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুল নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই।