বিভাগ: ইতিহাস ঐতিহ্য

সিলেটের ‘নাগা মরিচের’ ঝাল বিদেশে!

সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত নাগা মরিচ এখন রফতানি হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে। প্রতিবছর বিশেষ জাতের এই মরিচ রফতানি করে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা আহরিত হচ্ছে। ঝাল ও সুগন্ধের জন্য ২০০৭ সালে এ মরিচটি গিনেজ বুকে নাম লিখিয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, চাষীদের মাঝে সচেতনাবৃদ্ধি ও পরিকল্পিত চাষাবাদ হলে এ খাত থেকে বছরে শতকোটি টাকার উপরে আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

‘নাগা মরিচ’ মরিচের বিশেষ একটি প্রজাতি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি ‘কামরাঙা মরিচ’ ও ‘বোম্বাই মরিচ’ নামেও পরিচিত। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া ভারত ও শ্রীলংকায় প্রচুর পরিমাণে ‘নাগা মরিচ’ চাষ হয়ে থাকে। ভারতে এ মরিচ ‘ভূত জোলেকিয়া মরিচ’ ও শ্রীলংকায় ‘নাই মিরিচ’ নামে পরিচিত।

সিলেট তথা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে ‘নাগা মরিচ’ রফতানি শুরু হয় ২০১১ সাল থেকে। ঝাল ও গন্ধের জন্য প্রবাসী বাঙালি ছাড়াও যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এটি উন্নতমানের মসলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বিভাগের মধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোলাপগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল এবং হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে ‘নাগা মরিচ’ চাষ হয়ে থাকে।

সিলেটের চাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়- লেবু, আনারস ও কমলা বাগানেই ‘নাগা মরিচ’ চাষ হয়ে থাকে। বাগানের অন্য গাছের ফাঁকে ফাঁকে মরিচের চারা লাগানো হয়। ফলে উৎপাদন ও পরিচর্যা খরচ কম পড়ে। ‘নাগা মরিচ’ চাষীরা জানান- প্রতি একর মরিচ চাষে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর মরিচ বিক্রি করে আয় হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাগান মালিকদের কাছ থেকে প্রতিশ’ মরিচ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনে আনেন। পরে তারা ভালো আকার ও রঙের মরিচগুলো রফতানির জন্য আলাদা করেন। অপেক্ষাকৃত ছোটগুলো বিক্রি করা হয় স্থানীয় বাজারে।
সিলেটের গৃহিণীরা বিভিন্ন রকম সবজীর সাথে ‘নাগা মরিচ’ রান্না করেন। এছাড়া নাগা মরিচের নানা পদের আচারও তৈরি করা হয়।

দেশের বাইরে নাগা মরিচের সবচেয়ে বেশি চাহিদা যুক্তরাজ্যে। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার প্রতিটি সুপারশপে এ মরিচ পাওয়া যায়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, সৌদি আরব, দুবাই ও কাতারসহ বিভিন্ন দেশে নাগা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নাগা মরিচ সবজী হিসেবে বিদেশে রফতানি হয়ে থাকে। তাই প্রতিবছর কত টাকার মরিচ রফতানি হয় তার সঠিক হিসেবে নেই। তবে রফতানিকারকদের ধারণা প্রতিবছর সিলেট থেকে ২০-৩০ কোটি টাকার নাগা মরিচ রফতানি হয়ে থাকে।

জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ রফতানিকারক গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমদ জানান- যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে সিলেটের নাগা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী রফতানি করতে না পারায় বিদেশে এ ফলটির বাজার দখল করে নিচ্ছে ভারত ও শ্রীলংকা। ‘ক্যাংক্রার্স’ জটিলতার কারণে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নাগা মরিচ রফতানি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। সরকার উদ্যোগী হলে নাগা মরিচ রফতানি করে বছরে শতকোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

যেখানে বিয়ের আগেই মা হতে হয়!

ডেস্ক রিপোর্ট : যৌন সম্পর্কের বৈধতা দিয়ে থাকে বিবাহ। এটা সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি। তবে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় টোটো সমাজে। সেখানে বিয়ের আগেই নারীকে গর্ববতী হতে হয়। টোটো ভারতের এক অতি ক্ষুদ্র জন গোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর প্রান্তে ভুটান সীমান্তে তোর্ষা নদীর ধারে টোটোপাড়া গ্রামে এঁদের বাস।

সে অঞ্চলে মেয়েদের বিয়ের আগে মা হওয়াটা কিন্তু বাধ্যতামূলক। সেখানে মাতৃত্বই দেয় পছন্দের সেই পুরুষকে বিয়ের অধিকার। এটাই রেওয়াজ টোটো সমাজে। সেখানে সবমিলিয়ে ১ হাজার ৫৮৪ টোটোর বাস। এখনো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন এই উপজাতিরা।

টোটো সমাজের পুরুষদের কোনো মেয়েকে বেছে নেয়ার অধিকার রয়েছে। ছেলেটির পছন্দ হলে প্রথমে ছেলের বাবা মেয়ের বাবার বাড়িতে দু’হাঁড়ি ‘ইউ’ ও একটা লাল মুরগি নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। একে বলে ‘বাগদান’ পর্ব। আগে সাত-আট বছর হলেই বাগদান পর্ব সেরে ফেলা হতো। তারপর কয়েকবছর পর মেয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে আসতো এবং স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতো। মেয়ে গর্ভবতী হলেই বিয়ের পর্ব সারা হতো। অনেকসময় বাগদানের পরেই মেয়ে ছেলের বাবার সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি চলে আসে। নিজেদের পছন্দমতো বিয়ের ব্যাপারটা টোটো সমাজে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত আছে। এই ধরনের বিয়েকে বলা হয় ‘নিয়াংকোষা’প্রথা।

টোটোদের মধ্যে পণপ্রথা নেই। বিবাহ বিচ্ছেদ বা বিধবা বিবাহ বরাবরই স্বীকৃত। তবে এইসব বিষয়ে সমাজ কতগুলি নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। কোনো অবস্থাতেই টোটো সমাজ ব্যাভিচারিতা সহ্য করে না। এক্ষেত্রে সমাজপতিদের শাসন বড় কড়া। তবে শিক্ষার উন্নতি হওয়ার ফলে আগের অনেক নিয়মই এখন শিথিল হয়েছে।

আবার বাজবে সিলেটের ঐতিহ্যের সেই ঘন্টা

‘আলী আমজাদের ঘড়ি, জিতু মিয়ার বাড়ি, চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি, বঙ্কু বাবুর দাঁড়ি- এই চারে সিলেটীদের বেটাগিরি’। সিলেটের ঐতিহ্য বোঝাতে এমন প্রবাদের প্রচলন ছিল অতীতে। ঐতিহ্যের এই চার স্মারকের মধ্যে বঙ্কু বাবু বেঁচে নেই। জিতু মিয়ার বাড়ি ও চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি জানান দিয়ে যাচ্ছে সিলেটের প্রাচীণ ঐতিহ্যকে। আর ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের অবহেলার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্তব্ধ কাঁটার আলী আমজাদের ঘড়ি। দীর্ঘদিন থেকে অচল থাকা ঘড়িটি আবারো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরশন (সিসিক)। ঘড়ি মেরামত করতে শিগগিরই দরপত্র আহ্বানের কথা রয়েছে। সিসিক’র এই সিদ্ধান্তে সিলেট নগরবাসী আবারো আশায় বুক বাঁধছেন ঐতিহ্যের স্মারক এই ঘড়ির ঘন্টার শব্দ শুনতে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়- ১৮৭৪ সালে তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থ ব্র“ক সিলেট সফরে আসেন। তার সম্মানে সিলেট বিভাগের (তৎকালীন সিলেট জেলা) মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার পৃথিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। সিলেট শহরের প্রবেশদ্বার সুরমা নদীর উত্তর প্রান্তে কিনব্রিজের পাশে ঘড়িঘরটি নির্মাণ করা হয়। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির ঘড়ি ঘরে স্থাপন করা হয় আড়াই ফুট ডায়ামিটার ও দুই ফুট লম্বা কাঁটার ঘড়ি। এক সময় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সিলেটে আসা লোকজন এই ঘড়ির সময় দেখে তাদের কার্যসম্পাদন করতেন। ঘড়ির ঘন্টার শব্দ অনেক দূর থেকেও শোনা যেত। নবাব আলী আহমদ খান নির্মিত ঘড়িটি তার ছেলে আলী আমজাদের নামেই স্থান করে নেয় ইতিহাসে। সিলেটসহ সারাদেশে দৃষ্টিনন্দন ঘড়িটি আলী আমজাদের ঘড়ি হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঘড়িটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর দীর্ঘদিন ঘড়িঘর পড়ে থাকে অযত্মে-অবহেলায়। আশির দশকে প্রবাসীদের অর্থায়নে ঘড়িটি সংস্কার করা হয়। এরপর ঘড়িটি কয়েক বছর সচল থাকলেও পরে আবারও বিকল হয়ে পড়ে। ওই সময় ঢাকার একটি কোম্পানি ঘড়িটি মেরামত করলেও বেশিদিন ঠেকেনি। এরপর জাপানি কোম্পানি সিজান ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘড়িটি আবার চালু করে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবারও বন্ধ হয়ে যায় ঘড়ির কাঁটা। ২০১০ সালে ঘড়িটি সচল করে সিটি করপোরেশন। ছয় মাস যেতে না যেতেই এটি বিকল হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০১১ সালে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ঐতিহ্যবাহী ঘড়িটি ফের মেরামত করা হয়। কিন্তু ৬ মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় ঘড়ির কাঁটা ঘোরা।

এ অবস্থায় সিসিক আবারো ঘড়িটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি করপোরেশনের সাধারণ সভায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘড়িটি সচল করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিসিক’র এই সিদ্ধান্তের পর থেকে নগরবাসী আবারো আলী আমজাদের ঘড়ির ঢং ঢং ঘন্টার শব্দ শোনার প্রতীক্ষায় রয়েছেন।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ঘড়িটি অনেক পুরাতন। নতুন প্রযুক্তিতেও ঘড়িটি মেরামত করে বেশিদিন সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘড়িটি সচল রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

দেবের একুশ দেবের একুশ

নিজের ফেইসবুক পেইজে এমনটাই লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের সুপারস্টার দেব, সঙ্গে পোস্ট করেছেন একটি ছবিও। ছবিতে তিনি আছেন, প্রসেনজিৎ আছেন আর আছে শহীদ মিনার।

একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন এই ওপার বাংলার এই তারকারা। আর তখনই তোলা ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তদের জন্য পোস্ট করেছেন দেব।

বাংলাদেশ সরকার আমন্ত্রণে আন্তজর্াতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এখন ঢাকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সফরসঙ্গী হয়ে এক ঝাঁক তারকার সঙ্গে এসেছেন দেব ওরফে দীপক অধিকারীও। টালিগঞ্জের জনপ্রিয় এই নায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদও বটে।

ঢাকায় পা দিয়েই দেব ফেইসবুকে লেখেন, “সবে বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়েছি এবং কি উষ্ণ অভ্যর্থনা! ঐক্য, ভালোবাসা এবং অতিথিপরায়নতার সর্বোচ্চ রূপ দেখছি। কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করছি।”

সিলাম

2-06হজরত শাহজালাল ইয়ামানি (র.) ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়া যাত্রাপথে বর্মা দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হন। বর্মা ছিল গৌড়গোবিন্দের একটি সাধনকৃত দানবের নাম। বর্মা দানব গৌড়গোবিন্দের হুকুমে শাহজালাল (র.) এর যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টি করে।  সে বিশাল বিশাল আকৃতির শীলাখণ্ড এমনভাবে পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে তা ডিঙ্গিয়ে তাদেরকে আসতে হচ্ছিল। এক সময় বর্মা দানবের আক্রমণের সম্মুখীন হলেন ওলিকুলের শিরোমণি সুফি দরবেশ সম্রাট হজরত শাহজালাল ইয়ামানি (র.) এর পবিত্র মুখ থেকে উচ্চারিত হয় ‘শীল লাম’ যার অর্থ দাঁড়ায় পাথর নিচের দিকে যাও বা নামো। সেই ‘শীল লাম’ শব্দ থেকে ‘শীলাম’ নামের উৎপত্তি যা আজ মানুষের মুখে মুখে বিকৃত হতে হতে ‘সিলাম’ নামে রূপদান করে। প্রাচীন কোনও দলিলপত্র বাইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় ‘শ’ দ্বারা (শীলাম) সিলাম লিখিত হত। কারণ শীল থেকে সিলাম নামের রূপ ধারণ করেছে। সিলাম এর শীলা দেশের সর্বস্থানে পরিচিত ছিল।

জালালপুর

2-08সাধক পুরুষ হজরত শাহজালাল (র.) এর নামানুসারেই জালালপুরের নামকরণ করা হয়। এক সময় এ জালালপুর হিন্দুপ্রধান ছিল। শাহজালাল (র.) এর পদধুলির স্পর্শে জালালপুর মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে। শাহজালালের সিলেট বিজয়ের সময় তাঁর শেষ ছাউনি জালালপুরে ছিল। এই স্থানের নাম মোকামদোয়ার বা বড় মোকাম। এখানে তাঁর সঙ্গী শাহ কামাল ওরফে শাহ পহলোয়ানের মাজার আছে। জালালপুরে হজরত শাহজালাল (র.) একদিন একরাত যাপন করেন। এখানে তাঁর হাতের লাঠি বা যষ্টি মাটিতে পুঁতা অবস্থায় গাছে পরিণত হয় যা আশার গাছ নামে সর্বজন পরিচিত।

কিনব্রিজ

2-13সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সুরমা নদীর ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কিনব্রিজ। উত্তর ও দণি সুরমাকে এক বৃত্তে গাঁথার ল্য নিয়ে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় এই ব্রিজটি। তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামানুসারে এই ব্রিজটির নামকরণ করা হয় কিনব্রিজ। ১১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থ ব্রিজটির নির্মাণে ব্যয় হয় তৎকালীন ৫৬ ল টাকা। সুরমা নদীর উত্তরপারে ব্রিজের পশ্চিমে একটি বৃহত্তর সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। যা চাঁদনি ঘাটের সিঁড়ি নামে খ্যাত। লর্ড নর্থকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এই সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এরই পাশে জমিদার আলী আমজদ খানের নির্মিত একটি বিরাট ঘড়ি আজও দর্শনার্থীদের অবাক করে দেয়। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীদের সহজেই মন কেড়ে নেয় কিনব্রিজ, চাঁদনিঘাটের সিঁড়ি ও আলী আমজদ খানের অদ্ভুত সুন্দর বিরাট ঘড়িটি।

বিরাহিমপুর খানবাড়ি

2-15দণি সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের বিরাহিমপুর খানবাড়ির প্রথম মালিক
আবিদ খান ছিলেন এক পাঠান সর্দারের ঊর্ধ্বতন বংশধর। তাঁর একাগ্রচিত্তের ফলে আঠারো শতক থেকে এই বাড়িটির নাম সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে সুনামের সঙ্গে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। আবিদ খান থেকে শুরু করে রিয়ার এডমিরাল এম.এ খান পর্যন্ত এ বাড়ির সুনাম দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়লেও এর ধারাবাহিকতা এখনও বিলীন হয়নি।
গর্ব আর ঐতিহ্যের এই বাড়িটি খান বাহাদুর আসদ্দর আলী প্রায় দুইশ বছর পূর্বে সিলেট সুলতানপুর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে ১০০ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করেছিলেন। এ দর্শনীয় বাড়িতে আছে বিশাল ছায়াঘেরা বৃরাজি, সমৃদ্ধ হাওয়াখানা, বাড়ির মধ্যখানে আবিদ সাগর নামে একটি বিরাট দিঘি, মেহমানখানা, কাছারি আদালত, মূলবাসগৃহ ও ঘোড়াশালা। ওই বাড়িকে কেন্দ্র করেই সবরকম জাঁকজমক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন বাড়ির উত্তরাধিকারীরা।
ব্যতিব্যস্ত জীবনের অধিকারী এই সব জ্ঞানী-গুণীব্যক্তি শেষ বয়স কাটাতে এখানেই ছুটে আসতেন। বর্তমানেও এ বাড়িটি পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।

বৈমানিক মো. আবদুল বাসিত মাহতাব

2-17বৈমানিক মো. আবদুল বাসিত মাহতাব দণি সুরমার বরইকান্দি ইউনিয়নের চান্দাই গ্রামে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা (মরহুম) মো. আবদুল মন্নান। আবদুল বাসিত মাহতাব সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি এ্যারনোটিক্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন এবং পাইলট অফিসার হিসেবে যোগ
দেন। পরবর্তীকালে তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ফাস্ট অফিসার (পাইলট) হিসেবে যোগ দেন। তিনি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ক্যাপটেন হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আয়নায় দক্ষিণ সুরমা ফকির ইলিয়াস

27-7-3আমার একটা অহংকার আছে। তা হলো আমি সিলেটে জন্মেছি। জন্মেছি হজরত
শাহলালাল (র.) এঁর মাটিতে। দক্ষিণ সুরমা এলাকা একসময় সিলেট সদরের অধীন ছিল। সময়ের বিবর্তনে নতুন উপজেলা হয়েছে। সুরমা নদী বিভক্ত করেছে উত্তর সিলেট-দক্ষিণ সিলেট। আর সুরমার দক্ষিণ জনপদেই গড়ে উঠেছে এই উপজেলা।
বলে রাখি, মোহাম্মদ নওয়াব আলী আমার অনুজপ্রতিম। আমরা বেড়ে উঠেছি একই এলাকায়। তাই তার সাহিত্য-সংস্কৃতি ভাবনা ও কর্মযজ্ঞ আমার খুব পরিচিত।
‘দক্ষিণ সুরমার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বিষয়ে একটি বই করতে আগ্রহী- তা আমি জেনেছিলাম মোহাম্মদ নওয়াব আলীর কাছ থেকে কয়েকবছর আগেই।
মোহাম্মদ নওয়াব আলী ‘মাসিক বাসিয়া’ সম্পাদক। বাসিয়া নদী বয়ে গেছে আমার বাড়ীর পূর্ব দিয়েই। আমি যেটুকু লেখালেখি করি তার ঋণ ঐ বাসিয়া নদীর কাছেই।
ঐ বাসিয়া নদীই আমাকে কবি হতে শিখিয়েছে। শত শত বাউল গান লিখতে সাথী হয়েছে।
মোহাম্মদ নওয়াব আলী যে কাজটি করেছেন- তা শিকড়ের সন্ধান। ‘দ্যা রুটস’ এর লেখক এ্যলেক্স হ্যালি’র কথা আমরা জানি। না- শিকড়ের সন্ধান ছাড়া কোনো মানুষই তার আত্মানুসন্ধান করতে পারে না।
৪৮০ পৃষ্টার ‘দক্ষিণ সুরমার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বইটি সম্পাদনা করে এই তরুণ সম্পাদক সেই গুরু দায়িত্বটি পালন করেছেন।27-7-4
মোট ১৫ টি অধ্যায় রয়েছে এই দলিলগ্রন্থটিতে। গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা গঠনের ইতিবৃত্ত, ঐতিহাসিক ও পরিসংখ্যানসহ ভৌগলিক বিবরণ। উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ৩ (২) ধারা বলে ২১ মার্চ, ২০০৫ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গঠিত হয়। সিলেট সদর উপজেলার সতেরোটি ইউনিয়ন থেকে নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে উক্ত উপজেলা গঠিত হয়। পরে নতুন ইউনিয়ন গঠনের প্রজ্ঞাপন অনুসারে কামালবাজার ইউনিয়ন উক্ত উপজেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। ফলে মোল্লারগাঁও, বরইকান্দি, তেতলী, কুচাই, সিলাম, লালাবাজার, জালালপুর, মোগলাবাজার, দাউদপুর ও কামালবাজার এই দশটি ইউনিয়ন নিয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গঠিত। মোগলাবাজার ইউনিয়নের নৈখাই নামক স্থানে উপজেলার সদরদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত উপজেলায় দক্ষিণ সুরমা ও মোগলাবাজার নামে দুটি থানা (পুলিশ স্টেশন) এবং দক্ষিণ সুরমা থানার  অধীনে সিটি কর্পোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে। এই অধ্যায়ে উপজেলার মানচিত্র, প্রশাসনিক ভবনের ছবি, বিভিন্ন পরিসংখ্যান, বিভিন্ন ইউনিয়নের মানচিত্রসহ বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং তিনটি ওয়ার্ডের বিশদ বিবরণ ও তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও নামের তালিকা ও সময়কাল প্রদত্ত হয়েছে। এক কথায়, ইউনিয়নসমূহ ও ওয়ার্ডসহ উপজেলার সম্যক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে দশটি ইউনিয়ন ও তিনটি সিটি ওয়ার্ডের মানচিত্রসহ পূর্ণ পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নওয়ারী প্রদত্ত পরিসংখ্যান ও ২৫, ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ডের পরিসংখ্যানসহ পূর্ণ পরিচিতি পাঠককে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবে।
তৃতীয় অধ্যায়ে উপজেলার ইউনিয়ন ভিত্তিক গ্রাম ও মৌজার তালিকা, নদী, খালবিল, জলমহাল, টিলা, হাটবাজার সমূহ, সিটি ওয়ার্ড সমূহের গ্রামের তালিকা প্রদত্ত হয়েছে। সুরমা, বাসিয়া ও বড়ভাগা- উপজেলার এই তিনটি নদীর উৎপত্তি ও অবস্থান সম্পর্কে এই অধ্যায়ে সুন্দর তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। এই উপজেলার ত্রিশটি বিল ও দশটি জলমহালের তালিকাও উল্লেখিত আছে।
চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক মসজিদ, মন্দির, গির্জার তালিকা, মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকার ভূমিকা ও গণকবর সম্পর্কিত তথ্য।
পঞ্চম অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থানের বর্ণনা রয়েছে। দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। প্রথমে শহিদ বুদ্ধিজীবী ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা একুশজনের তালিকা ও তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য তথা মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, যা মর্মান্তিক ও স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবজনক শাহাদতের স্বাক্ষর বহন করে। এই একুশজনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. আবদুল মুক্তাদিরের নামও রয়েছে।
২৫ মার্চ, ১৯৭১ রাত্রে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে। তিনি দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। অন্যান্য বিশজন শহিদ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করে শাহাদত বরণ করেন। গ্রন্থের লেখক তাঁদের সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ করে গ্রন্থিত করার কারণে গ্রন্থের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অধ্যায়ে ইউনিয়নওয়ারী ও তিন ওয়ার্ডের ২০৭ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রদত্ত হয়েছে। মোল্লারগাঁও ইউনিয়ন ১৫ জন, বরইকান্দি ইউনিয়ন ১৭ জন, তেতলী ইউনিয়নে ১৮ জন, কুচাই ইউনিয়নে ২৭ জন, সিলাম ইউনিয়নে ৫২ জন, মোগলাবাজার ইউনিয়নে ৪১ জন, দাউদপুর ইউনিয়নে ১৬ জন, কামালবাজার ইউনিয়নে ১০ জন ও তিনটি ওয়ার্ডে ১১ জন। এখানে ২০৭জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা গেজেট ও মুক্তিবার্তা নম্বরসহ গ্রন্থিত হয়েছে।
তাছাড়া গ্রন্থিত হয়েছে শিক্ষক, কবি লেখক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য। এ বৃত্তান্তে প্রবীণ থেকে বর্তমান প্রজন্মের পরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্যিকদের নাম রয়েছে। তাছাড়া এই ষষ্ঠ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার সাংবাদিকতা, রাজনীতি ও সমাজসেবা, ক্রীড়া, আইন বিচার প্রশাসন, কৃষি শিল্প বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, উচ্চ পদে কর্মরত, চিকিৎসা ও প্রবাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত পরিচয় গ্রন্থিত হয়েছে।
সপ্তম অধ্যায়ে বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের পরিচয় ও কৃতির বিবরণ রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ।
গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে দক্ষিণ সুরমার একুশটি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিলেট বিভাগীয় সদর দপ্তর, ডিআইজি অফিস, সিলেট শিক্ষাবোর্ড, সিলেট বিসিক শিল্পনগরী, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, দক্ষিণ সুরমা মেট্রোপলিটন থানা, মোগলাবাজার মেট্রোপলিটন থানা, সিলেট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ ইত্যাদি।
নবম অধ্যায়ে রয়েছে দশটি শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দশম অধ্যায়ে পনেরোটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসসহ অবস্থান ও কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বয়ান রয়েছে গ্রন্থটিতে।
গ্রন্থের একাদশ অধ্যায়ে রয়েছে ৩৩টি মাদ্রাসার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ভৌগলিক অবস্থান। ফাজিল মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসার অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী ধর্মীয় ও কার্যকরী শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
দ্বাদশ অধ্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইউনিয়নওয়ারী সংখ্যা, অবস্থান ও পরিচিতি। দক্ষিণ সুরমায় ৮৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯টি রেজিস্টার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২টি রেজিস্টার্ড (কমিউনিটি) প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্তসহ পরিচালনা কমিটির নামধামসহ বিদ্যালয় সমূহের পরিচিতি পাঠক সমীপে তুলে ধরা হয়েছে।
ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ৪টি সংসদ নির্বাচন, একটি উপজেলা নির্বাচন ও ২টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এর বিশদ পরিসংখ্যান ও বিবরণ রয়েছে। সংসদ নির্বাচনগুলো ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত, উপজেলা নির্বাচন ২০০৯ সালে ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০০৩ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কাসহ সকল প্রতিযোগির প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাসহ তালিকা প্রদত্ত হয়েছে।
চতুর্দশ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার ওলি, আউলিয়া, ফকির দরবেশ, হযরত শাহজালালের সফর সঙ্গীদের সচিত্র মাজার পরিচিতি ও অন্যান্য দরবেশদের সচিত্র  মাজার পরিচিতি গ্রন্থিত হয়েছে। এই অধ্যায়ে হযরত শাহজালালের ৩২২জন সঙ্গীর তালিকা রয়েছে এবং দক্ষিণ সুরমায় এরূপ ২২ জন আউলিয়ার মাজার রয়েছে। এই মাজারগুলির প্রতিবেদন ও চিত্র রয়েছে গ্রন্থটিতে। তাছাড়া ওলি আউলিয়া বুজর্গদের তালিকায় আরো ৬৮ জনের নাম ও সচিত্র মাজার রয়েছে।
পঞ্চদশ অধ্যায়ে বিবিধ বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে বেসরকারি বৃত্তি পরীক্ষা সমূহ রেজি. সমাজকল্যাণ সমিতি, বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ব্যাংক ও কমিউনিটি সেন্টারের বিবরণ ও তথ্য সংগ্রহে সহায়তাকারী ও সহায়ক গ্রন্থের বিবরণ।
এই গ্রন্থটি লিখতে কিংবা সম্পাদনা করতে সম্পাদককে যারা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, তাদের নাম এবং সহায়ক গ্রন্থগুলোর তালিকা যুক্ত হয়েছে বইয়ের শেষে।
সুদূর নিউইয়র্কে অনেক মমতায় বইটি আমার কাছে পাঠিয়েছেন সম্পাদক মোহাম্মদ নওয়াব আলী। আমি যখন বইটিতে মনোনিবেশ করেছি, তখনই আমার সামনে ভেসে উঠেছে দক্ষিণ সুরমার পথ-ঘাট, নদী-নালা, ওলী-আউলিয়ার মাজার। আমার কানে বেজে গেছে ফকির শাহ আব্দুল লতিফ কিংবা ফকির আরকুম শাহ এঁর গান।
বলতে পারি, একটি কঠিন কাজ সম্পন্ন করেছেন এই নিষ্ঠাবান সম্পাদক।
বলা দরকার, এই বইটি কারো কারো মতে একটি সম্পূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে। ভুলবশতঃ কিছু তথ্য বাদ পড়তেই পারে। তবে এই বিশাল গ্রন্থটি আগামী দিনের গবেষকদের জন্য একটি মাইলস্টোন হিসেবে বিবেচিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
চাররঙা কালারে চমৎকার প্রচ্ছদ করেছেন কৃতি চিত্রশিল্পী ধ্রুব এষ। প্রকাশক- বাসিয়া প্রকাশনীর পক্ষে মকসুদ আহমদ বাসিত। অঙ্গসজ্জা- মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান ও এম ইসলাম। অলোকচিত্র- মো. রিয়াজউদ্দিন ও আজাদুর রহমান সুমন।
মূল্য রাখা হয়েছে- পাঁচশত টাকা। বিলাতে দশ পাউন্ড।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে- সম্পাদকের দাদা মোহাম্মদ কাজিম, পিতা মো. পীর বকস, মাতা আফলাতুন নেসা, চাচা নূর বকস গেদু মিয়া কে। যারা সম্পাদককে দিয়েছেন শিকড়ের সন্ধান।
অফসেট পেপারে ছাপা গ্রন্থটি যে কোনো পাঠকের মন ও সংগ্রাহকের গ্রন্থালয়কে আলোকিত করবে। এটা দুঃখের কথা, সরকারি পর্যায়েও ইতিহাস-ঐতিহ্য ভিত্তিক গ্রন্থগুলো কিনে নিয়ে সরকারি লাইব্রেরীগুলোকে সমৃদ্ধ করতে অনেক কার্পণ্য করা হয়।
এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। বই মানুষকে ঝলমলে জীবনের সন্ধান দেয়। আমি চাইবো, দক্ষিণ সুরমা এলাকা সহ গোটা বাংলাদেশের চিত্তবান-বিত্তবান মানুষেরা এই বইটি কিনে তাদের প্রিয়জনকে উপহার দেবেন। নিজ সংগ্রহে রাখবেন।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি ও প্রাবন্ধিক

Developed by: