বিভাগ: লেখালেখি

মোহাম্মদ ইকবাল ।। বন্ধুত্ব

বন্ধুত্ব হবে জনে জনে
প্রকাশ্যে কিংবা সংগোপনে।
বন্ধুত্ব হবে লোকালয়ে গহিন বনে।
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে।
বন্ধুত্ব হবে সরবে নীরবে
চিৎকারে বা মৌনতায়।
বন্ধুত্ব হোক জাতিতে জাতিতে
বন্ধুত্ব হোক সত্তায় সত্তায়।
বন্ধুত্ব হবে নিরেট নিঃস্বার্থতার যৌক্তিকতায়।
বন্ধুত্ব হবে প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবার প্রতিশ্রæতি রক্ষায়।
বন্ধুত্ব হবে আত্মায় আত্মায়।
বন্ধুত্বে কাটুক অমানিশার ঘোর অন্ধকার রাত।
ভোরের সূর্য বন্ধুত্বকে জানাক সুপ্রভাত।

খোদেজা মাহবুব আরা ।। ভালোবাসা

আরাধ্য ভালোবাসা জলে নাম লিখার মতো অদৃশ্য
জীবনের ব্যাপ্তি বিলাসে অজেয় প্রাপ্তির শেকল
পরতে পরতে কাঁটাঝোপ ঝাড়
এক রূদ্ধ জীবনের মন ভুলানো আধিপত্যের ইতিহাস।

সময়ের কোল ঘেঁষে পুষ্পিত সৌরভের আকাক্সিক্ষত স্বর্ণালি প্রভাত
এক উম্মাদ ঘোরে মশগুল যন্ত্রণার অশ্রæর কাব্য।

ভালোবাসা এক মদির জ্যোৎস্নায় অধীর আপন
শ্রান্ত গোধূলিবেলার প্রশান্তির গুঞ্জন।

বিষণœতার গৃহে এক মায়াময় শীতল অনুভবের প্রান্তর
হৃদয় আড়াল করে রাখে একান্ত ভালোবাসার পূর্ণিমা
আর সুরে গায় অন্তর গহিনের প্রচ্ছন্ন এক বুক ভালোবাসা।

শাহ্ মকসুদ আহমদ ।। লোক গীতি

তোমার কাছে চিরঋণী আমরা দেশবাসী
আজ তুমি নাইরে মুজিব আমরা তোমায় ভালোবাসি।

যদি মুজিব না দিত ভাষণ
বাংলার মানুষ যুদ্ধে কি আর জয় করত তখন
পাকিস্তানি করত হরণ, থাকতাম উর্দুভাষী।

যখন বাংলার বুকে পাকিস্তানি গুলি চালায়
বাংলাদেশে তখন রক্তের বন্যা বয়ে যায়
মা বোনেরা ইজ্জত হারায়, দেশকে নিলো শোষী।

জাতি সেদিন মেনেছিল তোমার উপদেশ
নয় মাস যুদ্ধ করে স্বাধীন হইল বাংলাদেশ
ধন্যবাদ তোমাকে অশেষ, তোমায় চিনে বিশ্ববাসী।

আয়শা মুমিন ।। শুদ্ধ প্রেমের ঋণ

এখন আমার ভীষণ প্রিয় শ্যাওলা পড়া দেয়াল
আর তোমার হীনমন্যতা, স্বচ্চ বেখেয়াল।
এক টুকরো রোদের ফাঁকে হালকা মেঘের ঝুম
বুকের ভেতর শোকের আওয়াজ দুম তানা দুম।
এখন আমার ভীষণ প্রিয় হৃদয় পোড়ার ঘ্রাণ
ব্যাক্টেরিয়ার আবাস ভূমে একের অধিক স্নান।
লাশকাঁটা ঘর, ভয় অথবা ডোমের লাল চোখ
রোড এক্সিডেন্টে তেতলে যাওয়া অজ্ঞাতজনের মুখ।
এখন আমার ভীষণ প্রিয় গুনে ধরা কাঠ
বুড়িগঙ্গার নোংরা পানি, জীর্ণ পথঘাট।
প্রিয় ভীষণ কাক ডাকা ওই তপ্ত রোদের দিন
তোমার কাছে জমে থাকা শুদ্ধ প্রেমের ঋণ।

এম আর মনজু ।। বর্ষাকাল

আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষাকালে

বৃষ্টি পড়ে তালে

রিনিঝিনি শব্দ করে

ঘরে টিনের চালে।

পুকুর পাড়ে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর

ব্যাঙ ডাকে এই সুরে

ময়ূর নাচে পেখম মেলে

জলা হতে দূরে।

গাছের ডালে ভেঁজা পাখি

কাঁপছে থরোথরো

চুপটি করে বসে থাকে

ভয়ে জড়োসড়ো।

নদী বিলে পানি থইথই

নৌকা বাঁধা ঘাটে

সওদাগরের পশরা নিয়ে

রওনা দেবে হাটে।

এমন দিনে ঘরের বাহির

চায়না যেতে মন

ঘুমের পরি ঘুম দিয়ে যায়

যখন আর তখন।

নীপা চৌধুরী ।। রক্তে ভেজা বুক

রক্তে ভিজে গেছে বাংলার বুক

সুনামি  প্রবল প্রবাহিত তার ধারা

সাগর-নদী দিক-বিদিক হলো দিশেহারা

শোকে কাতর জনপদ সংসারী মুখ

বিদায় েেকন এই সংবর্ধাহীন বিদায়

এমন স্বাধীন বজ্রকণ্ঠের এ করুণ বিদায়

স্থানচ্যুত অস্থির শকুন ঠোঁট কুরে কুরে খায়

বিরহ ভূমির স্থুল-দেহীরা বিহ্বল কথায়

বিদ্রোহ বুলেট ছিন্ন করে তর্জনীর জীবন

শেকড় উপরে ফেলার একটা মরণপণ আয়োজন

উনুন ছেড়ে গাঁয়ের বধূ করে অনশন

অভিমানে হয় আয়ূশূন্য সবুজ উদ্যান বন

বিনিদ্র কবর কাঁদে শোকাহত বাংলায়

অজপাড়াগাঁয়ে যুবা বৃদ্ধের চোখ আলো হারায়

সেদিন হায়েনার অট্টহাসি করে জ্বালাতন

বারুদ আগুন খেলায়

গভীর শোক ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে তীব্রতায়

সমূহ সম্ভবনাময় নগরী স্ব ভূমির মায়ায়।

সোহেল মল্লিক ।। মানুষ নামতে পারে নিচে, কতটা নিচে

মানুষ নামতে পারে নিচে, কতটা নিচে

ততটা নিচে, যতটা নিচে অন্ধকার থাকে…

ঘুটঘুটে কালো রাতের মতো, নির্জলা মিথ্যার মতো,

স্বার্থপরতার মতো, অমঙ্গলের মতো, চৈতন্যহীনতার মতো,

কপটতার মতো, নির্বুদ্ধিতার মতো, দুর্ভাগ্যের মতো,

নিষ্ঠুরতার মতো, মলমূত্র বিষ্ঠার মতো, কুৎসিত নোংরার মতো,

ড্রাকুলার দাঁতের মতো।

মানুষ নামতে পারে নিচে, কতটা নিচে

ততটা নিচে, যতটা নিচে বর্বরতা থাকে…

হিং¯্র নখের মতো, বীভৎস হত্যার মতো,

পাশবিক উল্লাসের মতো, গণধর্ষণের মতো,

ড্রিল মেশিন দিয়ে শরীর ছিদ্র করার মতো,

পশুর ন্যায় পিটিয়ে হত্যা করার মতো,

হাবিয়া দোজখের মতো।

মানুষ নামতে পারে নিচে, কতটা নিচে

ততটা নিচে, যতটা নিচে অসভ্যতা থাকে…

বিত্ত-বৈভবের মতো, ভোগবিলাসের মতো,

ব্যাংক লুটেরার মতো, জুয়া খেলার মতো,

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মতো,

ঘুষ-দুর্নীতির মতো।

মানুষ উঠতে পারে উপরে, কতটা উপরে

ততটা উপরে, যতটা উপরে…

সত্য থাকে, সত্য থাকে, সত্য থাকে।

শাহিদা হক শাপলা ।। পড়শি

আমি তোমার জন্য বসে থাকি
পলে পলে জমে থাকি
খুলে রাখি আরশি,
ছাদের উপর কোন্ মায়া, পড়শি?

আমি তোমাতেই রাখি নষ্ট সময়
তোমাতেই বাঁচি-মরি,
তোমারই মায়া খুঁজে খুঁজে
একলা আকাশ ধরি।

আমার সময় হারিয়েছে নিখোঁজ
আমি তোমাতেই তবু বিভোর,
তোমার দুইপাশ চারপাশ সবুজ হয়
আমার সবই ধূসর।

তবুও আমার একটাই ছাদ
গোটা আকাশের আরশি,
ছাদের উপর কোন্ মায়া পড়শি?

মৃণাল কান্তি দাস ।। মাস্কমঙ্গল কাব্য

ধরলে পুলিশ, পড়ব পায়ে, চাইব না-হয় মাপ

বলব হে স্যার, করুন ক্ষমা, ডাকব না-হয় বাপ!

থাকব না-হয় দুকান ধরে, ব্যাঙের মতো ঝুঁকে

কিন্তু আমি পরব না মাস্ক, আমার সোনা মুখে!

ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইলকোর্টে ধরলে চেপে কলার

বলব আমার হাজার খানেক, কথা ছিল বলার।

মুখোশ পরে বলব কথা, এ কোন আজব আইন

মুখোশ আমি পরব না স্যার, করলে করুন ফাইন!

স্বাধীন দেশের হালুম আমি, ঢোকান যদি জেলে

উকিল ধরে ছাড়িয়ে নেবে আমার বোনের ছেলে।

থাকব না-হয় জেলেই ক’দিন, খাব না-হয় রুটি

কিন্তু আমি ঢাকব না ভাই, আমার রাঙা ঠুঁটি।

কেমনে এত মারল বাঙাল? করেন যদি আস্ক

বলবে কোভিড ‘এদের মরার প্রধান কারণ মাস্ক।’

হিসেব নিকেশ করে…

বলব, কোথায় কোভিড না ছাই, মরছি সর্দিজ্বরে।

এহিয়া সামি ।। ভন্ড নেতার দল

রিলিফের টাকা খায়
ওরা বুঝি নেতা
লম্বা লম্বা ভাষণ দিয়ে
ঘুরে বেড়ায় যেথা সেথা।

কেউ-বা চেয়ারম্যান, কেউ-বা মেম্বার
কেউ-বা আবার সংসদে যায়
লম্বা লম্বা বুলি ওরা
সংসদে গিয়ে উড়ায়।

আসলে ওরা সবাই স্বার্থপর
ভন্ড নেতার দল
খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ
কেমনে করবে ছল।

মুখোশ পড়ে ওরা থাকে
ঝুপ বুঝে কুপ মারে
এমনি করে ওরা তাদের
আখের গোজার করে।

Developed by: