১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে জগন্নাথপুর থানার শ্রীরামসী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শহিদ এনামুল হক মনু। সেদিন চোখের সামনেই ঘটে গেল এক বর্বরোচিত তাণ্ডবলীলা। পাক হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতার শিকার হলেন তাঁর শিক্ষক সহ শ্রীরামসী গ্রামের প্রায় আড়াই শত লোক। তাঁদের প্রাণ বলিদানের ঘটনায় তিনি মুচড়ে পড়েন। প্রতিশোধের শিখায় জ্বলে ওঠে তাঁর বিদ্রোহী অন্তর। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং আয়ত্ত করতে থাকেন এবং এক সময় ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রতিপক্ষের ওপর। ৯ মাসের যুদ্ধের শেষের দিকে তিনি সুযোগসুবিধা মতো বাড়ি ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল বৃদ্ধ দাদি মাকে একনজর দেখে যাবেন। কিন্তু বিদায় বেলায় বাধ সাধলেন মা-বাবা, ভাইবোন সকলে। দেশমাতৃকার টানে যিনি মাতাল, তাঁকে কি ধাবিয়ে রাখা যায়। তিনি চলে গেলেন সকলের চোখে ধূলি দিয়ে। শহিদ এনাম একজন মাত্র সঙ্গী নিয়ে হানাদারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং শত্র“দের নিশ্চিহ্ন করতে থাকেন। যখন বিজয়ীর বেশে ফিরে এলেন তখন তিনি শত্র“দের কাছে ধরা পড়ে যান। তারা এনামকে নিয়ে আসে সিলেট সার্কিট হাউসে। সেখানে ৪/৫ দিন বর্বোরচিত নির্যাতনের পর শত্র“ বাহিনীর পাষণ্ড জল্লাদদের এস.এল.আর এর গুলিতে তার প্রতিটি অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যান। হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন তিনি।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বর্তমান কামালবাজার ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে শহিদ এনাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. ওয়ারিছ আলী ও মাতা মোছা. আলফিনা বেগম। শহিদ এনামুল হক মনুর মুক্তিবার্তা নং ০৫০১০১০১৪১।