দক্ষিণ সুরমার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সিলাম পদ্মলোচন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়

P. L Pic১৯৩০ থেকে ২০১৪ খ্রীস্টাব্দ। সুদীর্ঘ ৮৪ বছর হাঁটি হাঁটি পা পা করে দক্ষিণ সুরমার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সিলাম পিএল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় সুনামের সাথে এলাকার শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলছে। এই বিদ্যালয় থেকে সফলতার সাথে শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করে দেশে ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন অসংখ্য কৃর্তিমানরা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে এই বিদ্যালয়ে। এতে করে শিক্ষার মান যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আরো মনোযোগী হয়ে উঠছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে সেকশন সংখ্যা বাড়ানো সহ আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে ২০১৪ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষায় ৯৮.১৭ ভাগ ফলাফল অর্জিত হয়েছে এবং ২০১৩ শিক্ষা বর্ষে জেএসসি’তে ৯৭.৯২ ভাগ ফলাফল অর্জিত হয়েছে। বিদ্যালয়ে সৃজনশীল ও উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম এবং শিক্ষার মান বিবেচনায় ২০১৪ শিক্ষাবর্ষে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় প্রথমবারের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে সিলাম পিএল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় স্বীকৃতি পেয়েছে।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব শ্রী প্রসন্ন কুমার চক্রবর্তী ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে সিলাম পিএল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পাঠদান দিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়। তখনকার সময় প্রধান শিক্ষক ছিলেন প্রফুল্ল কুমার সেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভূমিদাতা ছিলেন প্রসন্ন কুমার চক্রবতী এবং পরবর্তীতে বিদ্যালয় সম্প্রসারণ করা হলে তখন ভূমি দান করেছেন আব্দুল বাছিত চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম ও সিলাম ইউনিয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতি। সব মিলিয়ে বিদ্যালয়টির বর্তমান ভূমির পরিমাণ ১.৫১ একর।
বিদ্যালয়ের ৪টি ভবনে মোট ১১টি শ্রেণী কক্ষ, ১টি শিক্ষক মিলনায়তন, ১টি ছাত্রী মিলনায়তন, ১টি বিজ্ঞানাগার ও ১টি লাইব্রেরী রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে ১টি পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণের কাজ দ্রত এগিয়ে চলছে। বিদ্যালয় পরিচালনায় আগ্রহী ভূমিকা পালন করছে নির্বাচিত একটি সুদক্ষ পরিচালনা কমিটি। সিলাম ইউনিয়ন পরিষদের সনামধন্য সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালিকের নেতৃত্বে কমিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল মালিক ছাড়াও যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হচ্ছেন- সচিব, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ লাল রায়, দাতা সদস্য- আব্দুল গাফ্ফার, শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ আতাউর রহমান কোরেশী, মিথুন ভট্টাচার্য্য, মোছাঃ জেবুন্নাহার বেগম, অভিভাবক সদস্য মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মোঃ সাইফুল ইসলামম, সফিকুল ইসলাম, অজয় ধর, মিনারা বেগম, শিক্ষানুরাগী সদস্য মোঃ নুরুল ইসলাম।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ রায়ের দক্ষ দিক নির্দেশনা ও একঝাঁক মেধাবী শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকমন্ডলী হচ্ছেন-প্রধান শিক্ষক দীলিপ লাল রায়, সহকারী প্রধান শিক্ষক সাধন চন্দ্র তালুকদার, সহকারী শিক্ষক কেতকী রঞ্জন, লুৎফুর রহমান, মোঃ শাহ আলী, মোছাঃ জেবুন্নাহার বেগম, গোলাম মোস্তফা, মিথুন ভট্টাচার্য্য, মোঃ জয়নুল আবেদীন, মোছাঃ তাহমিনা বেগম, মোছাঃ লুবনা বেগম, মোঃ মাহবুবুর রহমান, মোঃ হাবিজ মিয়া।
দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। জরুরী ভিত্তিতে একটি দ্বীতল ভবন নির্মাণ প্রয়োজন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের আর্থিক টানাপোড়নে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় অথবা এলাকায় দানশীল ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে এই সমস্যা সহজেই সমাধান হতে পারে। এছাড়াও একটি সমৃদ্ধ বিজ্ঞানাগার, বড় আকারের পাঠাগার এবং খাবার পানির সমস্যা সমাধানে একটি টিউবওয়েল স্থাপনের প্রয়োজন বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ রায়।
॥ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ॥কবি ও সম্পাদক মাসিক চন্দ্রবিন্দু।

Developed by: