ঘাতকদের দ্রুত ফাঁসির দাবি
সিলেট শহরতলীর কুমারগাঁও এলাকায় চোর সাজিয়ে শেখ সামিউল আলম রাজন (১৩) নামের এক শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা এখন সিলেটসহ দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নির্যাতনের ভিডিও চিত্রে যে ব্যক্তিকে নির্মমভাবে রাজনকে মারতে দেখা যায়, সেই নরপিশাচ কামরুল সোমবার রাতে সৌদি আরবে আটক হওয়ায় সিলেটের সর্বস্তরের লোকজন আনন্দিত। তারা যত দ্রুত সম্ভব তাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি দাড় করানোর দাবিতে সোচ্চার। মঙ্গলবার সিলেট- সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজার এলাকাধীন ত্রিমুখী পয়েন্টে রাজনের ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অবিলম্বে সকল আসামীকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। এদিকে, চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যার ঘটনায় দুই প্রত্যক্ষদর্শী আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ মিয়া মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ সাহেদুল করিমের আদালতে হাজির করা হয়। তারা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দী দিয়েছেন।
স্বামীর বিচার চান লিপিঃ
রাজন হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া মুহিদ আলমের স্ত্রী লিপি বেগমও বিচার চেয়েছেন নির্মম এই খুনের ঘটনার। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, খুনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। নির্মম এই হত্যাকান্ডের সাথে তার স্বামী জড়িত থাকলে তিনিও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। গত সোমবার রাতে জালালাবাদ থানা পুলিশ মুহিদের স্ত্রী লিপিকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় লিপি খুনের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেননা বলে উল্লেখ করেন। ওসি আখতার হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে লিপি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।
রিমান্ডে মুহিদের চাঞ্চল্যকর তথ্য
রাজন হত্যাকান্ডের ঘটনায় রিমান্ডে থাকা মুহিদ আলম হত্যার দায় স্বীকার করেছে। রিমান্ডের শুরুতে সে হত্যাকান্ডের সময় ৫ জন মিলে সামিউলকে নির্যাতন করাসহ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, সোমবার আদালতের মাধ্যমে মুহিদকে ৫ দিনের রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে সে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। রিমান্ডে মুহিদ হত্যায় জড়িত ৫ জনের নাম উল্লেখ করেছে। এই ৫ জন হচ্ছে- মুহিদ নিজে, তার ভাই কামরুল ইসলাম, শামীম আহমদ, আলী ও চৌকিদার ময়না। মুহিদ নির্যাতন ও হত্যায় জড়িত থাকা শামীম, আলী ও ময়নার অবস্থান বিষয়ে তথ্য দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওসি আখতার। এ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। আখতার হোসেন আরো জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মুহিদ জানিয়েছে যে, হত্যাকান্ডের স্থলে রাখা একটি ভ্যান গাড়িতে হাত দেয়ায় তাকে চোর সন্দেহে আটক করে মারধর করা হয়।
ইসমাইলও ৫ দিনের রিমান্ডে
রাজন হত্যা মামলায় আটক ইসমাইল হোসেন আবলুসেরও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার সকালে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ সায়েদুল করিমের আদালতে হাজির করে তাকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আলমগীর হোসেন। আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
যেভাবে ধরা পড়লো ঘাতক কামরুলঃ
১৩ জুলাই সোমবার বিকেল তখন। জেদ্দার বাঙালি অধ্যুষিত কিলো তামানিয়া এলাকায় হঠাৎ চোখে পড়ে কামরুলকে। দু’জন প্রবাসী ফেসবুকে দেখা ছবির সঙ্গে কামরুলের চেহারার মিল পেয়ে যান। বাপ্পি লস্কর নামে আরেকজন প্রবাসীকে ফোনে খবর দেন তাঁরা। এ সময় বাপ্পি লস্কর ও তার এক বন্ধু এম এ সালাম মক্কা থেকে জেদ্দায় ফিরছিলেন। তাদেরকে বলা হয় কামরুলকে নজরে রাখতে। তখনই জেদ্দা কনস্যুলেটে খবর দেন লস্কর। দ্রুতই ঘটে যায় সবকিছু। কনস্যুলেটের সচিব আজিজুর রহমান তিন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছান। এ সময় প্রবাসীদের সহায়তায় কামরুলের গাড়ি ও এর প্লেট নম্বর আবিষ্কার করেন তাঁরা। কামরুলের গাড়িটি এ সময় তাঁর সৌদি মালিকের বাড়ির ফটকে অবস্থান করছিল। ওই বাড়িতে দারোয়ানের কাজ করতেন কামরুল। ১৫ বছর ধরে সে কর্মরত রয়েছে সেখানে। বাড়ির সামনে মানুষ-জনের ভিড় দেখে সৌদি মালিক এ সময় বেরিয়ে আসেন। তাকে কামরুলের ছবি দেখিয়ে রাজন হত্যার বিবরণ দেওয়া হলে সৌদি মালিক তাৎক্ষণিকভাবে কামরুলকে ধরিয়ে দেন। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৭টায় জেদ্দা কনস্যুলেট জেনারেল ভবনে নেওয়া হয় তাকে। ততক্ষণে জেদ্দা কনস্যুলেটে প্রবাসীদের ভিড় জমে যায়। স্থানীয় সংবাদকর্মীরা রাজন হত্যা নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন তাকে। জেদ্দা কনস্যুলেটের প্রথম সচিব জানান, কামরুল ইসলামকে কূটনৈতিক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন সে জেদ্দার জামেয়া থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব তাকে দেশে পাঠানো হবে।