লাল-সবুজের মিলনমেলায় জমে উঠেছে সুরমা পাড়ের বৃক্ষমেলা

06পুণ্যভূমি সিলেট নগরীর প্রানকেন্দ্রে’র প্রবেশদ্বার সুরমাপাড়ে ক্বিনব্রীজের নিচে আলী আমজাদ এর ঘড়ির চারদিকে নিরিবিলি পরিবেশে লাল সবুজের মিলনমেলায় জমে উঠেছে বৃক্ষমেলা। টবে সাজানো কিংবা কলম বাঁধানো ছোট-ছোট চারা গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দেওয়া লাল নীল রংয়ের ফুলে পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের হাসি মাখা ঝিলিকে যেন উতলা করে তোলে আগত দর্শকদের হৃদয়। সবুজের নির্যাস আর সুরমা নদীর মুক্ত বাতাস যেন আবদ্ধ শহরের বন্দি জীবনকে মুক্ত করে তুলে প্রকৃতির সাজে সাজানো কোলাহল মুক্ত পরিবেশ।
বৃক্ষমেলায় গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও ছিল ক্রেতাসাধারণ ও দর্শনার্থীদের উচ্ছাস মূখর উপস্থিতি। দেশী-বিদেশী হরেক রকমের চেনা-অচেনা হাজারো বৃক্ষের নির্যাস কেড়ে নিচ্ছে দর্শনার্থীদের মন। নানান রকমের ফুলে-ফলে ভরপুর কলম বাঁধানো চারা গাছের দেখা মিলে এই মেলায়। সবুজ পাতার ফাঁকে রঙ্গিন ফুলে সাজানো বিভিন্ন স্টল গুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটক ও ক্রেতাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব বয়সের নারী-পুরুষ ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করে জেনে নিচ্ছেন নতুন গাছের পরিচয়। সেই সাথে আগত দর্শকরা সেলফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলেছেন আবার ক্রয় করে নিচ্ছেন পছন্দের গাছ। গত ৩আগষ্ট শুরু হয়েছে সিলেটের ক্বীন ব্রীজের নিচে আলী আমজাদের ঘড়ির চারপাশে সিলেট বন বিভাগ, জেলা প্রশাসন, ও নার্সারী মলিক সমিতির যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে বৃক্ষমেলা-২০১৫। মেলা চলবে আগামী ১৭ আগষ্ট পর্যন্ত। প্রথম দিকে দর্শক ও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও বর্তমানে জমজমাট হয়ে উঠেছে বেচাকেনা। শুক্রবার ছুটির দিনেও দেখাযায় বৃক্ষপ্রেমী, বাগানপ্রেমি, ফুলপ্রেমি বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের প্রচন্ড ভীড়। দেখলে মনে হয় বৃক্ষ প্রেমিদের সংখ্যা ইট পাথরের এ শহরে কম নয়। বৃক্ষমেলায় রয়েছে সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত নার্সারীর স্টল। মেলা প্রাঙ্গনে আসলে মনে হবে সবুজের সমারোহে প্রাকৃতিক সুন্দর্য়ের কোন এক নিরিবিলি পরিবেশের পার্কে এসে উজার করে দিয়েছেন নিজেকে।
বৃক্ষমেলায় দেখামিলে হরেক রকমের ফুলের গাছ, ঔষধি গাছ, পৃথিবীর প্রায় দুর্লভ গাছ এ গুলো যে দেশের মাটিতেও ফলানো সম্ভব তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই মেলায়। আয়োজিত মেলায় দর্শকদের নজর কারছে বৃক্ষমেলায় সিলেট নার্সারীর স্টলে সাজানো দেশী বৃক্ষের পাশাপাশি দেখা মিলে বিদেশী থাই হাইড্রেজিয়া, থাই বেগুনিয়া, থাই কেটেলিয়া, আফ্রিকান ভায়লেট, থাই এয়ার প্লান্ট, থাই টিলেনিয়া, থাই কেকটাস ও থাই অর্কিড। দেশী-বিদেশী আকর্শনীয় বৃক্ষ উৎপাদন ও সংগ্রহ করে বিগত কয়েক বছর ধরে পুরস্কৃত হয়েছেন সিলেট নার্সারী। তাদের স্টলে রয়েছে হাজারো প্রজাতির দৃষ্টি নন্দিত বৃক্ষ। সিলেট নার্সারীতে পাওয়া যাবে নতুনত্বের বিদেশী হরেক রকমের গাছের চারা। এই স্টলে রয়েছে দেশীয় নানান প্রজাতির বৃক্ষ সহ দেশের বাইরে থেকে আমদানীকৃত কেকটাস, কাটা বিহীন মম লেবু, বারমাসী বরই, বরমাসী আম, আরবি খেজুর, কাজু বাদাম, অর্কিড, কাঠের শো’পিছ, ঔষধি গাছ, সর্বাধিক ৩০ বছর বয়সের বনসাই গাছ মেলায় আগত বৃক্ষ প্রেমিদের দৃষ্টি কারছে। তাদের সংগ্রহে রয়েছে দেশীয় বিভিন্ন ফলজ গাছের পাশাপাশি বারমাসি আম পুনাই, বারমাসি অরবরই হাই্ব্রীড কদ বেল, হইব্রীড জাম্বুরা, হাইব্রীড জলপাই, থাই লাল মুরিচ, থাই সাফেডা, থাই মিষ্টি তেতুল, এভকাডো,করমচা, থাই মালটা, হাই্ব্রীড আমলকি, চায়না কমলা, ম্যাগাষ্টিন , সবজির চার, মসলা জাতিয় ফসল, কাঠের শো পিছ, কেকটাস। সবগুলোর দাম ক্রেতা দের হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছে। সর্বনিম্ন ১৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকার গাছ রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধীকবার প্রথনস্থান অধিকারী সিলেট নার্সারীর স্বতাধীকারী মলয় লাল ধর। তিনি আশা প্রকাশ করেন ক্যাটাগরি অনুজায়ি এবারও বৃক্ষমেলায় প্রথম পুরষ্কার জিতে নিবে সিলেট নার্সারী। দেশীয় ফল এর পাশাপশি হাইব্রীড গাছের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, শহরে চাহিদার চাইতে জায়গার অভাব রয়েছে মানুষ চায় কম জায়গায় অধিক ফসল পেতে। আমরা চেষ্টা করেছি ক্রেতাদের চাহিদা মিটাতে। এর প্রতিফলনও পেয়েছি মরিচ গাছের সাথে কি ভাবে অন্য মসলা জাতীয় ফসল ফলানো যায়।
সিলেট নার্সারী ছাড়াও মেলায় রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি নার্সারীর স্টল গুলোতে বিদেশী বৃক্ষের সংগ্রহ রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকান বনসাঁই প্রজাতীর বৃক্ষ জেমেনিফোরা, এডেনিয়াম সহ মেলায় প্রদর্শনী বিদেশী কয়েকটি ফুলের মধ্যে রয়েছে, ইফুরবিয়া, জেমেনি ফোরা ফলজ গাছের মধ্যে রয়েছে থাই মাল্টা, থাই পেয়ারা, আমেরিকান ফল এরো করাডো, থাইল্যান্ডের লেবু, মাদ্রাজী ও পাকিস্তানী আম, চায়না কাচা মরিচ। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলে চারা ও গাছের সংখ্যা কম দেখা গেলেও তারা ভিন্ন পন্থায় মেলায় আগত দের দৃষ্টি কারছে। একটি বাড়ি একটি খামার ও আদর্শ বাড়ির মডেল বানিয়ে চারপাশে গাছ লাগিয়ে মানুষকে পরিবেশ সম্মন্ধে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নার্সারীর মালিকরা জনান, মেলায় বিক্রি কম হোক সেটি সমস্যা না সাধারণ মানুষ যেন বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী হয়ে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসেন সেটাই আমাদের কাম্য। মেলায় আগত বৃক্ষপ্রেমী সাংবাদিক ও কলামিষ্ট আফতাব চৌধুরী বলেন আমারা যদি গাছকে ভাল বাসতে না পারি তবে নিজেরাও ধ্বংস হয়ে যাব। তাই সকলে মিলেই পরিবেশ বাাঁচাতে অধিক পরিমানে গাছ লাগাতে হবে। বৃক্ষমেলায় উপস্থিত আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদ বলেন আমাদের বাঁচতে হলে বনকে রক্ষা করতে হবে। বনে বৃক্ষ না থাকলে আমরা মানুষতো দুরের কথা বনের রাজারাও বিলিন হয়ে যাবে। এজন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের আন্তরিক হয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জীবন বাচাতে গাছের বিকল্প নাই।

Developed by: