দুশ্চিন্তায় তারাপুর ‘রাগীব রাজ্য’র ৩৫৭ পরিবার

94669c5f9943af224eb830207577d7bdঘর-বসতি তৈরি করে তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন সেখানে। অনেকের ছেলেমেয়েও লেখাপড়া করেছে এবং করছে নিকটবর্তী স্থানে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সারাজীবনের জমানো সঞ্চয় দিয়ে হয়তো মাথাগোজার একটু ঠাঁই গড়েছিলেন তারা। সরকারি ফি দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রিও করেছেন সবাই। নিজেদের এ আবাসন গড়ায় তাদের ছিলনা কোনো ফাঁকিঝুকি। কিন্তু এরপরও বসতভিটে হারানোর আতঙ্ক এখন ঘিরে ধরেছে তাদেরকে। অনেকটা হঠাৎ করে এমন দুশ্চিন্তায় পড়া ৩৫৭টি পরিবার হলো সিলেট নগরীর তারাপুরস্থ ‘রাগীবরাজ্য’র বাসিন্ধা।

সিলেটের টিলাঘেরা ৪২২.৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা তারাপুর বাগানে পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯১৫ সালে ওই বাগানের তৎকালীন মালিক বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ আখড়ার নামে বাগানটি দান করেন। ওই বছরের ২ জুলাই রেজিস্ট্রির মাধ্যমে দলিলও করে দেন বৈকুণ্ঠ। ১৯৯০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাগানের তৎকালীন সেবায়েতের মাধ্যমে নিজের ছেলে আব্দুল হাইয়ের নামে বাগানটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেন রাগীব আলী। পরে বাগানের একটি অংশে তিনি স্ত্রী ও নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন হাসপাতাল।

তবে বর্তমানে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে রূপ পাওয়া এ সেবামুলক প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের আড়ালে রাগীব আলী চালিয়ে যান আরো অনেক কাজ। লিজ নেওয়া জায়গা অনিয়মের মাধ্যমে প্লট আকারে বিক্রি করে অনেকের কাছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তারাপুর ‘রাগীব রাজ্যে’ ৩ শতাধিক প্লট বেচাকেনা হয়েছে। এসব প্লটের অধিকাংশেই ইতোমধ্যে বাসা-বাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গা এখনো ফাঁকা রয়েছে।

তারাপুরে জায়গা কিনে ইতোমধ্যে সেখানে বসতি গড়েছে ৩৫৭টি পরিবার। তাদের অধিকাংশই নিজেদের ভিটেতে তুলেছেন বহুতল ভবন। জায়গা কিনে মার্কেটও তৈরি করেছে কেউ কেউ।

তারাপুর বাগান এলাকার মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাগীব আলীর সাথে শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ আখড়ার সেবায়েতের আইনী লড়াই চলে। তাই এ জায়গায় প্লট ক্রয় করা ব্যক্তিদের মাঝে দুশ্চিন্তা ভর করে অনেক আগে থেকেই। তবে তাদের সে শঙ্কা অনেকটা ভারি হয় গত ১৯ জানুয়ারি এক রিট আবেদনের আপিলে বাগানে রাগীব আলীর মালিকানা অবৈধ বলে হাইকোট রায় দেওয়ায়। ওই রায়ে আদালত ৬ মাসের মধ্যে বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশ দিলে রাগীব আলীর কাছ থেকে প্লট ক্রয় করা এবং বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা লোকজন বেকায়দায় পড়েন।

এদিকে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রশাসন ১৫ মে শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ আখড়ার সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে তারাপুর বাগানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। আর এর ফলে সেখানে বসতি স্থাপন করা পরিবারগুলোকে যেন চেপে ধরে ভূমি ও সেখানে গড়ে তুলা স্থাপনা হারানো আশঙ্কা।

তারাপুরে বসতি স্থাপন করা লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়- কষ্টে উপার্জিত অর্থে জায়গা ক্রয় করায় নিজেদের মাঝে কোনো অনিয়ম না থাকলেও বিক্রেতার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সমস্যা মুখোমুখি হতে হচ্ছে ৩৫৭টি প্লটের ক্রেতাদের। নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে তারা চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। তারা জানান- অন্যের জালিয়াতির কারণে তাদেরকে এখন সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তারা এখন কী করতে তা ভেবে পাচ্ছেন না। তারাপুরে ঘরবসতি স্থাপন করে বসবাসকারীরা বলেন, রাগীব আলীর মত একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গা ক্রয় করে এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হবে তা কখনও মনে আসেনি।
– See more at: http://www.deshebideshe.com/news/details/74128#sthash.nKsmrh8Z.dpuf

Developed by: