ওয়াহিদ জালাল’র একগুচ্ছ কবিতা

jalal

তুমি আমার একাকীত্বের চাঁদ

চারদিকে মাটির দেয়াল, খুব শীতল অন্ধকার,
সদ্য বিয়োগ ব্যথাতুরা সম্পর্ক
তবুও তুমি ঘুমিয়ে আছো একা;
এভাবেই বুঝি ছেড়ে থাকতে হয় সেখানে?
মনে পড়ে আজ, খুব করে মনে পড়ে;
প্রবল শীতের আহ্লাদে ঘরময় তুমি
খুঁজে ফিরতে একটু ওম, তারপরঃ
নিরবচ্ছিন্ন নিরবতায় তাকাতে আমার মুখের দিকে!
যা কিছু পাবার যোগ্য নই আমি
পেয়েছি কত পূর্বে, নিবিড় দেহে মুখর সন্ধ্যা!
চিঠির মত ভয়ে খুলছি অন্ধকারে বিরহ
নিস্তব্ধ নিঝুম কাগজে তোমার নাম লেখা,
ব্যাকুল সুরে দুরাশা মনের মলাটে আঁকে
শূন্যতার পরিচয়; সরল স্নেহে দুঃসাহসিক হবার
জন্য বালিশে পুরানো ঘামের গন্ধ শুঁকি;
প্রেমের ওপর আস্থা সহানুভূতির হাত রাখে।
তুমি ছিলে তখন আমি বুঝিনি,
তোমার শূন্যতায় মনের পৃথিবীর তৃষ্ণা অধিক,
অসীম জিজ্ঞাসা আয়ুর মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়!
তোমাকে দেখার ব্যাকুলতায় অনন্তে ভিখিরি হই;
শেষে ভাবি, তুমি আমার একাকীত্বের চাঁদ।

বেখেয়ালে দীর্ঘ হয়ে যায়

ক্ষতবিক্ষত জীবনের বিস্ময় অজান্তে খসে
পড়ে সাধকের আহ্বানে ছোঁয়া মাটিতে,
সালিশ শেষে অন্যায়গুলো যেমন করে হাসে
সত্যের চোখে জলের ওপর বসে
ঠিক সেই ভাবে নিরুদ্দেশ এক বিজন কায়া।
রাত্রির কুসুমগন্ধী বাতাস পথরেখা খুঁজে
শপথ মুখর সূর্যের নামে মালা গাঁথে
সেও এক সঞ্চিত প্রেমিকের শুদ্ধ অভিমান,
আয়ত্তের খুঁটায় অন্তিমের আনাগোনা
বেঁধে রাখি অনাগত দিনের অভিশাপ।
অবরুদ্ধ স্বপ্নহীন অসংখ্য বেদনার জিজ্ঞাসা
স্বপ্নময় ঘরে সন্ধ্যার হৃদয়ের কাছে
খুব ভেতরে যাবার আকুতি করছে আজ
তবু বেখেয়ালে দীর্ঘ হয়ে যায় দীর্ঘশ্বাসের
ছায়া, বকুলের মায়া ভেজা কবির ভোরবেলা।

পুড়াপাখী তুই দীর্ঘশ্বাস

বদলে যায় একদিন
জ্বলন্ত বুকের ওপর জীবনের দীর্ঘশ্বাস
সারারাত নক্ষত্রের তলে
বিষম চেনা দূরের বেহায়া আকাশ।
বুকের মাটিতে
তোমার স্পর্শবীজ হেফাজতে নিজস্ব আগ্রহে
যদি লুটিতে
বিলকুল খাঁটি মহব্বতে মনের সিজদারত ঈদগাহে।
বদলে যায় একদিন
রক্তের ভেতর বয়েচলা সুখ কিংবা দুঃখ
শরিফ হৃদয়ের নয়নে
চাঁদের শরীর ছুঁতে কপালের তৃষ্ণা অতি সুক্ষ্ম।
চোখের লোভ বেহায়া হয় তোমার দেয়া রুমালে
আমার স্মৃতির বিশ্ব ভেজা রাশি-রাশি বেদনার জলে!

নৈঃশব্দের রাত জেগে

আমি জানতাম
একদিন তুমি ঘুমিয়ে পড়বে
আর আমি
তোমার নাম ধরে ডাকতে-ডাকতে
আবার মানুষ হবার জন্যে ছুটে যাবো
পুণ্যফলের লোভে শূন্যতার দিকে ।
জ্ঞানের গেলাসে
অলৌকিক অমৃতের ভাড় রাখবে
কেবল ঘূর্ণিঝড় অথবা
দয়াময়ী কোন দেবীর পরম হাত
যে বুকের কপাট খুলে দেবে রেশমি হাতে ।
যে কাজল
দেহের ঝরেপড়া ঘামে বসে শিস দেয়
তার চেয়ে
অধীক অদৃশ্য তড়িত প্রার্থনা করে বসে
ব্যাকুল রাজকীয় স্পর্শের বেদনার উল্লাস ।
আমি জানতাম
পৃথিবী সুর্যলোকে আর কোনদিন পৌঁছবেনা
তোমাকে আমার চিৎকার
আমি জানতাম
রাত পোহানোর ডাক শুনে অবাক পৃথিবী
কুসুম শয্যায় দেবে বিচ্ছেদ উপহার ।

Developed by: