দক্ষতার সবটুকু উজাড় করে দিয়ে কীভাবে ম্যাচ জিততে হয় তা বোধহয় লিওনেল মেসির জানা আছে। তাই হয়তো কোপা আমেরিকা মেসির জন্য আলাদা একটি মঞ্চ। গোল করো, গোল করাও, ম্যাচ জেতাও, দলকে এগিয়ে নাও, নিজে রেকর্ড গড়ো। মেসি যেন সে পথেই হাঁটছে। দেবদূতের মতোই খেলছেন এলএমটেন। কোপা আমেরিকার মঞ্চে আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেন মেসি। সঙ্গে নিজেও রেকর্ড গড়েছেন।
গতকাল ভোরে বাংলাদেশ সময় ৬টায় ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে আলেহান্দ্রো গোমেজের গোলে আর্জেন্টিনা ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছে প্যারাগুয়েকে। মেসি গোল করেননি। কিন্তু এলএমটেন গোলের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। দারুণ এক লড়াই হয়েছে। বেশি ব্যবধানে ম্যাচ জিততে পারত আর্জেন্টিনা। কিন্তু গোল বাতিল করেন রেফারি।
মেসি নিজে গোলের খাতায় নাম না লিখলেও প্যারাগুয়ের বিপক্ষে গোলের আর্কিটেক্ট তিনি। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন এই তারকা এলএমটেন। ১৪৭টি ম্যাচ খেলার গৌরব মাথায় তুলেছেন। এতদিন যেটি ছিল মাসচেরানোর নামে। তিনিও ১৪৭টি ম্যাচ খেলেছেন। আগামী মঙ্গলবার কোপার ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামলে মেসি এককভাবে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সবেচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডের মালিক হবেন। যদি আরো একটু এগিয়ে বলা যায় কোপায় আর্জেন্টিনা ফাইনাল পর্যন্ত উঠলে এবং মেসিও যদি খেলেন তাহলে মেসির হবে ১৫০ ম্যাচ খেলার রেকর্ড।
চিলি বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র এবং উরুগুয়ের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের খেলা এত ঊষালগ্নে যারা দেখেছেন তারা মেসিকে আলাদা করে রেখেছেন। উচ্চ আসনে বসিয়ে আর্জেন্টিনার বাকি খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিচার করেছেন। কাল ভোরেও মেসিই ছিলেন সব আকর্ষণ। মেসিকে কীভাবে আটকাবে তা নিয়ে প্যারগুয়ের নানা পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। হাত ধরে টেনে ফেলে দেওয়া, পায়ের গুঁতাগুঁতিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার ফাঁদ তৈরি করা, সবই ছিল। তার পরও মেসি যেন দেবদূতের মতোই ক্ষিপ্রগতিতে ছুটছেনে। প্যারাগুয়ের গোল মুখে ডান দিক দিয়ে আক্রমণের সূত্র তৈরি করেন মেসি। বামপায়ে ডি মারিয়াকে নিখুঁত একটা পাস ঠেলে দেন। ডি মারিয়া বলটাকে নিয়েই থ্রু ঠেলেন গোমজেকে, ব্যস। গোমেজ আর কোথাও না তাকিয়ে প্যারাগুয়ের জালে জাড়িয়ে দেন ১-০।
প্যারাগুয়ে শপথ করে নেমে ছিল কোনোভাবেই আর্জেন্টিনাকে গোল করতে দেবে না। যে দলে মেসি, ডি মারিয়াদের মতো আক্রমণভাগ থাকে সেখানে একটা কৌশলেই প্রতিপক্ষ কুপোকাত হতে পারে। বাকি ৮০ মিনিটে প্যারাগুয়ে আর সমতা আনার সুযোগ পায়নি। বরং বলতে হয় প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার আগে আর্জেন্টিনার গোল বাতিল ভার দেখে। অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
ডি মারিয়ার পাওয়ারফুলশট ফিরিয়ে দেন প্যারাগুয়ের গোলকিপার অ্যান্থনি সিলভা। ফিরতি বল পেয়ে আর্জেন্টিনার লিয়ান্দ্রো প্যারাদেস গোমেজকে ঠেলে দেন। গোমেজ সেই বল ধরে গোল করলেও সেটি অফসাইডের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। তবে আর্জেন্টিনার দর্শক সেটি মেনে নেবেন না। অনেকেই এই সিদ্ধান্তটাকে বিতর্কিত মনে করছেন। এবার নিয়ে শেষ ২৩ বারের মুখোমুখিতে আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারেনি প্যারাগুয়ে।