কামরুল এবং মাহীর দুঃসাহসিক অভিযান : শিশু মনস্তত্ত¡ স্পর্শের প্রয়াস ……সাইদুর রহমান সাঈদ

‘বিড়ালছানা ইঁদুরছানাকে করলো টেলিফোন
কালকে আমার জন্মদিনে তোমার আমন্ত্রণ।’
ইঁদুরছানা যদি আমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য বিড়ালছানার বাড়িতে যেতে তাহলে কেমন হতো? বা কি ঘটতো?
গল্পকার জুবায়ের চৌধুরী তার গল্পের নায়ক কামরুলের প্রিয় বিড়ালছানা মাহীর জন্য খেলনা হিসেবে খেলনা-ইঁদুর পছন্দ করে বেশ মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। শিশুতোষ সাহিত্যে চরিত্র নির্মাণ অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশুদের মনে কৌতুহল সৃষ্টি ও নানা প্রশ্ন জাগিয়ে তুলতে পারলে শিশুর মানস গঠনে তা সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে।
শিশুতোষ সাহিত্যের ভাষা সহজ-সরল-কোমল-প্রাঞ্জল-সাবলিল ও বোধগম্য হতে হয়। শিশুদের জন্য উপযোগী শব্দচয়ন ও বর্ণনভঙ্গির বৈচিত্রতা একান্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে গল্পকার যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তার চমৎকার উপস্থাপনা গল্পটিকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে।
কামরুল এবং মাহীর দুঃসাহসী অভিযান’ পড়ার পর আমার মনে হয়েছে গল্পকার শিশুদের নৈতিকতাবোধে উজ্জ্বীবিত এবং সংঘবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে কোনো কাজ করার প্রতিও তিনি শিশুদের উৎসাহিত করেছেন। আসলে শিশুদের মধ্যে নৈতিকতাবোধ, ভালমন্দবোধ, জীবনবোধ, চেতনাবোধ প্রভৃতি জাগিয়ে তোলার কাজ করতে হয় শৈশবকাল থেকেই। আনন্দঘন পরিবেশে শিশুদের শিক্ষা দিতে হয় বা শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে গল্পকার তার সৃজনশীল প্রতিভার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। তার জীবন ঘনিষ্ঠ একটি অভিজ্ঞতার আলোকেই তিনি ইংরেজি ভাষায় গল্প লেখার প্রয়াস পেয়েছেন। এতে শিশুরা ইংরেজি ভাষা শিখতেও আগ্রহী হবে এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় ‘কামরুল এবং মাহীর দুঃসাহসী অভিযান’ গল্পটি লেখকের সুদূর প্রসারি চিন্তা ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। এ গল্প পড়ে শিশুরা বেশ উৎফুল্ল হবে এবং শৈশবে কিভাবে জীবনযাপন করতে হয়, সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে।
গল্পের বর্ণনায় দেখা যায়, কামরুল তার প্রিয় বিড়ালছানা ও তার খেলনা-ইঁদুরকে বাড়িতে খুঁজে পাচ্ছে না তখন তার
মনে পড়ে যায় গত পরশু মনির দাদার উঠানে বিড়ালছানাকে ইঁদুরের সাথে খেলতে দেখেছে। তখনই সে মনির দাদার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। তাদের বাড়ির মাঝখানে যে জঙ্গল ছিল তার দিয়ে হাঁটতে গিয়ে সে একটি কাঠবিড়ালীর দেখা পায়। বন্ধু বৎসল কাঠ বিড়ালী কামরুলের অভিপ্রায় জানার পর তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাকে নিয়ে মনির দাদার বাড়ির দিকে যাত্রা করে। যাত্রা পথে তারা বনের মধ্যে একদল খরগোশের দেখা
পায়। তারা তাদের অভিযানের কারণ জানতে চায়। ঘটনাটি জানার পর খরগোশের দল তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং মাহী ও খেলনা-ইঁদুর খুঁজে বের করে দেওয়ার আশ^াস দেয়। কামরুল, কাঠবিড়ালী ও খরগোশের দল মিলে মনির দাদার বাড়ির ঝোঁপঝাড়ের ভেতরেই খেলনা-ইঁদুরটি পেয়ে যায়। এ অভিযানে আন্তরিক সহযোগিতার জন্য কামরুল কাঠবিড়ালী ও খরগোশের দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানালো। বাড়িতে ফিরে আসার পর কামরুল অনুধাবন করলো দলবদ্ধভাবে কাজ করার ফলেই তার অভিযান সফল হয়েছে। এ অভিযানে তার কিছু নতুন অ্যানিমেল ফ্রেন্ড তৈরি হলো। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় চমৎকার বর্ণনা জোবায়ের চৌধুরীর সৃজনশীল প্রতিভা ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে।
কামরুল এবং মাহীর দুঃসাহসী অভিযান’ গল্পটি বাংলা ইংরেজি উভয় ভাষায় রচিত হওয়ার ফলে শিশু কিশোরদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন সহজ হবে এবং ইংরেজি ভাষা শিখতে তারা আগ্রহী হয়ে ওঠবে। গল্পটি শিশু শিক্ষামূলক এবং শিশুর মানস গঠনের সহায়ক। জীবন চলার পথে অন্যান্যদের সহযোগিতার প্রায়োজনীয়তার গুরুত্বের বিষয়টিও গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট। এক কথায় এটি একটি সফল শিশুতোষ গল্প।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক গল্পকার জোবায়ের চৌধুরী দুই ভাষার গল্প লিখে ব্রিটিশ ও বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের যে প্রচেষ্টা করছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা আশাবাদী এই তরুণ গল্পকারের কাছ থেকে আগামী দিনে আরও বেশি সৃজনশীল শিশুতোষ সাহিত্যকর্ম আমাদের সাহিত্য ভাÐারকে সমৃদ্ধ করবে।

২৫/০১/১৪৩০
লেখক: সভাপতি : বাংলাদেশ সাম্যবাদী সাহিত্য পরিষদ

Developed by: