পান্না কায়সারের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হবে রবিবার

লেখক, সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক পান্না কায়সার মারা গেছেন। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী ও অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা। তাঁর আরেক সন্তানের নাম অমিতাভ কায়সার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর| মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।

শমী কায়সার কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ডায়বেটিস ছাড়া তাঁর মায়ের তেমন গুরুতর কোনো অসুখ ছিল না। শুক্রবার সকালে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে তাঁকে ১০টা নাগাদ রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোয়া এগারোটার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে পান্না কায়সারের মৃত্যুতে পৃথকভাবে শোক জানিয়েছেন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য হিসেবে পান্না কায়সারের অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। পৃথক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও সংগঠনও তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।

পান্না কায়সার ১৯৫০ সালের ২৫ মে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আরেক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী। ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শহীদুল্লাহ কায়সারের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। সেদিন ঢাকা শহরে কারফিউ ছিল। পুরো দেশ তখন গণআন্দোলনে উত্তাল। ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা শহীদুল্লাহ কায়সারকে তাঁর বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর এই শহীদজায়া পেশাজীবনে শিক্ষকতা করেছেন বেগম বদরুন্নেসা কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন ১৯৭৩ সালে। ১৯৯০-তে তিনি এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উদীচীর সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন পান্না কায়সার।

ঔপন্যাসিক ও গবেষক পান্না কায়সারের লেখালেখির জগতে প্রবেশ ১৯৯১ সালে। তাঁর লেখা প্রথম গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ আগে ও পরে’ বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত। এরপর প্রকাশিত হয়েছে মুক্তি, নীলিমায় নীল, হৃদয়ে একাত্তর ও কাব্যগ্রন্থ বৃষ্টির শব্দ না এলে কান্না আসে নাসহ কয়েকটি গ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখায় ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

Developed by: