ময়নূর রহমান বাবুল’র গুচ্ছকবিতা

VLUU L200  / Samsung L200
প্রয়োজন

একটা নিস্তব্ধ রাত আমার দরকার
প্রচ- ঘুম আজ আমার দুটি চোখে
শিয়াল ডাকে ডাকুক, পূর্ণিমা হোক
ভোরের আশায় তবু ঘুমাবো সুখে।

একটা দেশ চাই, দেশের মাঝে গ্রাম
গ্রামে থাকবে উপচেপড়া ফুল ফসল
মানুষ হবে নির্মোহ, ভরা সতেজ প্রাণ
উড়বে সেথায় রঙিন প্রজাপতি দল।

মানুষ চাই, চাই আমি অনেক বীর
বীরেরা এনে দেবে নিরুপদ্রব রাত
ছবির মতো গ্রাম, গ্রামের মতো দেশ
বিপ্লবেই আসবে আলো, আসে প্রভাত।

একটা ভোর চাই, সূর্য উঠা ভোর
নির্মল বায়ু আর মিষ্টি সোনালি রোদ
বাঁচার তাগিদে আমার এসব চাই
যদি না পাই, তবে নেব প্রতিশোধ।

হিংসা, ক্লেশ, শোষণের চাই পরিবর্তন
বায়ু আলো ভরা ভোর আমার প্রয়োজন।

ভেজা খাম

যখন আমার এ চিঠিখানা তুমি পাবে
হরহর করে ডাকহরকরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে
পৌঁছে দেবে, ভেজা খামখানা তোমার হাতে।
প্রেমাতুর হাতে খুলবে তুমি, আলতো হাতে,
যেন ছিঁড়ে না যায়, আমার দেয়া চিঠি খানি।

এখন ভরা বরষা, চারদিকে থৈ থৈ জল,
জলেতে ডুবেছে বসত বাড়ি, পথ ঘাট
হরিদের নলকূপ, গৌরীদের পাঠশালা
এটুকুন কবরের জায়গাও নাই বলে-
জলে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে ওপাড়ার রমিজের লাশ।

অজোর ধারায় গড়ায় বৃষ্টি, পড়ে টাপুর টুপুর
এ যেন ঘাঢ় আঁধারে বাঁঝে কারো পায়ের নুপুর
সারা অঞ্চল, বানে ভাসা সব এলাকার নদী ও পুকুর
চারিদিকে হাহাকার, দিশেহারা মানুষ কাঁদিছে যন্ত্রণায়।

এ ভেজা খাম, ভিজেনি বৃষ্টিতে বরষার
ভাদরের বরিষণের মতো আমার দু’চোখে
অঝোর ধারায় নেমে আসা নোনাজল
ভিজিয়ে দিয়েছে খাম, এই চিঠি, এই লেখা।

গলাডুবা জলে দুবেছে সব তাল নারিকেল
ঝড়ের ঝাপটায় আর বানের স্রোতে
সুপারি গাছের মাথায় ধর্ষিতার চুলের নমুনা
ফোটা ফুল কদমের হয়েছে সলিল সমাধি
নিষ্ঠুর স্রোতে ভেসে গেছে সব লালপদ্ম
স্থলচর প্রাণীগুলো ভাসছে অথৈ জলে…

এমন বানতাড়িত হাহাকার সময়েও এ অঞ্চলে
নেতা আসে, ক্যামেরার ফ্ল্যাশগুলো বারবার হাসে
ভোরের পত্রিকার প্রথম পাতায় তাদের ডাউস রঙিনছবি
আর ভিক্ষা-বিতরনের খবর সযত্নে ছাপা হয়,
কিন্তু ছাপা হয়না কৈতরির জলে ডুবে লাশ হওয়ার
কিংবা অনাহারে আত্মহত্যা করা শিউলির খবর,
বানের আগে নদিভাঙ্গনে মথুর নাথের বাড়ী হারাবার
কিংবা আগাম অতিবৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া ফসলের কথা,
বড়লোকের খবরের ভিড়ে বানভাসা পরী মৌরিদের খবর
আমার এ ভেজা খামখানা খুলে তুমি জেনে নিও…

পাথর সময়

পৃথিবীর সব ঘড়ি এখন স্লথ
সময় দেখেনা কেউ
সূর্য আসেনা পূবের আকাশ জুড়ে
সাগরে উঠেনা ঢেউ।

উত্তর দক্ষিন পূর্ব পশ্চিমে পড়ে
সা¤্রাজ্যবাদের শ্বাস
ডান বাম সব একাকার আজ
শোষকের উচ্ছ্বাস।

লেলিন স্তালিন ফিদেল কাস্ত্রো
চে গুয়েভারা
দিকে দিকে আজ অভাব বিপ্লবীর
কাঁদিছে সর্বহারা।

ভিয়েতনাম থেকে কম্বোডিয়া
গড়তে চীনা প্রাচীর
শোষন মুক্তির ইতিহাস রচিবে
আমার দেশের বীর।

কেঁটে যাবে এই পাথর সময়
বিপ্লব দেশে দেশে
যুগের লেলিন, চে গুয়েভারা
আসছে শ্রমিক বেশে।

বোধ

পাটিগনিতে শেখা বিবিধ নিয়মের অংক
দুধে পানি মিশিয়ে লাভ ক্ষতির হিসাব
বানরের তেলামাখা বাাঁশ বেয়ে উঠানামা
সুদকষা ঐকিক লসাগু গসাগু-র ধারাপাত।

এ্যলজাবরা এ-স্কোয়ার বি-স্কোয়ার
প্লাসে প্লাসে আর প্লাসে মায়নাসে
হিমাঙ্কের দশ ডিগ্্রী নিচে বরফ ঠেলে
জীবনের চাকা ঘুরছে এখন দিনরাত।

লাভ ক্ষতি, সুদকষা, ঐকিক নিয়ম
হোলথিন স্কোয়ারের সূত্রগুলো সব
খুবই বেমানান বাস্তব জীবনে আজ
হারিয়ে যাওয়া কিশোর প্রেমের মতো।

যা কাজে লাগবে তা নিতে পারিনি সাথে
বাস্তবের কিছুই শিখতে পারিনি কখনো
নিজ দেশে জন্মেও করতে পারিনি বসবাস
জ্ঞানের পাঠ ফেলে কুবচন জপেছি অবিরত।

বিদ্যাপীঠ ব্যস্থ সদা আকাশ-কুসুম পাঠে
জীবন বাস্তবতা জ্ঞানের মন্দিরে তালা এটে।
বলদের মতো বয়ে বেড়াই সনদের বোঝা
লক্ষ্য আদর্শহীন পাখামেলা পিঁপড়ার মতো !

স্মৃতিগুলো আমার

কর্পূর দেয়া ছিলনা বলে আমার তোরঙ্গে
পুরনো স্মৃতিগুলো সব
তেলাপোকা, উইপোকা, পোকামাকড়ে মিলে
খেয়ে দেয়ে ভষ্ম করেছে।
কতো মধুর স্মৃতি ছিলো
জমানো কতো সোনার স্মৃতি
রূপোর স্মৃতি মণিমুক্তা খচিত।

সুখের স্মৃতিগুলো আজ নাই
খেয়েছে ইঁদুরে অথবা-
কর্পূরের মতো মিলিয়ে গেছে
মিশে গেছে বাতাসে।

দুলি অঞ্জলি, কেউ এখন আর স্মৃতিতে নেই
সুনা হিরু’র নাম ই তো আর মনে নেই আজ..

সামনে বাকি অনেক কাজ,
সামনে আগাই, পিছন ফিরে তাকাই
সাথে আছে কিছু বিরহের স্মৃতি
মনে পড়ে শুধু হারানোর কথা-
কুরে কুরে মোচড় মারে শুধু-
বিচ্ছেদের ব্যথা, হারানোর বেদনা
ও গুলো খায়নি ঘূণে, তিতা বলে
মিষ্টি স্মৃতিগুলো একেবারেই আজ আর নাই
টক্ ঝাল বিস্বাদের গুলোই শুধু বয়ে বেড়াই।

তোমাকেই

তোমাকে বার বার কবিতায় তুলে আনি
অথবা উঠে আসো তুমি আমার কবিতায়।
মনের কুঠরীতে লুকিয়ে রাখি
তবু বেরিয়ে আসো বারবার।

তোমাকে লুকোতে আমার কবিতায়
উল্টো করে লিখি তোমার নাম
কবিতা প্রেমিক পাঠক, কেমন যেন
বুঝে নেয় আমার চালাকি
তারা ঠিক নামটি পড়ে নেয় গল্পে কবিতায়,
জীবন্ত তুমি কথা বলো অবিরাম
পাঠকও হাসে, মাতে, তোমার সাথে
যতই লুকোতে চাই, রাখতে চাই গহীন বুকে
ততই বেরিয়ে আসো তুমি
ততই প্রকাশ করি তোমাকে।

Developed by: