গতকাল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে রুবেলের বলে ভারতের সেট হওয়া ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা আউট হবার পরেও ‘নো-বল’ এর সিদ্ধান্ত দেয়ায় পাকিস্তানি আম্পায়ার আলীম দারের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিশ্বমিডিয়া ও ক্রিকেট বোদ্ধারা। মজার ব্যাপার হলো, আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও বিদ্রুপ প্রকাশ করেছে এমনকি ভারতের মিডিয়া, সাধারণ মানুষ এবং ক্রিকেট অনুরাগীরাও।
ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে সেদেশের জয়ের কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো – ভারতের টস জয়, রিভিউর আবেদনে রাইনাকে ‘নট আউট’ দেয়া, ভুল বোঝাবুঝির কারণে ইমরুল কায়েসের রান আউট, সৌভাগ্যক্রমে মাহমুদুল্লাহ’র ‘ছক্কা’ হয়ে যাওয়া বলটি ক্যাচ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে ম্যাচ জয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে রোহিতকে বাঁচিয়ে দেয়া আলীম দারের ‘উদারতা’কে। ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, জি নিউজ, দ্য হিন্দুসহ ছোটবড় প্রায় সমস্ত মিডিয়া রোহিতের সেঞ্চুরি ‘উদযাপন করার মতো নয়’ বলে স্বীকার করেছে। কারণ হিসেবে সবাই বলেছে এই সেঞ্চুরি এসেছে আম্পায়ারের ভুলে। যে ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ‘আউট’ হবার পর রোহিত যে বাড়তি রানগুলো করেছেন সেই রানগুলোই বাংলাদেশের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে এসব প্রতিবেদনে।
ভারতের ‘ওয়ানইন্ডিয়া’ নিউজ পোর্টালে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি আম্পায়ার আলীম দারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ক্ষোভের ঝড় শুরু হয়েছে দুনিয়ার প্রায় সবগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে। এটাকে ‘বিতর্কিত সিদ্ধান্ত’ না বলে ওয়ান ইন্ডিয়া বলেছে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তো বটেই, অভিজ্ঞ এই আম্পায়ার তার জীবনের সবচে বাজে সিদ্ধান্তগুলোর একটি দিয়ে বাংলাদেশের পরাজয়ে বড় ভূমিকা রেখে অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীর মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছেন। কারণ, তিনি অত কাছে থেকে যে বলটিকে ‘নো’ বল বানিয়ে রোহিতকে বাঁচিয়ে দিলেন, গ্যালারি থেকেও স্পষ্ট বোঝা গেছে ওটা রোহিতের উরুতে আঘাত করত; কোমরের উপর নয়।
অপরদিকে, ইন্ডিয়া ডটকম লিখেছে আম্পায়ার আলীম দারের ভয়ানক বাজে আম্পায়ারিং বাংলাদেশি ক্রিকেট দর্শকদের চরম ক্ষুব্ধ এবং হতাশ করেছে। রুবেলের একটা নিশ্চিত উইকেট কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ‘কেড়ে নেয়ার’ অভিযোগও এড়াতে পারছেন না তিনি।
অন্যদিকে, ভারতের ক্রিকেট নিউজ পোর্টাল ক্রিকেটকান্ট্রি ডটকম লিখেছে রোহিত আউট হয়ে যাবার পরেও আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তে তিনি জীবন পেয়ে বাংলাদেশকে তুলোধুনা করেন। রোহিতের ৯০ এর পরের রানগুলো ‘করুণার দান’ বলে মনে করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়ায় ভূমিকা পালন করেছে। এতে আরো লেখা হয়, আম্পায়াররা একটু ধীরে সুস্থ্যে সিদ্ধান্ত নিলে কি অমন ক্ষতি হতো! নকআউট পর্বের মতো জীবন-মরণ ম্যাচে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আম্পায়াররা পরস্পরের সাথে আলাপ-আলোচনা করে নিয়ে থাকেন। তারাও সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে উপরে (থার্ড আম্পায়ারের কাছে) রেফার করে দেন। কিন্তু মাঠে থাকা দুই আম্পায়ার মিলে যা করেছেন তাতে ক্রিকেটের শুভাকাঙ্খী যে কাউকে বেদনাহত করবে।
কেবল ভারতের মিডিয়া নয়, দেশটিতে ক্রিকেটের মঙ্গলকামী সাধারণ মানুষও আম্পায়ের এই বাজে সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি। দিল্লির প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং লেখক রাজদ্বীপ সারদেশাই তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, কি আর বলব -‘আলীম দার জিন্দাবাদ’! চৌহান নামের এক ক্রিকেট দর্শক লিখেছেন, আলীম দার ‘সু-প্রতিবেশি সুলভ’ আচরণ করেছেন ভারতের আরেক প্রতিবেশিকে (বাংলাদেশকে) বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার জন্য!
টুইটারে জোসেফ নামের আরেক ভারতীয় লিখেছেন, রোহিত শর্মার ক্রিকেট মেধা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করে নিজেই সাজঘরে ফিরে যেতে পারতেন। আর যখন গেলেন না তখন, সেঞ্চুরি করার পর গ্যালারির দর্শকদের দিকে ব্যাট না উচিয়ে সেটি আলীম দারের দিকেই তোলা উচিত ছিল!