মোহাম্মদ নওয়াব আলী : প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটে অগণিত কীর্তিমানদের জন্ম হয়েছে যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে সিলেটকে আলোকিত ও গৌরবান্বিত করেছেন। এ ধরণেরই একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের অধিবাসী অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী।
১৯৫২ সালে এক সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন ড. অরূপরতন চৌধুরী। মাতা বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী, পিতা সিলেটের কৃতি সন্তান শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী, বড় ভাই অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, বোন অধ্যাপক ড. মধুশ্রী ভদ্র। স্ত্রী একজন সুগৃহিনী গৌরী চৌধুরী, দুই পুত্র অনিবার্ণ চৌধুরী ও সপ্তক চৌধুরী।
ড. চৌধুরী স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন কণ্ঠশিল্পী/ শব্দ সৈনিক।
১৯৭৬ সালে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে বি.ডি.এস ১৯৮২-৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেলোশিপ এবং ১৯৯২-৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষ্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়ার্ক এট স্ট্রনিব্রোক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন শিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি পিএইচ.ডি।
বিগত ৪০ বছর যাবত পেশাগত জীবনে ডেন্টাল সার্জারীতে চিকিৎসা সেবা ও গবেষণা কাজসহ বিভিন্ন তামাক ধূমপান ও মাদক বিরোধী আন্দোলনের সাথে সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তিনি ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব সার্জনস থেকে FESRCS (ফেলোশিপ ইন ডেন্টাল সার্জারী, রয়েল কলেজ অব সার্জনস) ডিগ্রি লাভ করেন FESRCS- England- 2012G
দীর্ঘ ৪১ বৎসর এদেশের দন্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে বহু প্রকাশনা ও গবেষণা করেছেন এবং এদেশের জনগণের কাছে দন্ত চিকিৎসার বিভিন্ন তথ্য ও রোগ প্রতিরোধের উপর বেতার টেলিভিশনে অনুষ্ঠান নির্মাণ ও উপস্থাপনার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
১৯৮৯ সালে মাদক ও ধূমপান বিরোধী সংগঠন মানস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ সংগঠনের মাধ্যমে দেশের যুব সম্প্রদায়কে ধূমপান ও মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
সংগীত জগতে দীর্ঘদিন যাবৎ জড়িত এবং একজন প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। ইতিমধ্যে ৪টি অডিও সিডি ও একটি ভিসিডি বের করেছেন।
বেতার ও টেলিভিশনে একজন সফল স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষত: তামাক, ধূমপান ও মাদকাসক্তি অনুষ্ঠান উপস্থাপক।
তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষত: তামাক, ধূমপান ও মাদকাসক্তির উপর প্রবন্ধ লিখছেন।
২০০১ সালে আমেরিকা বায়োগ্রোফিক্যাল ইনস্টিটিউট এর সদস্য পদ লাভ করেন।
ইতিমধ্যে ৩৮টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে, বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ উপস্থাপন করেছেন।
ড. চৌধুরী ১৭টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন যেমন, মুখ ও দাঁতের ৫০টি সমস্যা ও সমাধান, মুখের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য, মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য (অ ঃড় ত), সুন্দর দাঁতে সুন্দর হাসি, মাদকাসক্তি ও এইডস, মাদক ও মাদকাসক্তি, দাঁত ও মুখের রোগের সাথে দেহের রোগের সম্পর্ক, মুখ ও দাঁতের রোগ: প্রতিকার-প্রতিরোধ, মুখের স্বাস্থ্য ও তামাক পাতা, তামাক পাতা ও ধূমপান, মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য, আর ধূমপান নয়, মুখ ও দাঁতের ৬০টি সমস্যা ও সমাধান, মরণনেশা ইয়াবা ও ফেনসিডিল, ধূমপান থেকে মাদকাসক্তি, তামাক, মাদক ও নারী বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট।
ধূমপান ও তামাকের ক্ষয়ক্ষতি এবং মাদক ও মাদকাসক্তির উপর তার রচিত এইসব গ্রন্থ বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিগুলোতে স্থান পেয়েছে।
স্বল্পদৈর্ঘ্য ছায়াছবি নির্মাণ:
১। ডায়াবেটিস রোগ সংক্রান্ত স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র ‘শৃংখলাই জীবন’ এবং ‘শিশুদের ডায়াবেটিস’ (টিভিতে নিয়মিত প্রচারিত স্বাস্থ্য মূলক অনুষ্ঠান)।
২। তামাক, ধূমপান ও মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নির্মিত ‘নেশা সর্বনাশা’ বাংলাদেশথ টেলিভিশনে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে।
মাদকাসক্তির উপর নিয়মিত তার তথ্যচিত্র বাচসাস পুরস্কার লাভ করে ২০০৩ সালে। এছাড়াও বর্তমানে মাদকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি ‘স্বর্গ থেকে নরক’ নামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন ২০১৫ সালে।
বর্তমানে অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ও ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টাল সার্জারী বিভাগের সম্মানিত সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। পেশায় চিকিৎসক হিসাবে নিয়মিত রোগীদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ড যেমন- ধূমপান মাদক বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে যেমন সক্রিয় রেখেছেন তেমনি বেতার টেলিভিশনে নিয়মিত ভাবে স্বাস্থ্য বিষয়ক উপস্থাপনা, রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশনা ছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখির কাজেও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।
মাদকাসক্তির উপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নেশা সর্বনাশা’ বাচসাস পুরস্কার লাভ ২০০৩ সালে ঢাকা কালচারাল রিপোর্টাস এসোসিয়েশন কর্তৃক স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০০৬, বাচসাস কর্তৃক লাইফটাইম এ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড- ২০০৪।
বাচসাস পুরস্কার লাইফ টাইম ্এ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০০৩, স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনের জন্য টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসিাসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব) অ্যাওয়ার্ড ২০০৬।
আন্তর্জাতিক পুরস্কার :
বিগত বৎসর যাবৎ ধূমপান ও মাদক বিরোধী কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৯ আন্তর্জাতিক পুরস্কার- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) মেডেল দঞড়নধপপড় ড়ৎ ঐবধষঃয
ড. অরূপরতন চৌধুরী পরিচালিত প্রথম মাদক বিরোধী চলচ্চিত্র ‘স্বর্গ থেকে নরক’ ছায়াছবিটি সম্প্রতি ভারতের কোলকাতায় অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র সংস্থা টেলিসিন সোসাইটি কর্তৃক বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ করেছে।
গত ৪ জুন ২০১৬ কোলকাতা রবীন্দ্র সরবর নজরুল মঞ্চে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরুস্কারটি ড. অরূপরতন চৌধুরীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অধ্যাপক চৌধুরী বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের একজন সদস্য।
২০১৫ সালে তিনি সমাজসেবায় রাষ্ট্রীয় সম্মান জাতীয় পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন।