বিভাগ: সাহিত্য-সংস্কৃতি

নিঃশ্বাসের সাহস / কাজল রশীদ

সূচ ফোটানো অস্তিত্বে
আর বিবশ মননের মধ্যে
ধন্ধরা খেলা করে চতুর শিয়ালের মতো।
নিঃশ্বাসের বিশ্বাসরা আজও
মূঢ়তার মধ্যে দিয়ে
দিব্যি হেঁটে যায়,
না ফুরানো সময়ে।
নীরব ধ্বনি উচ্চস্বরে
কাঁপবে বলে আকাশ জুড়ে গর্জে।
সান্ধ্য-দীপ নিবে গেলে
আলোরা বিশাল ছায়ার নিছে
জড়ো হতে থাকে।
অন্তর্ভেদী চাপা আর্তনাদ করে
বিষাদ টুকু নিংড়ে।
নিঃশ্বাসের সাহস বেড়ে গেলে
রক্তস্বপ্লতা কমে যাবে দ্বিগুণ।

শূন্যতার মতো সুন্দর সময়ের ছায়া কবিতার বাগানে নানা রঙের ছবি ॥ শিউল মনজুর

S-01এই শস্য শ্যামল অপরূপ বাংলার গ্রামীণ জনপদই হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পাখির কলতানে ঘুমভাঙে আর নিঃসঙ্গ রাতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা গুণগুণ সুরের আবহে নিদ্রা যায় গ্রামীণ জনপদের সহজ সরল মানুষ। প্রাকৃতিক আবহে স্বভাবতই তাদের ভাবনা আর শহুরে মানুষের ভাবনার মধ্যে কিছুটা হলেও ফারাক রয়েছে।

অতি আধুনিকতার ছোঁয়ায় বা প্রযুক্তির অতি ব্যবহারে শহুরে মানুষের ঐতিহ্যগত চিন্তা চেতনার যেমন ভাঙনের প্রভাব পড়েছে, সে তুলনায় গ্রামীণ জনপদের মানুষের মধ্যে সে ভাঙনের প্রভাব বোধ করি এখনো পড়েনি এবং পড়েনি বলেই গ্রামীণ জনপদের সকল কর্মকান্ডে সমাজ ও দেশ মাতৃকার ঐতিহ্যের প্রতিফলন লক্ষ্য করি।

কবি কামরুন নাহার শেফালী সিলেট শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গোলাপগঞ্জ থানার গ্রামীণ জনপদে বসবাস করেও তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে দীর্ঘদিন থেকে কবিতা লিখে যাচ্ছেন।

তার প্রকাশিত সর্বশেষ কবিতার বইয়ের নাম শূন্যতার মতো সুন্দর সময়ের ছায়া। এই বইয়ের কবিতার মধ্যদিয়ে চিরায়ত ঐতিহ্যসহ বাংলার মাটি ও মানুষের আশা আকাঙ্খা ওঠে এসেছে। ওঠে এসেছে ব্যক্তি মানুষের চাওয়া পাওয়ার দিকটিও।

শূন্যতার মতো সুন্দর সময়ের ছায়া গ্রন্থে ৫২টি কবিতা অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। এই ৫২টি কবিতার মধ্যে অধিকাংশ কবিতায় গ্রামীণ জীবনের সরলতাই উচ্চারিত হয়েছে। তা ছাড়া তার কবিতার ভিতর দিয়ে সম সাময়িক বিষয়াবলীও উঠে এসেছে।

অর্থ্যাৎ কবির দৃষ্টিশক্তি শুধুমাত্র অর্ন্তমুখী নয় বর্হিমুখী বটে।

এই গ্রন্থের সকল কবিতাই যে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। তবে গ্রন্থের বেশ কিছু কবিতা পাঠক-সমালোচকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে মনে করি।

আমার বিবেচনায়, অপরূপ অবদান , উৎসব সবার ধর্ম যার যার , টবে বাগান, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, শুভ্রমন রশ, সীমানা, ছুঁয়ে দাও কবি হৃদয়, বসন্ত উৎসব প্রভৃতি কবিতা পাঠক মনে দোলা দেবে বলে আমি আশাবাদী।

মূলত তাঁর ৫২টি কবিতার মধ্যদিয়ে জীবন, সমাজ, রাজনীতি ও দেশ প্রেম নানা মাত্রায় চিত্রায়িত হয়েছে। এখানে পাঠকের ভালো লাগতে পারে এমন একটি কবিতার অংশ বিশেষ উপস্থাপন করা হলো;
গোলাপ জুঁই চামেলি পলাশ ওরা আমাকে ডেকে চুপি চুপি বলল
তোমার কবিতায় শহিদদের কথা লিখবে
তাই লিখলাম।… .. . .. …
আমি ঝরণা ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি
তাই গিয়েছিলাম ঝরণার পাশে
ওরা আমায় বজ্রকন্ঠে বললো
তোমার কবিতায় শেখ মুজিবের কথা লিখবে
তাই লিখলাম। (কবিতার শিরোনাম, বসন্ত উৎসব, পৃষ্টা-১৪)

এই কবিতার মধ্যদিয়ে কবির ভিতরে দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ প্রকাশ করার পাশাপাশি দেশ প্রেমিকদের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ পেয়েছে এবং তা সুন্দরভাবেই উচ্চারিত হয়েছে। কবিতাটি অসাধারণ এবং আবেগ মথিত। এরকম নান্দনিক উচ্চারিত আরো বেশ কিছু কবিতা রয়েছে যা পাঠকের ভালো লাগবে বোধ করি।
অমর একুশে গ্রন্থ মেলা২০১৬ সালে প্রকাশিত শূন্যতার মতো সুন্দর সময়ের ছায়া বইটি প্রকাশক বাসিয়া প্রকাশনী, সিলেট এবং বইটির মনকাড়া প্রচ্ছদ অংকন করেছেন, তামিম বিন ইমদাদ। তিনফর্মার এই বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১২০টাকা।
আমি কবির সাফল্য ও এই গ্রন্থের পাঠক প্রিয়তা কামনা করি এবং আশা করি কবি কবিতার মধ্যদিয়ে অনেক দূর
এগিয়ে যাবেন।

লেখকঃ কবি ও কথাসাহিত্যিক।

সাইদুর রহমান সাঈদের বই ‘লাল সবুজ ভালোবাসার সংগ্রাম’ এর মোড়ক উন্মোচন

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্টিত বইমেলায় ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জয়বাংলা পরিষদ সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে মোড়ক উন্মোচিত হলো সাইদুর রহমান সাঈদ এর দ্বিতীয় বই ‘লাল সবুজ ভালোবাসার সংগ্রাম’।
বাসিয়া প্রকাশনীর স্টলে অনুষ্টিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জয়বাংলা পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কবি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম পরিচালনায় বাসিয়া Bashia24.com এর স্টাফ রিপোর্টার ও মাসিক গোপলা সম্পাদক কবি মিজান মোহাম্মদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন Bashia24.com এর সম্পাদক ও বালাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার মোহাম্মদ নওয়াব আলী।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে ‘জয়বাংলা পরিষদ’ এর প্রতিষ্টাতা কবি- সাংবাদিক সাইদুর রহমান সাঈদ তাঁর লেখা বই ‘লাল সবুজ ভালোবাসার সংগ্রাম’ তোলে দেন কবি মিজান মোহাম্মদের হাতে। এ সময় সাথে ছিলেন কবি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন ,আব্দুল আলিম, সেবুল ইসলাম প্রমূখ।

কবি রাশিদা বেগম : সোনালি স্বপ্নের ডানা

Bashi-02রাশিদা বেগম। একজন উদীয়মান লেখিকা। লিখে যাচ্ছেন নীরবে নিভৃতে।
তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার নাঠৈ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মো. হাতেম আলী, মাতা মরহুমা চাঁদ বানু।
রাশিদা বেগম সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার রাগীব নগর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
তিনি জান্নাতুল ফেরদাউস, রাহাদুল ইসলাম রুহান, ফাতেমা ফেরদাউস হিরা সন্তানত্রয়ের জননী।
চাকরীজীবী কবি রাশিদা বেগম সীমাহীন ব্যস্ততার অবসরে কাগজ-কলম নিয়ে বসেন এবং লিখেন ছড়া-কবিতা-প্রবন্ধ ইত্যাদি। সৃজনশীলতার জোয়ারে তিনি সর্বদা ভাসমান। ‘সোনালি স্বপ্নের ডানা’ গ্রন্থটি তাঁর প্রথম প্রকাশনা।
তিনি সহজ, সরল, স্পষ্টবাদী সর্বোপরি একজন কোমলমতী সম্ভাবনাময়ী নারী।
তাঁর লেখায় দেশপ্রেম, ভাষাপ্রেম, রোমান্টিকতা প্রভৃতির উপস্থিতি ল্যণীয়। সচেতন পাঠকের নিকট ‘সোনালি স্বপ্নের ডানা’ গ্রন্থটি সমাদৃত হবে।

সোনালি স্বপ্নের ডানা; কবি রাশিদার স্বপ্ন শিল্পের রঙধনু
শিউল মনজুর
এক.
কবিতা কি? এই প্রশ্নের উত্তরে কবিতার যেমন নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই তেমনি কবিতা লেখারও নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি বা কৌশল নেই। তবে কবিতা লেখার দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যে রীতি আমরা প্রত্য করি তা হচ্ছে ছন্দরীতি। যদিও গত কয়েক দশক ধরে কাব্যচর্চায়রত কবিদের নিকট এই আদি বা প্রাচীন ধারাটি অনেকটাই উপেতি। তারপরেও কেউ কেউ এই প্রাচীনরীতি অনুসরণ করে কাব্য সাধনায় ব্রত রয়েছেন এবং সুন্দর সুন্দর কবিতা রচনা করে পাঠক হৃদয়ে রস আস্বাদন করে চলেছেন। আমাদের সাহিত্য অঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ কবি রাশিদা বেগম। তিনি এই ছন্দরীতি অনুসরণ করে দীর্ঘদিন ধরে নীরবে কাব্য চর্চা করছেন এবং নিরবেই কবিতার মধ্যদিয়ে পাঠক হৃদয়ে নিজস্ব একটি স্থান দখল করে নিতে সম হয়েছেন। আর এই গ্রন্থটি কবি রাশিদার স্বপ্ন শিল্পের রঙধনু।
দুই.
ছন্দরীতির স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তের ঢঙে লেখা ৪১টি ছড়া কবিতার পান্ডুলিপি সোনালি স্বপ্নের ডানা গত ২০১৫ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। সোনালি স্বপ্নের ডানা কবি রাশিদা বেগমের প্রথম ছড়া কবিতার বই। ৪৮ পৃষ্টা বা তিন ফর্মার এই বইটি কবি উৎসর্গ করেছেন নিজের মা-বাবাকে এবং বইটির বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা। সিলেটের প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনী বাসিয়া থেকে প্রকাশিত, ঝকঝকে মুদ্রিত ও সুভাষচন্দ্র নাথের আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের কল্যাণে প্রথম দর্শনেই বইটি হাতে তুলে নেবার জন্য মনোযোগ আকর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, হাতে নেবার পর একের পর এক পৃষ্ঠা অতিক্রম করে ভেতরে যেতে যেতে মনে হবে এই বইটির শব্দ চয়নে ও পঙক্তিমালা সৃষ্টিতে যেন একজন দ কারিগরের ছোঁয়া রয়েছে। ভাবনায় রয়েছে পরিশীলিত একজন নান্দনিক মনের অধিকারী মানুষের উচ্চারণ। বইটির অরে অরে উজ্জ্বল হয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে স্বদেশ, সমাজ ও মানব সম্প্রদায়কে ভালোবাসার সৌন্দর্যবোধ। অর্থ্যাৎ এই বোধ ভালোলাগার, এই বোধ প্রণোদনার, সর্বোপরি এই বোধ সার্বজনীন এবং কল্যাণের বার্তাবাহক।
তিন.
সোনালি স্বপ্নের ডানা গ্রন্থে যে ৪১টি ছড়া-কবিতা রয়েছে সেগুলিকে কয়েকটি পর্বে যেমন; স্বদেশ পর্ব, দানবীর রাগীব আলী পর্ব, প্রকৃতি পর্ব, প্রেম পর্ব, শিশু ও মা পর্ব এবং ব্যক্তি ও সমাজ পর্বে বিভক্ত করা যেতে পারে।
চার.
স্বদেশ বা নিজ মাতৃভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা অথবা আবেগ অনুভুতি চিরন্তন। এই চিরন্তন ভালোবাসায় মানুষ যেমন দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয় সেখানে কবিরাও যুগে যুগে দেশের জন্যে আত্মত্যাগ করেছেন, এমন নজীর রয়েছে একাধিক। আমাদের এই বাংলাদেশের জন্যও কবি সাহিত্যিকরা ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ দেশ রার বিভিন্ন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এমন কি একাত্তরের যুদ্ধে অনেকে প্রাণও দিয়েছেন। আমাদের আলোচ্য গ্রন্থের রচয়িতা দেশ মাত্তৃকার প্রতি একনিষ্ট ভালোবাসায় নিবেদিত। তাঁর বেশ কিছু ছড়া-কবিতায় দেশের প্রতি যে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আবেগ নিহিত রয়েছে তার বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে। স্বদেশকে নিয়ে তাঁর লেখা দুটি ছড়া-কবিতার অংশ বিশেষ এখানে উপস্থাপন করা হলো;
১। ভূবন ঘুরে দুচোখ মেলে
দেখছি একটি দেশ
সে যে আমার স্বúেœ ঘেরা
সোনার বাংলাদেশ।
…………………
মুক্ত আকাশ মুক্ত বাতাস
স্বাধীন একটি দেশ
সে যে আমার সোনার বাংলা
স্বাধীন বাংলাদেশ। (কবিতার শিরোনাম; স্বাধীন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা-৭)

২। বীর ছিল রফিক সালাম
মনে পড়ে সেই কথা
একুশ তো নয় শোকের স্মৃতি
স্বজন হারানো ব্যথা।

পিচডালা পথে রক্তের ধারা
করুণ স্মৃতির রেশ
ধরণীতে বুঝি একটাই আছে
ভাষা শহিদের দেশ। (কবিতার শিরোনাম; ভাষা শহিদের দেশ, পৃষ্ঠা-১৩)
সুখ ও দুঃখ নিয়ে কবির এমন মুগ্ধ উচ্চারণ আমাদেরকেও দেশ প্রেমে উজ্জ্বীবিত করে। শুধু তাই নয় ছন্দে পঙক্তিতে নতুন প্রজন্মকে দেশের আকাশ বাতাস মাটি এবং আমাদের মাতৃভাষার প্রতি যে দায়বদ্ধতা রয়েছে সে পাঠের মন্ত্রণাও তিনি দেন।
পাঁচ
প্রকৃতির প্রতি কবিদের অনুরাগের মাত্রা স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার মতই। সবুজের মায়াবি পাহাড়-বন, নদ-নদীর প্রবাহিত জীবন চিত্র, ঋতু বৈচিত্র্যের নানা রঙ যে কোন বয়সের যে কোন সময়ের কবি মনকে আকর্ষণ করে নানা মাত্রায় নানা ভাবনায়। সোনালি স্বপ্নের ডানা গ্রন্থের রচয়িতা কবি রাশিদা বেগমকেও এই স্বদেশের ঋতু বৈচিত্র্য ও নানা রঙের প্রকৃতি আকর্ষণ করে, তাঁকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে। প্রকৃতি প্রেমে আসক্ত হয়ে কবি রাশিদা বসন্ত, এখন লাগে ভালো, বাসিয়া, ছয়টি ঋতু, বাসিয়া নদীর তীরে প্রভৃতি শিরোনামের কবিতা লিখেছেন যা এই গ্রন্থের মাধ্যমে আমাদেরকে তিনি উপহার দিয়েছেন। প্রকৃতি বিষয়ক দুটি কবিতার অংশ বিশেষ এখানে উপস্থাপন করা হলো;
১। বাসিয়া নদীর তীরেতীরে
বাইও মাঝি ধীরে ধীরে
দেখবে সেথায় সারি সারি
নদীর পারে তারই বাড়ি
সবুজ গাছে ঘেরা
ইট পাথরে গড়া
সেই কুঠিরে বসত করে
শ্যাম মনচোরা। (কবিতার শিরোনাম; বাসিয়া নদীর তীরে, পৃষ্ঠা-২১)

২। শীত সকালে লেপ মুড়িয়ে
খেজুর গুড় আর মুড়ি নিয়ে
খেতে যদি বলো,
তখন লাগে ভালো।

বসন্তেরই সকাল বেলা
ছেলেরা সব করে খেলা
মাঠে মাঠে বসে মেলা
এমন যখন হলো
তখন লাগে ভালো। (কবিতার শিরোনাম: এখন লাগে ভালো, পৃষ্ঠা-২৯)
প্রকৃতি বিষয়ক কবিতার এরকম নান্দনিক উচ্চারণে কবিকে প্রকৃতির প্রেমিক হিসেবে সহজেই শনাক্ত করা যায়। বাসিয়ার অমিয় জল, বসন্তের পাতাঝরা মৃদু মিষ্টি হাওয়া কবিকে প্রকৃতির গভীরে নিয়ে যায়। তাইতো তিনি এতো সুন্দরভাবে প্রকৃতির কবিতা রচনা করতে পেরেছেন।
ছয়.
দানবীর রাগীব আলী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম রূপকার। এছাড়া এদেশের সামাজিক উন্নয়নেও রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান। যা চিরস্বরণযোগ্য। সিলেট পেরিয়ে দেশের আনাচে কানাচে তিনি প্রতিদিন স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, শিা ও শিল্প সাহিত্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য ধনী গরিব সকলের নিকটই তিনি সমান জনপ্রিয় একজন মানুষ। তিনি তুলনাহীন বা অতূলনীয় ব্যক্তিত্ব। তাই শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের মানুষেরা তাঁকে গল্পে কবিতায় নাটকে প্রবন্ধে নানাভাবে মূল্যায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই বরেণ্যব্যক্তিকে নিয়ে শতাধিক গ্রন্থও রচিত হয়েছে। তাঁকে নিয়ে গবেষণা করছে বিভিন্ন খ্যাতি সম্পন্ন শিা প্রতিষ্ঠান। আলোচ্য গ্রন্থেও কবি রাশিদা তাঁর পঙক্তির ছন্দ মাধুর্যের দোলাচালে এই মহান ব্যক্তিকে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করেছেন। তাঁকে নিয়ে লেখা দুটি ছড়া-কবিতার চুম্বক অংশ বিশেষ এখানে উপস্থাপন করা হলো;
১। রাগীব আলীর ব্রেনটা নিয়ে
ভাবতে যদি থাকি
নিশ্চয় অনেক কিছু
রয়ে যাবে বাকী,
তাঁর গড়া সৃষ্টি নিয়ে
ভাবতে যদি যাই
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া।
সীমা নাহি পাই। (কবিতার শিরোনাম; তুলনাহীন, পৃষ্ঠা-৪৫)

২। হে সৃষ্টির বীর
চিরদিন থাকো বেঁচে
এ ধরার মাঝে
উন্নত করে শির।

হে সৃষ্টির বীর
বারবার এ বাংলার বুকে
ফোটাও সুখের ফুল
গরিবের মুখে। (কবিতার শিরোনাম; সৃষ্টির বীর, পৃষ্ঠা-৩৮)
দানবীর রাগীব আলীকে নিবেদন করে তাঁর এসব ছড়া-কবিতাগুলো অসম্ভব সুন্দর। দানবীর রাগীব আলীর সুযোগ্য স্ত্রী মহিয়সী রাবেয়া খাতুনকে নিয়েও তিনি রচনা করেছেন সুন্দর পঙক্তিমালার ছড়া-কবিতা। যা পাঠক হৃদয়ে মধুর সুর ছড়িয়ে দেয়।
সাত.
সোনালি স্বপ্নের ডানা গ্রন্থে শিশু ও মাকে নিয়েও স্মরণযোগ্য ছড়া-কবিতা লেখা হয়েছে। ব্যক্তি ও সামাজিক কবিতাগুলোও মূল্যায়নের দাবী রাখে। খুকু মণি, হুলো ক্যাট, ময়না প্রভৃতি শিশু উপযোগী ছড়াগুলো শিশুদের মনে আনন্দ দেবে বলে মনে করি। আবার রূপায়ন, কবির মেলা, মুসাফির প্রভৃতি সামাজিক ছড়া-কবিতাগুলো আমাদেরকে অন্যরকম ভাবনায় ধাবিত করে।
আট.
কবি রাশিদা সহজ সরল এবং প্রতিনিয়ত আমরা যে শব্দ ব্যবহার করি সেগুলির সমন্বয়েই ছড়া-কবিতাগুলো তিনি নির্মাণ করেছেন। তবে তাঁর কিছু কিছু ছড়া কবিতায় তাল লয়ের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হয়। আবার কিছু কবিতায় সমকালীন কবিদের কবিতার সুর বা প্রভাবও রয়েছে। কাব্য সাধনার ভেতর দিয়ে এসব ঘাটতি ও প্রভাব মুক্ত হবেন কবি রাশিদা বেগম তা আমরা প্রত্যাশা করি। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, প্রথম কবিতার বইতে তিনি যে অসংখ্য সুন্দর ও সাবলীল কাব্যসৃষ্টি করেছেন, যা তাঁকে পাঠক হৃদয়ে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখবে। আমাদের ছড়া-কবিতার সাহিত্য ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। এই ধারার জনপ্রিয় কবিদের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। মধূসুদন. রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, সুকুমার, সুকান্ত প্রমূখ বিখ্যাত কবিদের থেকে শুরু করে কালিদাস, কামিনী, সত্যন্দ্রনাথ, বন্দে আলী মিয়া, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, আলমাহমুদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু গুণ, জয় গোস্বামীসহ এই সময়ের অসংখ্য কবি স্মরণযোগ্য ছড়া কবিতা লিখে পাঠক হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। সোনালি স্বপ্নের ডানায় ভর করে কবি রাশিদা বেগম তাঁর পরবর্তী গ্রন্থে আরো চমকপ্রদ খ্যাতিমান কবিদের মতো ছড়া-কবিতা উপহার দিয়ে পাঠক হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেবেন। আমরা সে আশাই করি। আরো আশা করি তাঁর অন্তর দৃষ্টি স্বদেশের সীমা পেরিয়ে পৌঁছে যাবে বিশ্ব বারান্দায়। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখব কবি রাশিদা বেগমের অনন্য কাব্য কীর্তি।

৪২টি লেখা চুরির প্রতিবাদ জানিয়েছেন গীতিকার খালেদ মিয়া

B-06বহুগ্রন্থ প্রণেতা গীতিকার খালেদ মিয়া এক প্রতিবাদ লিখিতে তার ৪২টি লেখা চুরির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন মে ২০১৫ সালে সিলেটের একটি প্রকাশনী থেকে ‘বিশ্বনাথের শতফুল’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত
হয়েছে। উক্ত গ্রন্থে ফেব্র“য়ারি ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘বিশ্বনাথের একশ বিশজন’ গ্রন্থ থেকে ৪২জনের জীবনী হুবহু মুদ্রিত হয়েছে। সিলেটের খ্যাতিমান বাসিয়া প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত খালেদ মিয়া সম্পাদিত ‘বিশ্বনাথের একশ বিশজন’ গ্রন্থের আইএসবিএন নং ৯৭৮-৯৮৪-৮৭২০-১৫৮। ‘বিশ্বনাথের একশ বিশজন’ গ্রন্থের চুরিকৃত লেখাগুলো পৃষ্ঠা ও শিরোনাম হলো ১২৯ পৃষ্ঠার মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী, ১৩ পৃষ্ঠার মো. মঈন উদ্দিন, ১৫ পৃষ্ঠার মোহাম্মদ মহিউস সুন্নাহ, ১৯ পৃষ্ঠার তাছাওয়ার রাজা, ৪১ পৃষ্ঠার নাঈম আশফাক চৌধুরী, ৪২ পৃষ্ঠার মেজর
জিয়াউল হক খালেদ, ৫৭ মো. আবদুল মালিক, ৫২ পৃষ্ঠার মুর্শেদা জামান, ৫০ পৃষ্ঠার মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ, ৬০ পৃষ্ঠার রোকেয়া খাতুন রুবী, ৬৯ পৃষ্ঠার ড. অরূপ রতন চৌধুরী, ৭১ পৃষ্ঠার শিশির চক্রবর্তী, ১৫৪ পৃষ্ঠার মো. মকদ্দুছ আলী, ৬৩ পৃষ্ঠার ডা. সামন্ত সেন, ৬৫ পৃষ্ঠার অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, ৭৪ পৃষ্ঠার ডা. মো. নুরুল আফসার বদরুল, ৭০ পৃষ্ঠার ডা. মো. জাহিরুল ইসলাম, ১৪৬ পৃষ্ঠার মো. আহমদ আলী, ৮৭ পৃষ্ঠার ড. মো. রইছ উদ্দিন, ৮৪ পৃষ্ঠার ড. মধুশ্রী ভদ্র, ৯১ পৃষ্ঠার মো. সিরাজুল হক, ৯৩ পৃষ্ঠার মো. হাসমত উল্লাহ, ১৩২ পৃষ্ঠার ড. শাহদীন মালিক, ১৩৩ পৃষ্ঠার এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ২৯ পৃষ্ঠার দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী, ২৩ পৃষ্ঠার এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান, ২৫ পৃষ্ঠার এম ইলিয়াস আলী, ৩১ পৃষ্ঠার আনম শফিকুল হক, ১১৭ পৃষ্ঠার রোশনারা আলী, ১২০ পৃষ্ঠার ড. মুজিবুর রহমান, ১২৩ মো. খালিছুর রহমান, ১১২ পৃষ্ঠার মো. তজমূল আলী, ৯৮ পৃষ্ঠার হাজী আবদুল খালিক, ৯৭ পৃষ্ঠার মো. নেছার আহমদ, ৯৯ পৃষ্ঠার তানভির আহমদ, ১১০ শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী ১০১ পৃষ্ঠার মো. নূরে আলম, ১০৪ পৃষ্ঠার মো. আবদুল রশীদ, ১৩৭ পৃষ্ঠার শাহ মো. মোসাহিদ আলী, ১৩৮ পৃষ্ঠার একেএম শমিউল আলম, ১৩৯ পৃষ্ঠার শাহ ফরিদ আহমদ, ১৬০ পৃষ্ঠার মুকতাবিস উন নূর উল্লেখিত গণমান্য ব্যক্তিদের জীবনী উক্ত প্রকাশনী থেকে ‘বিশ্বনাথের শতফুল’ নামক গ্রন্থে অবিকল প্রকাশিত হয়েছে এবং উক্ত গ্রন্থে যে আইএসবিএন নম্বার দেয়া হয়েছে তা ঢাকার খান প্রকাশনীর আইএসবিএন নম্বার। যা দেখে আমার মনে অসীম ােভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ন্যাক্কারজনক কাজের গভীর ােভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। লেখালেখি একটি সৃজনশীল মাধ্যম। এ মাধ্যমে এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি। সাথে সাথে এ ব্যাপারে আমি আইনী ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে বাধ্য হচ্ছি।

নিউ ইয়র্কে শেষ হলো বাংলা উৎসব

NY-poet-peeary-1রবাসে বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আয়োজিত তিনদিনের আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা শেষ হয়েছে।

স্থানীয় সময় ২২ মে থেকে শুরু হয়ে ২৪ মে রাতে এ উৎসব ও বইমেলা শেষ হয়।

উদ্ধোধনী দিনে বাংলা উৎসবের পক্ষ থেকে মার্কিন লেখক ও চলচ্চিত্রকার লেয়ার লেভিনকে এবং সমাপনীতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে সম্মাননা জানানো হয়।

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত বইমেলার এটি ছিল দুই যুগ পূর্তি উৎসব।

এবারই প্রথম মেলা চলাকালীন সময়কে নিউ ইয়র্কের গভর্নর এন্ড্র্যু ক্যুমো ‘বাংলা উৎসব সপ্তাহ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানান মেলার উদ্যোক্তা মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রধান বিশ্বজিৎ সাহা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একই সঙ্গে নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো উৎসব উপলক্ষে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বাঙালির এ উৎসব প্রবাসের মূল ধারাতেও বিস্তৃত হয়েছে বলা যায়।”

বই মেলায় বাংলাদেশের ১৬টি প্রকাশনী অংশ নেওয়ার পাশাপাশি উৎসবে বিভিন্ন পর্বের আলোচনায় বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ভিয়েনা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কবি-লেখক, সাংবাদিক-শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ-সমাজকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা অংশ নেন।

এছাড়া উৎসবের বিভিন্ন পর্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার সংকল্পে কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। সর্বস্তরের প্রবাসীর বিপুল সমাগম ঘটায় এবার সর্বাধিক সংখ্যক বইও বিক্রি হয়েছে বলে জানান উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সাহা।

শেষদিনে ‘মুখোমুখি’ নামে সমাপনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতীর পরিচালক রামকুমার মুখোপাধ্যায় একই মঞ্চে দর্শক শ্রোতার মুখোমুখি হন।

যুক্তরাষ্ট্রে বড় হওয়া বাংলাদেশি প্রজন্মের ব্যাপক অংশগ্রহণকে এবারের ‘বিশেষ দিক’ উল্লেখ করে বিশ্বজিৎ বলেন, “তারা বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের এগিয়ে চলার ঘটনাবলী গভীর মনোযোগের সঙ্গে শুনেছেন। বিভিন্ন আলোচনায় কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করেছেন।”

এছাড়া উৎসবে ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বৈধভাবে অর্থ প্রেরণ’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বীরুপাক্ষ পাল এবং নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান।

জুনে বাংলাদেশ-ভারত বইমেলা

ঢাকা, ২১ এপ্রিল- চলতি বছরের জুন মাসে শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত বইমেলা। জুনের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মেলায় দুই দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। মেলাটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে মেলাকে সফল করতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানকে আহ্বায়ক ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সচিব অসীম কুমার দে’কে সদস্য সচিব করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
মঙ্গলবার সকালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক অসীম সাহা, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ওসমান গনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বই জ্ঞানের বাহন। একটি সৃজনশীল ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম। এ লক্ষ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সহযোগিতায় বইমেলা আয়োজনসহ নানবিধ কার্যক্রম বাস্তাবায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ বছর রংপুর, বরিশাল ও কুমিল্লা বিভাগীয় বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামী ২৫ এপ্রিল যশোরে খুলনা বিভাগীয় বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরগুলোতেও বইমেলার আয়োজন করা হবে।’
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের অকৃত্রিম ও পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জুনে অনুষ্ঠেয় এ বইমেলা দেশ দুটির মধ্যে সংস্কৃতি বিনময়ের ক্ষেত্রকে আরো বিস্তৃত করবে এবং এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে ‘উদ্ভট বই উৎসব’র উদ্বোধন

স্বাধীনতার মাস মার্চ উপলক্ষে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে উদ্বোধন হয়েছে তিনদিনব্যাপী বই মেলা ‘উদ্ভট বই উৎসব’। শনিবার সকালে বই মেলার উদ্বোধন করেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন। মেলার আয়োজন করেছে উদ্ভটডটকম (udvot.com) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন মেলার স্টল ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থীদের বই পড়া মাধ্যমে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে উৎসাহ প্রদান করেন।

মেলায় দেশের খ্যাতনামা ৮টি প্রকাশনী সংস্থা অংশ নিয়েছে। এগুলো হলো- অন্বেষা, রাত্রি, অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, পার্ল, বাতিঘর, নওরোজ কিতাবিস্তান ও ঘাস প্রকাশনী।

মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মেলা চলাকালীন সময়ে যে কোনো বই ২৫ ভাগ ছাড়ে কেনার সুযোগ থাকছে।

আরকুম শাহ

আনুমানিক ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে সুফি সাধক আরকুম শাহ দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে যে ক’জন প্রথিতযশা মরমি কবি আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও ধ্যানের সঙ্গে মরমি সংগীত রচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে আরকুম শাহ অন্যতম। তিনি আধ্যাত্মিক জীবনের প্রথম দিগ্দর্শন গ্রহণ করেন দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের ছনখাই (লতিফনগর) নিবাসী পীর হজরত সুফি শাহ আব্দুল লতিফের কাছে। তিনি নিয়মিত পাঠ অভ্যাস, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা ও কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আরকুম শাহ লিখে গেছেন অজস্র তাত্ত্বিক ও ভক্তিমূলক গান। কালজয়ী এ গানগুলো আকাশবাণীর কয়েকটি কেন্দ্রসহ বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে প্রচার হয়ে আসছে। তবে সংরক্ষণের অভাবে তাঁর অনেক গান হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের আঞ্চলিক সংস্কৃতির পরিমণ্ডল থেকে। তাঁর প্রকাশিত কবিতার বই ‘কবিনামা’ ও গানের বই ‘হকিকতে সিতারা’ ব্যাপক পাঠকপ্রিয়। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ৫ চৈত্র আরকুম শাহ মৃত্যুবরণ করেন। লোকমুখে প্রচারিত আরকুম শাহ’র কয়েকটি গান নিম্নে তুলে দেওয়া হল-
*চাইর চিজে পিঞ্জিরা বানাই/ মোরে কইলায় বন্দ রে বন্ধু নির্ধনিয়ার ধন/ কেমনে পাইমুরে কালা তোর দরশন।। *সমুদ্রের জল উঠে বাতাসের জোরে/ আবর হইয়া উড়ে পবনের ভরে, জমিনে পড়িয়া শেষে সমুদ্রেতে যায়/ জাতেতে মিশিয়া জাতে তরঙ্গ খেলায়।। তুমি আমি আমি তুমি জানিয়াছি মনে/ বিচিতে জন্মিয়া গাছ বিচি ধরে কেনে? এক হইতে দুই হইল প্রেমেরই কারণ/ সে অবধি আশিকের মন করে উচাটন।। *পরিন্দা জানোয়ার যদি কোন এক কালে/ জাতি ছাড়া বন্ধ হয় শিকারির জালে, কিরূপে জিন্দেগি কাটে বন্ধখানায় তার, মাসুক হইয়া কর আশিকের বিচার।। *পাগল আরকুমে কয় মাসুক বানিয়া-/ দুয়াঙ্গ পাতাইয়া থইছে উলুরে গাঁথিয়া, আহার করিতে যদি না যাইত মন- না লাগিত প্রেম লেঠা না হইত মরণ।।
*আমরা প্রেমবাজারে থাকি, আমরা প্রেমবাজারে থাকি/ আশিক ছাড়া পুরুষ নারী হাবিয়া দোজখি।। এশ্কে আল্লাহ এশ্কে রসুল এশ্কে আদম খাকি। আদম হইতে হাওয়া পয়দা প্রেম খেলিবার লাগি।। জলিখা এশ্কেতে পাগল ইউসুফের লাগি/ শিরির জন্য ফরহাদ মইল, খসরু হইল পাতকী।। কুমারে দেখিয়া পাগল কন্যা চন্দ্রমুখি/ সুড়ঙ্গ পথে বাহির হয়ে বেশ ধরিল যোগী।। লায়লি আর মজনু পাগল একে অপরের লাগি/ জহুরা কান্দিয়া ফিরে বারামে না দেখি।। আরকুম বলে আশিক জনে মাসুক পাইলে সুখি/ মনসুর সুল্লিতে চড়ে আনাল হক না ডাকি।।
*সোনার পিঞ্জিরা আমার করিয়া গেলায় খালিরে/ হায়রে আমার যতনের পাখি, সুয়ারে একবার পিনজিরায় আও দেখি।। আর আজ্ঞামতে এই দেহাতে করিলায় পরবাস/ এখন মোরে ছাড়িয়া গেলায় করিয়া নৈরাশ।। যেই ঘরে থাকিয়া তুমি সদায় কৈলায় খেলা, সেই কোঠার মাঝে আমার লাগিয়া গেল তালা।। আর তুমি আমি একই ঘরেছিলাম এতদিন- আজি হতে ভিন্ন ভিন্ন পিঞ্জিরা মলিন।। পাগল আরকুমে কয় মিছা ঘরবাড়ি/ সুয়া পাখি উড়িয়া গেলে পিঞ্জিরা রয় পড়ি। উল্লিখিত গানগুলো আজও সিলেটসহ সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। আরকুম শাহকে নিয়ে শুধু দেশে নয় চর্চা করা হচ্ছে বহিঃর্বিশ্বের নানা দেশে। প্রচারিত হচ্ছে তাঁর কালজয়ী গানগুলো প্রতিটি দেশের প্রচার মাধ্যমে। আরকুম শাহ এখন কিন্তু শুধু সিলেটের নয় এখন সারা বিশ্বের সংগীত প্রিয় মানুষের কণ্ঠস্বর।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আয়নায় দক্ষিণ সুরমা ফকির ইলিয়াস

27-7-3আমার একটা অহংকার আছে। তা হলো আমি সিলেটে জন্মেছি। জন্মেছি হজরত
শাহলালাল (র.) এঁর মাটিতে। দক্ষিণ সুরমা এলাকা একসময় সিলেট সদরের অধীন ছিল। সময়ের বিবর্তনে নতুন উপজেলা হয়েছে। সুরমা নদী বিভক্ত করেছে উত্তর সিলেট-দক্ষিণ সিলেট। আর সুরমার দক্ষিণ জনপদেই গড়ে উঠেছে এই উপজেলা।
বলে রাখি, মোহাম্মদ নওয়াব আলী আমার অনুজপ্রতিম। আমরা বেড়ে উঠেছি একই এলাকায়। তাই তার সাহিত্য-সংস্কৃতি ভাবনা ও কর্মযজ্ঞ আমার খুব পরিচিত।
‘দক্ষিণ সুরমার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বিষয়ে একটি বই করতে আগ্রহী- তা আমি জেনেছিলাম মোহাম্মদ নওয়াব আলীর কাছ থেকে কয়েকবছর আগেই।
মোহাম্মদ নওয়াব আলী ‘মাসিক বাসিয়া’ সম্পাদক। বাসিয়া নদী বয়ে গেছে আমার বাড়ীর পূর্ব দিয়েই। আমি যেটুকু লেখালেখি করি তার ঋণ ঐ বাসিয়া নদীর কাছেই।
ঐ বাসিয়া নদীই আমাকে কবি হতে শিখিয়েছে। শত শত বাউল গান লিখতে সাথী হয়েছে।
মোহাম্মদ নওয়াব আলী যে কাজটি করেছেন- তা শিকড়ের সন্ধান। ‘দ্যা রুটস’ এর লেখক এ্যলেক্স হ্যালি’র কথা আমরা জানি। না- শিকড়ের সন্ধান ছাড়া কোনো মানুষই তার আত্মানুসন্ধান করতে পারে না।
৪৮০ পৃষ্টার ‘দক্ষিণ সুরমার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বইটি সম্পাদনা করে এই তরুণ সম্পাদক সেই গুরু দায়িত্বটি পালন করেছেন।27-7-4
মোট ১৫ টি অধ্যায় রয়েছে এই দলিলগ্রন্থটিতে। গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা গঠনের ইতিবৃত্ত, ঐতিহাসিক ও পরিসংখ্যানসহ ভৌগলিক বিবরণ। উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ৩ (২) ধারা বলে ২১ মার্চ, ২০০৫ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গঠিত হয়। সিলেট সদর উপজেলার সতেরোটি ইউনিয়ন থেকে নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে উক্ত উপজেলা গঠিত হয়। পরে নতুন ইউনিয়ন গঠনের প্রজ্ঞাপন অনুসারে কামালবাজার ইউনিয়ন উক্ত উপজেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। ফলে মোল্লারগাঁও, বরইকান্দি, তেতলী, কুচাই, সিলাম, লালাবাজার, জালালপুর, মোগলাবাজার, দাউদপুর ও কামালবাজার এই দশটি ইউনিয়ন নিয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গঠিত। মোগলাবাজার ইউনিয়নের নৈখাই নামক স্থানে উপজেলার সদরদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত উপজেলায় দক্ষিণ সুরমা ও মোগলাবাজার নামে দুটি থানা (পুলিশ স্টেশন) এবং দক্ষিণ সুরমা থানার  অধীনে সিটি কর্পোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে। এই অধ্যায়ে উপজেলার মানচিত্র, প্রশাসনিক ভবনের ছবি, বিভিন্ন পরিসংখ্যান, বিভিন্ন ইউনিয়নের মানচিত্রসহ বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং তিনটি ওয়ার্ডের বিশদ বিবরণ ও তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও নামের তালিকা ও সময়কাল প্রদত্ত হয়েছে। এক কথায়, ইউনিয়নসমূহ ও ওয়ার্ডসহ উপজেলার সম্যক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে দশটি ইউনিয়ন ও তিনটি সিটি ওয়ার্ডের মানচিত্রসহ পূর্ণ পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নওয়ারী প্রদত্ত পরিসংখ্যান ও ২৫, ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ডের পরিসংখ্যানসহ পূর্ণ পরিচিতি পাঠককে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবে।
তৃতীয় অধ্যায়ে উপজেলার ইউনিয়ন ভিত্তিক গ্রাম ও মৌজার তালিকা, নদী, খালবিল, জলমহাল, টিলা, হাটবাজার সমূহ, সিটি ওয়ার্ড সমূহের গ্রামের তালিকা প্রদত্ত হয়েছে। সুরমা, বাসিয়া ও বড়ভাগা- উপজেলার এই তিনটি নদীর উৎপত্তি ও অবস্থান সম্পর্কে এই অধ্যায়ে সুন্দর তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। এই উপজেলার ত্রিশটি বিল ও দশটি জলমহালের তালিকাও উল্লেখিত আছে।
চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক মসজিদ, মন্দির, গির্জার তালিকা, মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকার ভূমিকা ও গণকবর সম্পর্কিত তথ্য।
পঞ্চম অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থানের বর্ণনা রয়েছে। দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। প্রথমে শহিদ বুদ্ধিজীবী ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা একুশজনের তালিকা ও তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য তথা মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, যা মর্মান্তিক ও স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবজনক শাহাদতের স্বাক্ষর বহন করে। এই একুশজনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. আবদুল মুক্তাদিরের নামও রয়েছে।
২৫ মার্চ, ১৯৭১ রাত্রে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে। তিনি দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। অন্যান্য বিশজন শহিদ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করে শাহাদত বরণ করেন। গ্রন্থের লেখক তাঁদের সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ করে গ্রন্থিত করার কারণে গ্রন্থের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অধ্যায়ে ইউনিয়নওয়ারী ও তিন ওয়ার্ডের ২০৭ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রদত্ত হয়েছে। মোল্লারগাঁও ইউনিয়ন ১৫ জন, বরইকান্দি ইউনিয়ন ১৭ জন, তেতলী ইউনিয়নে ১৮ জন, কুচাই ইউনিয়নে ২৭ জন, সিলাম ইউনিয়নে ৫২ জন, মোগলাবাজার ইউনিয়নে ৪১ জন, দাউদপুর ইউনিয়নে ১৬ জন, কামালবাজার ইউনিয়নে ১০ জন ও তিনটি ওয়ার্ডে ১১ জন। এখানে ২০৭জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা গেজেট ও মুক্তিবার্তা নম্বরসহ গ্রন্থিত হয়েছে।
তাছাড়া গ্রন্থিত হয়েছে শিক্ষক, কবি লেখক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য। এ বৃত্তান্তে প্রবীণ থেকে বর্তমান প্রজন্মের পরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্যিকদের নাম রয়েছে। তাছাড়া এই ষষ্ঠ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার সাংবাদিকতা, রাজনীতি ও সমাজসেবা, ক্রীড়া, আইন বিচার প্রশাসন, কৃষি শিল্প বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, উচ্চ পদে কর্মরত, চিকিৎসা ও প্রবাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত পরিচয় গ্রন্থিত হয়েছে।
সপ্তম অধ্যায়ে বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের পরিচয় ও কৃতির বিবরণ রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ।
গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে দক্ষিণ সুরমার একুশটি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিলেট বিভাগীয় সদর দপ্তর, ডিআইজি অফিস, সিলেট শিক্ষাবোর্ড, সিলেট বিসিক শিল্পনগরী, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, দক্ষিণ সুরমা মেট্রোপলিটন থানা, মোগলাবাজার মেট্রোপলিটন থানা, সিলেট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ ইত্যাদি।
নবম অধ্যায়ে রয়েছে দশটি শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দশম অধ্যায়ে পনেরোটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসসহ অবস্থান ও কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বয়ান রয়েছে গ্রন্থটিতে।
গ্রন্থের একাদশ অধ্যায়ে রয়েছে ৩৩টি মাদ্রাসার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ভৌগলিক অবস্থান। ফাজিল মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসার অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী ধর্মীয় ও কার্যকরী শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
দ্বাদশ অধ্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইউনিয়নওয়ারী সংখ্যা, অবস্থান ও পরিচিতি। দক্ষিণ সুরমায় ৮৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯টি রেজিস্টার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২টি রেজিস্টার্ড (কমিউনিটি) প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্তসহ পরিচালনা কমিটির নামধামসহ বিদ্যালয় সমূহের পরিচিতি পাঠক সমীপে তুলে ধরা হয়েছে।
ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ৪টি সংসদ নির্বাচন, একটি উপজেলা নির্বাচন ও ২টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এর বিশদ পরিসংখ্যান ও বিবরণ রয়েছে। সংসদ নির্বাচনগুলো ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত, উপজেলা নির্বাচন ২০০৯ সালে ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০০৩ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কাসহ সকল প্রতিযোগির প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাসহ তালিকা প্রদত্ত হয়েছে।
চতুর্দশ অধ্যায়ে দক্ষিণ সুরমার ওলি, আউলিয়া, ফকির দরবেশ, হযরত শাহজালালের সফর সঙ্গীদের সচিত্র মাজার পরিচিতি ও অন্যান্য দরবেশদের সচিত্র  মাজার পরিচিতি গ্রন্থিত হয়েছে। এই অধ্যায়ে হযরত শাহজালালের ৩২২জন সঙ্গীর তালিকা রয়েছে এবং দক্ষিণ সুরমায় এরূপ ২২ জন আউলিয়ার মাজার রয়েছে। এই মাজারগুলির প্রতিবেদন ও চিত্র রয়েছে গ্রন্থটিতে। তাছাড়া ওলি আউলিয়া বুজর্গদের তালিকায় আরো ৬৮ জনের নাম ও সচিত্র মাজার রয়েছে।
পঞ্চদশ অধ্যায়ে বিবিধ বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে বেসরকারি বৃত্তি পরীক্ষা সমূহ রেজি. সমাজকল্যাণ সমিতি, বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ব্যাংক ও কমিউনিটি সেন্টারের বিবরণ ও তথ্য সংগ্রহে সহায়তাকারী ও সহায়ক গ্রন্থের বিবরণ।
এই গ্রন্থটি লিখতে কিংবা সম্পাদনা করতে সম্পাদককে যারা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, তাদের নাম এবং সহায়ক গ্রন্থগুলোর তালিকা যুক্ত হয়েছে বইয়ের শেষে।
সুদূর নিউইয়র্কে অনেক মমতায় বইটি আমার কাছে পাঠিয়েছেন সম্পাদক মোহাম্মদ নওয়াব আলী। আমি যখন বইটিতে মনোনিবেশ করেছি, তখনই আমার সামনে ভেসে উঠেছে দক্ষিণ সুরমার পথ-ঘাট, নদী-নালা, ওলী-আউলিয়ার মাজার। আমার কানে বেজে গেছে ফকির শাহ আব্দুল লতিফ কিংবা ফকির আরকুম শাহ এঁর গান।
বলতে পারি, একটি কঠিন কাজ সম্পন্ন করেছেন এই নিষ্ঠাবান সম্পাদক।
বলা দরকার, এই বইটি কারো কারো মতে একটি সম্পূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে। ভুলবশতঃ কিছু তথ্য বাদ পড়তেই পারে। তবে এই বিশাল গ্রন্থটি আগামী দিনের গবেষকদের জন্য একটি মাইলস্টোন হিসেবে বিবেচিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
চাররঙা কালারে চমৎকার প্রচ্ছদ করেছেন কৃতি চিত্রশিল্পী ধ্রুব এষ। প্রকাশক- বাসিয়া প্রকাশনীর পক্ষে মকসুদ আহমদ বাসিত। অঙ্গসজ্জা- মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান ও এম ইসলাম। অলোকচিত্র- মো. রিয়াজউদ্দিন ও আজাদুর রহমান সুমন।
মূল্য রাখা হয়েছে- পাঁচশত টাকা। বিলাতে দশ পাউন্ড।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে- সম্পাদকের দাদা মোহাম্মদ কাজিম, পিতা মো. পীর বকস, মাতা আফলাতুন নেসা, চাচা নূর বকস গেদু মিয়া কে। যারা সম্পাদককে দিয়েছেন শিকড়ের সন্ধান।
অফসেট পেপারে ছাপা গ্রন্থটি যে কোনো পাঠকের মন ও সংগ্রাহকের গ্রন্থালয়কে আলোকিত করবে। এটা দুঃখের কথা, সরকারি পর্যায়েও ইতিহাস-ঐতিহ্য ভিত্তিক গ্রন্থগুলো কিনে নিয়ে সরকারি লাইব্রেরীগুলোকে সমৃদ্ধ করতে অনেক কার্পণ্য করা হয়।
এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। বই মানুষকে ঝলমলে জীবনের সন্ধান দেয়। আমি চাইবো, দক্ষিণ সুরমা এলাকা সহ গোটা বাংলাদেশের চিত্তবান-বিত্তবান মানুষেরা এই বইটি কিনে তাদের প্রিয়জনকে উপহার দেবেন। নিজ সংগ্রহে রাখবেন।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি ও প্রাবন্ধিক

Developed by: