বিভাগ: সাহিত্য-সংস্কৃতি

স্বপ্নে টুঙ্গীপাড়া :: মওদুদ আহমেদ আকাশ

000000গভীর রাত চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকার, ঘুমের ঘোরে দেখছি,
আমি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে।
ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।
মনে হচ্ছিলো,
গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।
যেখানে শুয়ে আছেন জাতির পিতা।
সমাধি প্রাঙ্গনে পা ফেলতেই বুকের ভিতর বোবাকান্না
আর অসম্ভব রকমের অভিমান অনুভুতি কাজ করছিলো।
কেন তিনি চলে গেলেন আর এখানে একা রয়ে গেলেন এই ভেবে।
পানি ছাড়া জীবনের যেমন কোন মানে নেই।
তেমনি বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা কঠিন।
সমাধিস্থল থেকে যখন ফিরছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল
পিছন থেকে কেউ ডাকছিলেন।
ফিরে তাকালাম,
দেখলাম সমাধিস্থল।
মনে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধু বলছেন,
“আমি শুয়ে আছি টুঙ্গীপাড়ায়।
কিন্ত আমার স্বপ্ন সারা বাংলাদেশ ছড়িয়ে।
আমিতো এখানে নেই,
আমি সারা বাংলার বুকে।
যাও, বিনির্মাণ করো আমার স্বপ্ন
যাকে করেছি আমি যতœ।
তোমাদের হাতেই আমার এই দেশ
তোমরাই বাংলাদেশ।
আমি ছিলাম, আমি থাকব এই বাংলার প্রান্তরে
এই বাংলাদেশকে রেখো খুব যতœ করে”।

(লেখক : সিলেট জেলা ছাত্রলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক)

‘প্রবাসী কবিদের নির্বাচিত প্রেমের কবিতা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত

ব্রিটেন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাঙালি কবিদের নির্বাচিত কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কবিতাগ্রন্থ ‘প্রবাসী কবিদের নির্বাচিত প্রেমের কবিতা’। গত ১৬ মে মঙ্গলবার হোয়াইট চ্যাপেল রোডের মক্কাগ্রীল রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হলো গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠান। এম মোসাইদ খান ও মোহাম্মদ নওয়াব আলী সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে সিলেটের বাসিয়া প্রকাশনী থেকে। কবি ও কাব্যমোদিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানটিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি আতাউর রহমান মিলাদ, কবি ময়নূর রহমান বাবুল, কবি আহমেদ ময়েজ, কবি মজিবুল হক মণি, কবি আবু মকসুদ, কবি কাজল রশীদ, কবি আসমা মতিন, কবি সাগর রহমান, কবি আনিমদিম জাকারিয়া, কবি ইকবাল বাহার সুহেল, কবি জামিল সুলতান, কবি এ কে এম আব্দুল্লাহ, কবি নুরুস সুফিয়ান চৌধুরী, কবি মুহাম্মদ মুহিদ, কবি মোহাম্মদ ইকবাল, কবি শামীম আহমদ, কবি এম মোসাইদ খান, কবি মামুনুল হক সাজু এবং কবি শাহ সোহেল আমিন প্রমুখ। অভ্যাগতদের স্বাগত বক্তৃতা ছাড়াও কবিরা তাদের প্রকাশিত কাব্য পাঠ করে শোনান। অনুষ্ঠান জুড়েই উপস্থিত অতিথিগণ বাংলা কবিতার বিভিন্ন বিষয় ও প্রবাসী কবিদের কাব্যচর্চা নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করেন।
কবি আহমেদ ময়েজ তার স্বাগত বক্তৃতায় গ্রন্থটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বলেন, এ গ্রন্থের সম্পাদকদ্বয় শুধু কবিতা নয় বরং কবিদেরকেও যেভাবে উপস্থাপিত করেছেন, তা বিশেষ ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। কবিদের রচনা ও তাদের পরিচিত সহ প্রকাশ করার ব্যাপারে অনেক সংকলন গ্রন্থেই দৈন্যতা দেখা যায়, যা এ সম্পাদকদ্বয় করেননি। এটা একটা বিশেষ কৃতিত্বের দাবীদার।
কবি আতাউর রহমান মিলাদ কাব্যগ্রন্থটির বিভিন্ন প্রশংসনীয় দিক উল্লেখ করে বলেন, প্রকাশিত গ্রন্থটি প্রবাসী কবিদের কাব্য ক্ষমতার একটা অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি এ ধরণের আরো বেশি বেশি কাজ হবার দরকার বলে মন্তব্য করেন।
কবি মজিবুল হক মণি তার বক্তৃতায় গ্রন্থটির সম্পাদকদ্বয়কে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, এতগুলো চমৎকার কবিতাকে এক সংকলনের মধ্যে এনে, চমৎকারভাবে উপস্থাপন করার যে কষ্ট ও পরিশ্রম এ সম্পাদকরা স্বীকার করেছেন, তা একটা অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে।
কবি আবু মকসুদ বলেন, এ গ্রন্থটি প্রবাসী কবিদের কাব্যচর্চার ধারাক্রমে একটি অনন্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে। একই সংগে তিনি উল্লেখ করেন, প্রবাসে, বিশেষত: বিলেতে সাহিত্য চর্চার যে ধারা অব্যাহত আছে, তা যে দিন দিন বেগবান হচ্ছে, এ ধরনের সংকলন তারই একটা উদাহরণ।
এছাড়াও অন্যান্য সুধীজন গ্রন্থটির ব্যাপারে বিশেষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বক্তৃতা দেন। কাব্যগ্রন্থটির সম্পাদক এম মোসাইদ খান তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত অতিথিদের প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি সংকলনের সকল কবিদের প্রতি তাদের সহযোগীতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সংগে তিনি গ্রন্থটির অন্য সম্পাদক মোহাম্মদ নওয়াব আলীর বিশেষ অবদানের কথা উল্লেখ করে তাঁর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।

শুভ জন্মদিন কবি ফকির ইলিয়াস

fb_img_1482914284357আজ ২৮ ডিসেম্বর বুধবার এই সময়ের বিশিষ্ট কবি প্রাবন্ধিক, গল্পকার, গ্রন্থসমালোচক, সাংবাদিক ফকির ইলিয়াস এর জন্মদিন। ১৯৬২ সালের এই দিনে তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রবাসে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি- লালন ও চর্চায় তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা চৌদ্দটি। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-`অবরুদ্ধ বসন্তের কোরাস`, `বৃত্তের ব্যবচ্ছেদ`, `গুহার দরিয়া থেকে ভাসে সূর্যমেঘ`, `ছায়াদীর্ঘ সমুদ্রের গ্রাম`, `গৃহীত গ্রাফগদ্য`, `অনির্বাচিত কবিতা`। এছাড়াও `কবিতার বিভাসূত্র` (প্রবন্ধ সংকলন), `চৈতন্যের চাষকথা` (গল্প সংকলন), `অনন্ত আত্মার গান` (গীতি সংকলন) এর জন্য তিনি নন্দিত হয়েছেন পাঠক মহলে।
২০১৬ সালে বেরিয়েছে তার সর্বশেষ প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সাহিত্যের শিল্পঋণ’। আসছে বইমেলা-২০১৭ তে তার তিনটি গ্রন্থ প্রকাশের কথা রয়েছে।

তার লেখা নিয়মিত ছাপা হচ্ছে ঢাকা ,কলকাতা, লন্ডন, নিউইয়র্ক, কানাডা, সুইডেন, ইতালী, অষ্ট্রেলিয়া, জাপানসহ দেশে-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, ম্যাগাজিন, সাহিত্যপত্রে। ওয়েব, ব্লগ, ই নিউজ গ্রুপেও তিনি লিখছেন নিয়মিত। সাহিত্য কর্মের জন্য তিনি `ফোবানা সাহিত্য পুরস্কার` , `ঠিকানা শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পুরস্কার` পেয়েছেন। তিনি দ্যা একাডেমি অব আমেরিকান পোয়েটস, দ্যা এ্যমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিষ্টস, আমেরিকান ইমেজ প্রেস- এর সদস্য। সহধর্মিনী কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি ও দু`কন্যা নাহিয়ান ইলিয়াস ও নাশরাত ইলিয়াসকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন নিউইয়র্কে।

মাসিক বাসিয়া ও বাসিয়া টুয়েন্টি ফোর ডটকমের পক্ষ থেকে কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে পাঠকদের জন্য কবির একগুচ্ছ কবিতাঃ

দ্বিধার প্রহর
—————————————————–
কাহিনিগুলো দীর্ঘ হবে না জেনেও বলতে শুরু করি। এর আগে
পশলা বৃষ্টি ধুয়ে নিয়ে গ্যাছে পদছাপ। তাই যারা অতিক্রম করে
গিয়েছিল কালের গলুই, তাদের কোনো বাহুচিহ্ন ধরে রাখা যায়নি।
এবং শুরুর অন্তিমে যারা লুকিয়ে রেখেছিল কয়েকটি লালগোলাপ,
তাদের নামের তালিকা থেকেও ঝরেছে অক্ষর, ফলে নামগুলো নিয়ে
বেড়েছে সন্দেহ আর দ্বিধার প্রহর ।
অস্পষ্ট জলছাপ আর ধূসর পাতার অবয়ব পড়ে বর্ষাও লিখতে
শিখে আষাঢ়ের প্রথম পয়ার। সে কাহিনী মানুষ বোঝে না। ঢেউ
গোনতে জানে যে মাঝি , কেবল সে ই – পাথারসমগ্র বুকে নিয়ে
তাকায় আকাশের দিকে, আরেকটা তুফান শেষ হলে গাঙে ভাসাবে
নৌকা, অসমাপ্ত শ্লোকের রঙিন পাল।
চাঁদনগর
———————————————-
টেনে যাচ্ছি আর ক্রমশ’ই দীর্ঘ হচ্ছে সুতোসন্ধ্যা
পিয়ানোটাতে বসেছে যে পতঙ্গ, সে ও বার বার
গেয়ে যাচ্ছে বেদনার গান
সুরঘোরে আমিও ডুবে যাচ্ছি মদের মধ্যমায়।
বারিবৈষম্য জেনে এই দিগন্তে বৃষ্টিপাত থেমে
যাবার পর, আকাশও থামিয়ে দিয়েছে ছায়ার
পরিমাণ। তাই যে সব প্রেমিক-প্রেমিকারা
ভেজার আগুন নিয়ে খেলতে চেয়েছিল,
তারাও সংক্ষিপ্ত করেছে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা।
আঙুলের অন্তরায় চাঁদনগরের রূপসীরাতগুলো
কখন নেমে আসবে-
সেই প্রতীক্ষায় আমি যখন পার করছি প্রহর,
তখনই হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি
কাঁটা’টা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই
ছেঁড়াসুতোর উন্মীলন তাকিয়ে আছে তোমার
দুটি চোখকে আবারও চিনবে বলে…………..
 

এইম ইন লাইফ
——————————————-
হাজিরা না দিলে নাম মুছে যায়। দস্তখতের দুয়ারে
বেড়িবাঁধ হয়ে পড়ে থাকে ফাইলের দাগ। লাল
কালি আর রক্তের পার্থক্য নির্ণয়ে  শিশুরা খেলে
জলডুবি খেলা।
পাখিরা পঙ্গুত্ব বরণ করে ডাল থেকে ছিটকে
মাটিতে পড়ে। কিছু কিছু শিকারী,  পঙ্গু পাখি
শিকারেও কসুর করে না। কুড়িয়ে পাওয়া গুলির
খোসা থেকে নতুন বুলেট তৈরি করে নব্য
অস্ত্র ব্যবসায়ী।
হত্যাযজ্ঞ চলে, ঘাতক বদল হয়
শোষণ চলে,  শোষক বদল হয়
হামাগুড়ি চলে, হাঁটু বদল হয়
মৃত সাপের ফণায় অস্তগামী হতে থাকে
আমাদের এইম ইন লাইফ.।

সৈয়দ হিলাল সাইফ এর একগুচ্ছ ছড়া

helala-saifসৈয়দ হিলাল সাইফ। ছড়া,গল্প,কবিতা ও গান রচনা করেন। হাহ, হা ও হিলাল সাইফ ডট কম নামে রয়েছে প্রকাশিত দুইটি ছড়ার বই। বিটিভিতে গাওয়া বিভিন্ন কন্ঠশিল্পীর কন্ঠে রয়েছে একটি সিডি এলব্যাম। দেশে বিদেশে প্রকাশিত সবকটি বাংলা পত্র পত্রিকায়, লিটলম্যাগ,অনলাইনে রয়েছে সরব উপস্থিতি।

 

 

 

 

বাদ্য-বাজনা

হারমনি বাজে নাকী ডাকে শুনি পাতি হাস

ঢোলের আওয়াজ কানে লাগে ফাটে জাতি বাশ।

 

মন্দিরা মনে হয় ভাঙ্গা কাচ ভাংচে

শিল্পীর সাথে যেন খঞ্জর ভ্যেংচে।

একতারার ঘেনঘেন বে সুরে দোতারা

বাদ্যের নামে যতো ঘটিয়েছে কূ-তারা।

গীটারের টোন যেন কথা কয় মিটারে

ড্রামপাড শুনে লাগে টিন চালে ইটারে।

সঙ্গীত মানে যদি এই হালে বাজনা

নির্ঘাত আজথেকে নিতে হবে খাজনা।

কারা গায় গান আর কে বজায় বাদ্য

কার ছোঁয়া পরশে বে সুরা অবাধ্য।

 

বেন্ডের নামে যারা আকাম আর কূ-কামে

ভালোকরে না বাজালে বাতি দিবো মোকামে।

 

অবাক কাক

এইযে হাজার কাক

কর্কশ ডাকাডাক

করে কা… কা…

আমিতো অবাক

এইখানে কেন ডাক

ডাকে,কাকা!

 

দল বেধে সব কাক

উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁক

ডাকাডাকি….

আমিতো অবাক

কাকেদের নাই টাক

কাকা-কাকি।

 

হিজল ফুল

বাড়ির পাশে নদী বহে

নদীর পাড়ে হিজল গাছ

হিজল গাছে ফুল ফুটেছে

ফিঙে পাখি করছে নাচ।

 

হিজল ডালে নাচছে পাখি

পরছে ঝরে হাজার ফুল

নদীর স্রোতে হিজল ফুলে

রঙিন হলো দুইটি কূল।

 

সাতসকালে পূব আকাশে

ঊষা যখন যায় ছেয়ে

ফুল কুড়ানো গাঁথতে মালা

জুটতো পাড়ার সব মেয়ে’

 

সেই নদীতে সাঁতার কাটে

দস্যি ছেলে মেয়ের দল

মাগুরা নদীর স্রোতে আজো

হিজল কল কল জল্।

 

রক্ত-তক্ত

খুনাখুনি রক্ত

এই নিয়েই তক্ত

তবু কিছু হয়ে যায়

অনুরাগী ভক্ত…।

 

ভক্তরা ভাগ হয়

অক্তে অক্তে

ভাগাভাগি থেকে রাঙে

রক্তে রক্তে।

 

কারো হয়ে বসে নেশা

কারো হয় পেশা

ক্ষমতার মোহ মায়া

লোভি এক ঘেষা ।

 

মাটির টানে

মাটির টানে যুদ্ধ করে

ছিলো যতো মুক্তি সেনা

লক্ষ্য প্রানের দামে হলো

এইতো আমার মুক্তি কেনা।

 

শহীদের সাথে নবীনের ছিলো

অলেখা এক চুক্তি

দেশ প্রেমে সব উদ্বুদ্ধ হবে

তুচ্ছ করে সব যুক্তি।

 

জনগনের দ্বারা সকলের জন্য

জনগনের সরকার

শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে

টিকিয়ে রাখা দরকার।

 

বেচে থাকা যত মুক্তি সেনা

কালের স্বাক্ষী গাজী

সকলেই কী দালাল হয়েছে !

সকলেই কী পাজী ?

 

যুদ্ধ যারা করেছিল তারা

শুধুই মাটির টানে

ক্ষমতার কোনো বেব্সা ছিলনা

শহীদ,বীরাঙ্গনারা জানে।

কবি জাফর ওবায়েদ-এর একগুচ্ছ কবিতা

zafor-vai

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অকুণ্ঠ অতিথি

অকুণ্ঠ অতিথি এক, পাতার পালক। উড়ে এসে জুড়ে বসে পেতে চায় নালিশা জমিন, হৃদয় দখল। পলকে পলক ফেলে, হাতে রাখে হাত। গায়ে তার নীতিজ্ঞান ত্বকের খোলশ, নিষ্পাপ নির্মিত নিটোল চাদর। দাঁতাল প্রহর ঠেলে, আলোপাখি খোঁজে প্রতিদিন। দম্ভের দড়ি ছেঁড়া ভঙ্গুর বিশ্বাসে তুড়ি মেরে চলে তার কায়েমি শাসন। দেহমন্দিরে তার প্রেমঅর্চনা, পৌরাণিক বিশ্বাসের বিভাজিত বুনিয়াদ। বদলাতে চায় তৃষ্ণার রং, ক্ষুধাতুর সময়ের ব্যাকরণ। সমস্ত গরল গিলে পেতে চায় এক চুমুক প্রেম, এক ঢোক আলোমাখা বিশুদ্ধ জল। যন্ত্রণাহত সিংহের মতো ছটফট সময়ের অচিন্ত পথে এগুতে ব্যাকুল। অনীল আঁচল খোঁজে ব্যর্থতার খাটে বুঝি হবে তার করুণ শয়ন!

স্মিতহাসির বালিকারা বাঁকাচোখে ছুরি মেরে হেঁটে যায় সতীর্থ সরণির হাত ধরে…

গোলাপের সম্ভ্রম

অন্ধকারে বাড়ন্ত বিষবৃক্ষ। নষ্টের লতায় বাঁধা আলোর কঙ্কাল। অন্ধরে কষ্টের কোকিল। তুমুল তন্দ্রাকোলে আমি এক অবোধ বালক। ফেলে এসেছি ধৈর্যের ঝোলা, সহ্যের সরোবর। তুমি আমি মালী ছিলাম। রোপণ করেছি আলোগাছ সত্তার গভীরে। আলো ধরেছিল, তোমাকে দিয়েছি। এখন আঁধার আমার ভাগের। আমি তারে ভেবে নিই কোমল বালিকার নরোম আদর!

জানি, বিপন্ন নদীর কাছে থাকে না অবশিষ্ট কোনো বিশুদ্ধ জল, বিক্ষত বায়ুর কাছে নিশ্বাসের অম্লজান।তবে আর চাইবো কেন? বিবস্ত্র বাগান বাঁচাতে পারে না গোলাপের সম্ভ্রম, হাস্নাহেনার ঘ্রাণ।

অন্তদীপ

পুরনো পৃথিবী ঘেটে সহসাই পেয়ে যাই নতুন নগর
রাতজাগা নিসর্গে প্যাথেডিন সুখ…

হেমন্তের হাওয়াজ্বলা রোদে বিরস পর্বত, তৃষ্ণাকাতর টিনের চাল
চমকিত চোখ ভেতরে ভেতরে পাঠ করে ঘামের গৌরবে নির্মিত ইমারতের ইতিবৃত্ত
নীরব নৈরাজ্যে কাঁপে আঁধারের নিকষ বলয়…
দুয়ারখোলা চিন্তনে আমার, কেউ কেউ খুঁজে নাস্তিক্যবাদের ঘ্রাণ।

পেটের প্যাঁদানি খেয়ে ভুলে যাই শখের সাকিন, নখের নিলয়
হাতের হালুয়া মদে হেরে যায় পঙক্তির পায়েল, দৃঢ়তার কূলভাঙা ঢেউ, তবু
তোমার আঙুলের নীলায় আটকে যায় চোখের চশম, চিন্তাচলন
ঠোঁটের ঠমক আর চুলের উড়ালে নির্ঘুম চোখের চাতাল।

আমি নিশাচর বাদুড়ের মতো রাতের শেষ ট্রেনের প্রতীক্ষায় এ-ডালে ও-ডালে ঝুলি
জমাট কষ্টের নীল সুর ডেকে আনে শ্যাওলার অমানিশা
পেছনটায় টেনে ধরে সংসারী পিছুটান…

নাইয়রি ইশ্বর


জেগে ওঠো নতজানু শব্দবন্ধ, জেগে ওঠো নবীন ভূতুড়ে মৌনতা
দেখে নিই ঘুমোলো কোথায় কালের কলম, আশাহত সময়ের বিপন্ন ঈশ্বর!

আমি নই কোনো ডানাহীন বোধের বলাকা, মুখরিত মুল্লুকের শঙ্খচিল;
সাধনার সর্পিল সাঁকু বেয়ে নিশ্চুপ জলে নিয়েছি ধৈর্যের পাঠ…
আমার পায়ের ছাপে চলে সময় কুসুম, গায়ের গন্ধ শূঁকে রোদসংসার…
রোমশ রোদন ঠেলে ক্ষুধার জমিনে রোপণ করেছি আমি ফসলের অঘ্রান
তৃষ্ণার ঠোঁটে তুলে দিয়েছি তুমুল হাসি, জোছনার জল…

নথিবদ্ধ প্রেমের পুলকলাগা কথার করতলে যন্ত্রনাহত মজ্জার মাতম…
জেগে ওঠো নতজানু শব্দবন্ধ, জেগে ওঠো হালের হাপিত্যেসভাঙা বিহগ
দেখে নিই পালালো কোথায় চোখের আগুন, অতীন্দ্রিয় নাইয়রি ঈশ্বর!

তিনপদী–১

হার মেনেছি হার
শত হাজার বার

পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, সবাই তো যার যার।

সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতিঃ কবি জাফর ওবায়েদ সিলেট সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। অধ্যপনা পেশা হলেও নেশা সাহিত্যসাধনায়। রচনা ও পাঠে তার আগ্রহ সমগতিময়। অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অধ্যাপনা করছেন অন্য একটি বেসরকারী কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে।
৬ জুন ১৯৭১ সালে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার কুড়িখলা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম আলহাজ্ব মোহাম্মদ ওমর আলী ও মাতার নাম মিসেস সাঈদা খাতুন।তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে  স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী, চট্টগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে শিক্ষায় স্নাতক এবং ঢাকার আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
 কবি জাফর ওবায়েদ বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত গীতিকার। মঞ্চের একজন অভিনেতাও।
আয়ুর উঠোন, বৈরাগ্যকুসুম, সত্যেরা সাঁতার জানে, চতুর্থ পৃথিবী, একমুঠো নীলসুর, রবীন্দ্রনাথ আমার দলে, হৃদয়ে রাত্রি নামে, নির্ঘুম লাবণ্য তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ। নব্বইয়ের দশক থেকে তিনি লেখালেখির সাথে জড়িত।
নব্বইয়ের দশক থেকে তিনি লেখালেখির সাথে জড়িত।আয়ুর উঠোন, বৈরাগ্যকুসুম, সত্যেরা সাঁতার জানে, চতুর্থ পৃথিবী, একমুঠো নীলসুর, রবীন্দ্রনাথ আমার দলে, হৃদয়ে রাত্রি নামে, নির্ঘুম লাবণ্য তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ। 

ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন শামীম আজাদ, নাজমুন নেসা পিয়ারি

shamim-azad-nazmun-nesa-piy
বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী কবি শামীম আজাদ এবং জার্মানপ্রবাসী লেখক ও গবেষক নাজমুন নেসা পিয়ারি।

গত ৬ অক্টোবর বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সভায় তাদের নাম অনুমোদিত হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।

আগামী বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে শামীম আজাদ ও নাজমুন নেসা পিয়ারিকে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। এ পুরস্কারের মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা।

কবি ও লেখক শামীম আজাদ কবিতা, কথাসাহিত্য ও নাটক রচনা করেন। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন।

আর নাজমুন নেসা পিয়ারি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করে থাকেন। তিনি প্রবাসে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত।

প্রবাসী বাঙালি লেখক, কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে যারা বাংলা, ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় গভীরতাময় সাহিত্য রচনা করেন এবং বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে যারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন তাদের মধ্যে থেকে দুজনকে ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হয়।

এর আগে ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন ড. ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, মন্জু ইসলাম, ইকবাল হাসান ও সৈয়দ ইকবাল।

২০১১ সালে প্রবর্তিত ‘বাংলা একাডেমি প্রবাসী লেখক পুরস্কার’ ২০১৪ সাল থেকে ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে।

উদয় শংকর দুর্জয়ের কাব্যগ্রন্থ ‘লিখে রাখি বিশুদ্ধ আত্মার রাত্রিদিন’ // আবুল কাইয়ুম

likhe-rakhi-bishuddha-atmar-ratridin-1

 

 

 

 

 

সম্প্রতি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রতিকথা বের করেছে কবি উদয় শংকর দুর্জয়ের কাব্যগ্রন্থ ‘লিখে রাখি বিশুদ্ধ আত্মার রাত্রিদিন’। এটিই তাঁর প্রথম একক কাব্য। শিল্পী চারু পিন্টুর আঁকা দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও সুন্দর কাগজে ঝকঝকে ছাপা নিয়ে চেৌষট্টি পৃষ্ঠার এ কাব্যে কবির পঞ্চান্নটি কবিতা স্থান পেয়েছে। এর আগে ‘ত্রয়ী’, মৈত্রী’, ‘পাঁচ নক্ষত্র’ ও ‘চার অধ্যায়’ –এই চারটি যেৌথ কাব্যে তিনিও ছিলেন অন্যতম কবি।

 

‘লিখে রাখি বিশুদ্ধ আত্মার রাত্রিদিন’ কবির জাতীয় ও বৈশ্বিক চিন্তাচেতনার প্রকাশ সংবলিত একটি কাব্য। মানবিক আদর্শ হলো তাঁর এই চিন্তাচেতনার ভিত্তি, যা এ কাব্যের কবিতাগুলো পাঠে উপলব্ধ হয়। এই দৃষ্টিতেই তিনি সমাজ-পরিপার্শ্ব, স্বদেশ ও পৃথিবীকে দেখেছেন। বর্তমান ও সাম্প্রতিক সময়ের যে সব ঘটনা ও কর্মকাণ্ড দ্বারা তিনি আলোড়িত হয়েছেন সেগুলোই তাঁর মতো করে উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে দু:সহ সব বাস্তবতা আছে, সময়ের অগস্ত্য যাত্রার রুঢ় আশঙ্কার প্রকাশ আছে। তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে স্বদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের চিত্র এবং বিশ্বের নানা দেশে সংঘটিত হানাহানি, যুদ্ধ ও যুদ্ধপীড়িত মানুষগুলোর দু:খকষ্টের ছবি।

 

কবি দুর্জয়ের কবিতা বর্ণনাধর্মী। আবেগ ও বেৌদ্ধিকতার সমন্বয়ে গল্পের মতো তাঁর কবিতা এগোয়। তাঁর অধিকাংশ কবিতার বিষয় বিভিন্ন স্থান ও ব্যক্তিকে নিয়ে সংঘটিত ঘটনা। তাঁর কবিতাগুলোকে মনে হয় যেন কবিতা ও রিপোর্টিং-এর জড়োয়া শিল্প। পৃখিবীর সর্বত্র বিচরণ করে তিনি তুলে আনেন যত ধ্বংশ, কষ্ট আর অপঘাতের চিত্র। যেমন, সমকালীন স্বদেশের নষ্ট মুখাবয়ব তিনি এইভাবে অঙ্কন করেছেন-

এখানে পলাশের পরাগমাখা স্মৃতির বর্ষণ অবিরাম

কোলাহল থেমে গেছে, স্তব্ধ পাখি কলরব, অস্তমিত দীপ

দপ করে জ্বলে ওঠে, অভিশপ্ত বুলেটের বারুদ পোড়া গন্ধ।

 

কবির বিশ্বদৃষ্টিকোণ নিরপেক্ষ চেতনাসম্ভূত। যুদ্ধ-সংঘাত ও হিংস্রতায় দেশে দেশে যে সব হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংশলীলা চলছে এবং এর ফলে ঘরছাড়া মানুষের সীমাহীন দুর্দশা – সে সবের কাব্যিক দলিলও যেন তাঁর কবিতা। বিশ্বের যে কোন স্থানের ক্ষতি ও কষ্ট- তা যেন কবির অন্তরেরই কষ্ট। জাতীয় ও বৈশ্বিক বিপর্যয় থেকে উদ্ভূত বেদনায় কবি আপ্লুত হয়েছেন সত্য, কিন্তু তা তাঁর কাঙ্ক্ষিত একটি সুন্দর সময়ের স্বপ্নকে নি:শেষ করে দেয়নি।

 

প্রবহমান গদ্যভঙ্গিতে কবিতার সুন্দর আঙ্গিক নির্মাণ করেছেন কবি। গদ্যছন্দের আবহটিও বেশ। এমনকী তাঁর মুক্তগদ্যেও এই ধারাটি স্পষ্ট। তাঁর ভাষা বিবৃতিধর্মী হলেও আবেগদীপ্ত। তিনি এক কথা বলতে গিয়ে অনেক কথা বলেন, অনেক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, একটি কবিতায় নানা অনুষঙ্গ নিয়ে আসেন। তাঁর সুচয়িত শব্দাবলী কবিতার বহিরঙ্গে সুন্দর ব্যঞ্জনা তোলে। সে সাথে তাঁর ব্যবহৃত অসংখ্য বিদেশী শব্দ ও নাম কবিতায় একটি স্বতন্ত্র আবহ তৈরি করেছে। জীবনের সর্ব ক্ষেত্র থেকেই তিনি চিত্রকল্পের উপাদান আহরণ করেছেন। সব মিলে তাঁর কবিতা নান্দনিক হয়ে উঠেছে –একথা বলা যায়।

 

[গ্রন্থ পরিচিতি : ‘লিখে রাখি বিশুদ্ধ আত্মার রাত্রিদিন’ (কাব্য)। লেখক : উদয় শংকর দুর্জয়। প্রকাশক : প্রতিকথা। প্রচ্ছদ শিল্পী : চারু পিন্টু। মূল্য- ১২০ টাকা।

শ্যামা পদ দে এর একগুচ্ছ কবিতা

IMG_0737

 

 

 

 

 

 

লোকটা জানলোও না

লোকটা জানলোও না……

সেও নিয়ন হাতে হেঁটেছিল আঁধার মিছিলে_

প্রতিশ্রুতির মাধ্যাকর্ষণে, আলোক কেন্দ্রের দিকে

গায়ের ঘাম, পায়ের ধূলোয়, বানিয়েছিলো অলীক আকাশ

আর দেবতা বানিয়েছিলো, সংগোপনে প্রসাদ খোর দের ।

সে স্বপ্নেও ভাবেনি তার ঘাম,ধূলো, রক্ত, আবেগ…

আকাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়বে তারই অরক্ষিত মাথায়…।

 

লোকটা জানলোও না……

তার ঘাম-রক্তে গড়া দেবতার লকলকে জিহ্বা

চেটে পুটে খাবে তারই থেঁতলানো লাশ…

তার স্বজনের চোখের বরফ কিনবে অল্পদামে

শোকের হাটে বিকোবে কয়েক লাখী মলম…।

আবারও ঘাম, পায়ের ধূলো, রক্ত, আবেগ_

আর প্রসাদ খোর দেবতার বিলাসী মন্দিরের স্বপ্ন ।

 

লোকটা জানলোও না……

 

আজও তার অসহায় সন্তানও হাঁটে সেই আঁধার মিছিলে

নতুন নিয়ন হাতে, কানে বাধ্য সময়ের পদধ্বনি

ঝরা পাতার হুঙ্কারে, মেকী স্বপ্ন চয়নে …..

আবারও অলীক আকাশ , সেই দেবতা, মন্দির, প্রাসাদ…

হাসি চাপা আশঙ্কায় আকাশ ভাঙ্গার পুনরাবৃত্তি ।।

 

    নীল আকাশের নীচে

গ্রাম জোড়া আগ্নিদগ্ধ ধ্বংসস্তূপে_

জেগে আছে স্পষ্ট নির্ভয় গণতন্ত্রের ছাপ…।

 

অবাধ আগুনে সুষ্ঠু দহন …

মাথা গোঁজার ঠাইয়ের ছাই এ হাসে মৌলিক অধিকার ।

 

রংবেরঙের ঝাণ্ডা ধরা মুষ্ঠিবদ্ধ দগ্ধ হাতগুলো তে

‘আমার থেকে দামি’ বার্নলের সিক্ত প্রলেপ…।

 

উল্টে যাওয়া ভাতের হাঁড়িতে অন্নসংস্থান…

পুড়ে কুঁকড়ে যাওয়া যানবাহনে উন্নয়নের গতি…

বেকার ছেলেমেয়ের পোড়া শংসাপত্রে নিশ্চিত কর্মসংস্থান

জামাকাপড়ের ভস্মস্তূপে জেগে ওঠা সংস্কৃতি, শালীনতা

গর্ভস্থ ভ্রূণকেও বিরোধী দলের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ।

 

নিরপেক্ষ আগুনের সার্বভৌমত্বে _

দলমত নির্বিশেষে সফল গৃহদাহ পরিষেবা…।

 

সাম্যবাদী ভাবনায় রঙ-অহং বিভেদ ঘুচিয়ে…

কালো কালো সাম্রাজ্যে সর্ব হারার বিজয় সম্মেলন

একক ছাদ ছেড়ে একত্রে নীল আকাশের নীচে ।।

 

  পাশাপাশি

তোর কবরে আল্লা বাঁচে_

মোর শ্মশানে ভগবান।

মন্দিরেতে শঙ্খ সাঁজে_

মসজিদে ঐ আজান গান।

 

মোর সন্ধ্যে রামায়ণ-গীতা…

তোর হাদিস কোরানে_।

বল দেখি কে বলছে সেটা_

পুণ্য হবে রক্তস্নানে?

 

তুই ডুবে যা ঈদ-মহরমে…

আমার থাক হরেক পাবন।

বল দেখি্‌ কোন ধর্ম জ্ঞানে_

ভাই করে ভায়ের দহন ?

 

লয়ে পেটে ক্ষুধার আগুন_

সবাই ছুটি কর্মস্থানে।

জ্বলবে যখন হয়ে দ্বিগুন_

সেটা কোন ধর্ম মানে?

 

তোর-আমার ভিন্ন রুচি_

কাজ নেই ভাই অপমানে।

আমি নাহয় হিন্দু-ই থাকি_

তুই থাক ভাই মুসলমানে।।

 

  সবাই সমান

বৈষম্যের এক রুদ্রবীণায়_

বেঁধেছো যে সাম্যের সুর,

কেমনে বাজবে উদারতায়_

ঘুচবে সকল নিকট-দূর?

 

বর্ণ-ধর্ম-লিঙ্গ- জাতে_

টেনে বাঁধা যে সুবিধাবাদ,

কেমনে পড়বে সকল পাতে

সাম্য-সুধার নিবিড় স্বাদ?

 

মাতৃ-ভূমির ধাক্কা, চাকায়_

লুটায় মানুষ, হারায় প্রাণ,

ধর্ম বিষের ধংস-লীলায়_

বিধর্মে হানে মৃত্যু বাণ।

 

সাম্যের গানই গাইবে যদি_

ঘোচাও বিভেদ,সকল টান।

মানবতা ঢেউ ভরুক নদী_

হোকনা মানুষ সবাই সমান।।

 

    আদিম ক্ষুধা

আদিম গুহাবাসী মানুষ_

হিংস্র জঙ্গল, পাথুরে আগুন…

কাঁচা মাংসের ঘ্রাণ_

আধ ঝলসানো নির্বিচার রক্ত।

 

খাদ্য সংগ্রাহক থেকে উৎপাদক_।

বিবর্তনের পথে লক্ষ-কোটি বছর…

 

এখনও জঙ্গল, ইঁট-কাঠ-পাথরে…

মানব বৃক্ষের গায়ে জিন্সের বাকল,

মানবতা ও সুযোগ সন্ধানে গুহাবাসী,

ধর্ম প্রস্তর ঘর্ষণে অপ্রত্যাশিত দাবানল,

শিক্ষা, বিজ্ঞান ও বিশ্বায়নের কল্যাণে

পাথর হাতিয়ার থেকে উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র।

 

হাতে, মনে, ও যৌনাঙ্গে এখনও জেগে আছে

কাঁচা হিমোগ্লোবিনের অদম্য আদিম ক্ষুধা!

 

পংক্তিস্বজন : স্বজনের ভালোবাসার লোভে বিজন প্রান্তরে পড়ে থাকে হিজল তমলের ছায়া

H-10সাইদুর রহমান সাঈদ
সাহিত্যের সবচেয়ে কঠিন বিষয় হচ্ছে কবিতা। একাগ্রচিত্তে নিরন্তর অনুশীলন না করলে কবিতা লেখা সম্ভব নয়। কঠোর পরিশ্রমীরাই কবি হতে পারেন। জীবন-জীবিকার তাড়নার পাশাপাশি সৃজনশীল মানুষকে কবিতা লেখার তাড়নাও আন্দোলিত করে। তাই সুদূর যুক্তরাজ্যে শতকর্মব্যস্ততার মাঝেও অনেকেই নিয়মিত সাহিত্য চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার গৌরব অর্জন করেছেন। এ ছাড়া কবিতার মতো বিশুদ্ধ শিল্প মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ সৃষ্টি করে। যার ফলশ্র“তিতে আমরা পেয়েছি যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ৯জন কবির যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘পংক্তিস্বজন’। যৌথভাবে কাব্যগ্রন্থ পকাশ তাদের ঐক্যবোধ ও আন্তরিকতার পরিচায়ক। এ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন এম মোসাইদ খান। সিলেটের বাসিয়া প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশকাল হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা- ২০১৬। চমৎকার প্রচ্চদে ঝকঝকে ছাপা সাড়ে ৬ ফর্মার এ কাব্যগ্রন্থটি হাতে নিলেই খুলে দেখতে ইচ্ছে হয়। সেটআপ, গেটআপ, বাঁধাই সবকিছুই চমৎকার। এ যৌথ কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে সকল ‘মা’কে। এ বিষয়টি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটি মায়ের প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রকাশ। এটি মায়ের কাছে চিরঋণী হিসেবে মায়ের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাপ্রদর্শন।
যাদের কবিতা বুকে ধারণ করে ‘পংক্তিস্বজন’ আত্মপ্রকাশ করেছে তারা হলেন, এ কে এম আবদুল্লাহ, আবীর ইসলাম, আসমা মতিন, মোহাম্মদ ইকবাল, ইকবার বাহার সোহেল, ফাহমিদা ইয়াসমিন, মুহাম্মদ মুহিদ, মো. ওয়াছি উদ্দিন তালুকদার রায়হান ও এম মোসাইদ খান। পংক্তিস্বজনে প্রত্যেক কবির পরিচিতি ও প্রকাশিত গ্রন্থের নাম তোলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন স্বাদের কবিতার সমাহার পংক্তিস্বজন।
এ কে এম আবদুল্লাহ : তাঁর ১০টি কবিতা ছাপা হয়েছে। কবিতাগুলোতে লেগে আছে ভালোবাসার রং এবং মাটির গন্ধ। অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের আশংকা আছে। তবে বিদেশি দামী পারফিউমের গন্ধের চেয়ে বাংলার সোঁদা মাটির গন্ধের মাঝে ডুবে আছে যার জীবন তাঁর আবার আগ্রাসনের কিসের ভয়? সুদূর প্রবাসে কবি নিজের সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করেন তাঁর দেশপ্রেম কতো গভীর তা ব্যাখার প্রয়োজন হয় না। তাঁর ‘প্রজন্মের খুঁটি’ কবিতায় তিনি বলেছেন ‘ব্রিকলেনের গলিতে ভাবনার সমাবেশ।/ লাউয়ের নরম ডগার মতো, আমার/ নরম ডগায় নাচে সংস্কৃতির প্রজাপতি;/ কষ্টের শিথানে জ্বলে সোডিয়াম কুপি।’ শথ প্রতিকুলতার মাঝেও দেশ, জাতি, ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃতির নানা অনুসঙ্গ ওঠে এসেছে তাঁর কবিতায়। চমৎকার উপমার ব্যবহার কবিতাকে শিল্পিত সুষমার উৎজীর্ণ করেছে। তাঁর এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে গেলেও/ আমার কাছে আজও মাটি রং খুব পছন্দ, মাটির গন্ধও।’ তাঁর কবিতার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, সমাজ বাস্তবতা, রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি প্রভৃতি বিভিন্ন অনুসঙ্গ ওঠে এসেছে। এ দেশে অতিবাহিত তাঁর স্মৃতিময় দিনের কথাও আমরা কবিতার মাঝে পাই।  ‘জীবনের প্রেসরিলিজ’ কবিতার শেষ স্তবকে তিনি বলেছেন, ‘হায়, মানিক মিয়া এভিন্যুতে/ পড়ে থাকে তৃতীয় চোখ; অনুভূতিহীন/ মার্বেল পাথরের মতো।’ এখানে চমৎকার একটি চিত্রকল্প ভেসে ওঠে আমাদের চোখে। তাঁর কাব্যকৌশল ও কাব্য ভাবনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
আবীর ইসলাম : এ গ্রন্থে তাঁর ১০টি কবিতা ছাপা হয়েছে। আমাদের ধর্মগ্রন্থ বলে, পাপীরা মৃত্যুর পর দোজখের আগুনে পুড়বে। আর কাব্যভাবনার গভীরে ডুব দিয়ে আমরা দেখি, কবিরা রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুনে নিরন্তর পুড়ছেন। এ আগুন একজন কবিকে তাড়িত করে। জন্ম হয় কবিতার। মনের তাড়না থেকেই কবিতা সৃষ্টি। আবীর ইসলামের কবিতায় রোমান্টিকতার আবহই বেশি। তিনি এক কবিতায় বলেছেন, ‘ঘুমুতে দেয় না অবিবাহিত সুখ/ দক্ষিণের জানালা খোলা রাখি/ বিবিধ মায়ারা দরজা খুলতে চায়/ আকাশ দেখি, আকাশে তাকাই।’ একজন কবির দৃষ্টি বিশালতার দিকেই থাকতে হয়। ‘প্রেরণা’ কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘জ্যোৎস্নায় পুড়ি যখন মধ্যরাতে/ শেখাও তুমি ভালোবাসার গান।’ একজন কবি জ্যোৎস্নায় পুড়তে পারেন, ভাসতে পারেন, ডুবতে পারেন, উড়তেও পারেন। কেবল একজন কবির পক্ষেই তা সম্ভব। তাঁর কবিতায় সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অধপতনের কথাও ওঠে এসেছে। সমাজের নানা অসংগতির কথাও ওঠে এসেছে। তাঁর এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘অউখানো কিতা শেষ নি সবতা জীবনের/ খোলস ভেঙে গেলো উদভ্রান্ত চাতকির,/ সহস্র ঘাত-প্রতিঘাতে একটি কথার/ মানে খুঁজি জীবনের পথে, অন্ধ চোখে শুনি উত্থাল পাতাল সমুদ্রের গর্জন।’ তাঁর কাব্য ভাবনা জীবন জটিলতাকে ছুঁয়ে যেতে সক্ষম।
আসমা মতিন : এ গ্রন্থে তাঁর বিভিন্ন স্বাদের ১০টি কবিতা ছাপা হয়েছে। তিনি সমাজের অন্ধকারে ডুব দিয়ে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ভেতরের বাস্তবতা উপলব্ধি করার প্রয়াস পেয়েছেন। তাঁর কবিতা পড়ে আমরা তাঁর প্রখর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় পাই। সমাজবাস্তবতাকে ভেঙেচুরে দেখার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন আমরা তাঁর কবিতায় দেখতে পাই। তাঁর এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘ওষ্ঠে কাচ কাটা হাসি, যকৃতে নেমেছে/ অন্ধকার,/ উজাড় হয়েছিল উৎফুল্ল যৌবন/ আজ পতাকার তলে অসতীর নাম শুনি,/ বারে বার।/ কিছুই ফেরত দেয়া হয়নি প্রসূতির ঘরে/ স্বপ্ন ছিঁড়ে জন্ম দিয়েছিল বঙ্গের আকৃতি/ বিনিময়ে পেয়েছে কতগুলো কাঠের/ পুতুলের গল্প।’ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অগণিত নারীর অপরিসীম আত্মত্যাগ, অবদান ও পরিশেষে তাদের বঞ্ছনার ইতিহাস কাব্যভাষায় উপস্থাপন করে আসমা মতিন তার দেশপ্রেম ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। সমাজের প্রতি কবির দায়বদ্ধতার কথা তিনি ভুলে যান নি। তাঁর কবিতায় রোমান্টিক কিংবা বিষণœতার ঋতু বর্ষার কথা আছে, এ দেশের কাদামাটির কথা আছে, প্রেম ভালোবাসার কথা আছে, বিরহ বেদনার কথা আছে, অনেক কিছুই আছে। তিনি তাঁর এক কবিতায় আবেগভরা হৃদয়ে বলেছেন, ‘পাঁজর সেঁকা দিনের ভালোবাসার শেষবিন্দু। রেখে যাব সমাধির ঘাটে,/ একবার নিতে এসো প্রিয়।’ তাঁর কবিতায় আমরা মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার টান দেখি। তাঁর কবিতার ভাষায়- ‘আপন ভূখণ্ডে প্রত্যেকটি মানুষকে ভালোবাসা,/ স্মৃতি হয়ে বইলো অতীতের দিন,/ মনে পড়ে ওখানে অবিরত ভালোবাসার টানে।’
মোহাম্মদ ইকবাল : এ গ্রন্থে তাঁর ১০টি কবিতা ছাপা হয়েছে। কবিতাগুলোতে তাঁর দক্ষতা, কাব্যভাবনা ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছে। এর মধ্যে অস্তিত্বে অনুভব’ শিরোনামে একটি সনেট রয়েছে। এ সনেটে তিনি রোমান্টিক আবহে এক মায়াবী বেদনার মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চমৎকার বর্ণনা এবং এর সাথে মানবজীবনের আবেগ-অনুভূতির সামঞ্জস্যের কথা তোলে ধরেছেন। এ কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘নদীচরে কাশফুল ফুটে রাশি রাশি/ ধূসর আকাশে একাকী বিরহী চাঁদ/ খুনসুটিতে ব্যাকুল বুনো হংস হাঁসি।’ এ গ্রন্থে প্রকাশিত তাঁর কবিতাগুলোতে সামাজিক টানাপোড়ন, অবক্ষয়, মনস্তান্তিক জটিলতা, মানুষের জীবন সংগ্রাম, ভোগবাদী সমাজের নানা অসংগতি প্রভৃতির প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি নিজের মতো করে কাব্যশৈলী নির্মাণের চেষ্টা করেছেন। তাঁর এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘আমি সবিসময়ে লক্ষ্য করি শির যন্ত্রণা যেনো ছিলই না কখনো,/ আমাকে খুঁজে পাই যেনো কোনো আনকোনা তাজা বিশুদ্ধ তরুণ।/ এমনি করে যদি তোমার স্পর্শে যন্ত্রণাগুরি দূরীভূত হয়/ ঘটে যাক যেকোনো শারীরিক বিপর্যয়! ভয় নেই তাতে এতটুকুও।/ কারণ তুমি আছো আমার!/ মায়াবী হস্তস্পর্শে শোষিত হবে শারীরিক সব যন্ত্রণাটুকু।’
ইকবাল বাহার সোহেল : এ গ্রন্থে তাঁর ১০টি কবিতা ছাপা হয়েছে। তিনি তাঁর কবিতায় যাপিত জীবনের নানা বাস্তবতার কথা তোলে ধরেছেন। পরিবর্তনশীল এই জগতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে মানুষ তার লক্ষ্যের দিকে যায়। তিনি তাঁর এক কবিতায় বলেছেন, ‘প্রহরে প্রহরে রং বদল হয়/ অদৃশ্য আর অজানা মায়ায়।’ এ মায়ার জাল কেউ ছিন্ন করতে পারে না। তাই তাঁর অপর এক কবিতায় দেখি তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘অন্তিমলগ্ন/ স্বপ্ন দেখে মন,/ বেলা বাকি নেই।/ সমুদ্র তটে মলিন বদনে বসে/ সন্ধ্যা নামার দৃশ্য দেখি।/ মেঘ ডাকছে আকাশে/ কোথাও কেউ নেই।’ এক কবিতায় তিনি ঋতু বৈচিত্রের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে চমৎকার উপমা ব্যবহার করেছেন। তিনি এ কবিতায় বলেছেন, ‘মেঘেরা নিয়েছে তুলে/ নীলাভ সড়ক থেকে সব অবরোধ/ পাতায় পাতায় নাচে/ সোনার ঘুঙুর পরা হেমাঙ্গী রোদ।’ ‘জলডুবা’ কবিতায় তিনি গ্রামীণ জনপদের চমৎকার প্রতিচিত্র অংকন করেছেন। এ কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘রাজহাঁসের ঠোঁটে ভাসা/ আমার এই জলডুবা গাঁও/ বাতাসে ফেরে স্বর্ণচাঁপা/ শিরিষ হিজল কুরচির মধুগন্ধ ভরা/ এ এক মায়াবী ভালোবাসার নাও/ প্রিয়ার চোখের জলে ভাসা/ এই জরডুবা গাঁও।’ এ কবিতাটি পাঠক হৃদয়ে দাগ কাটবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর কবিতাগুলিতে শব্দবিন্যাস বা গঠনশৈলীতে আরো দক্ষতার ছাপ রাখতে পারলে ভালো হতো।
ফাহমিদা ইয়াসমিন : এ গ্রন্থে তাঁর বিভিন্ন স্বাদের ১০টি কবিতা সংকলিত হয়েছে। কাশফুলের মতো ধবধবে সাদা জ্যোৎস্নার জোয়ারে ভাসতে চায় অনেকেই। কিন্তু চাইলেই সবার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তবে অনেকের পক্ষেই সম্ভব। ফাহমিদা ইয়াসমিনের প্রাঞ্জলভাষায় রচিত রোমান্টিক কবিতাগুলো সেরকমই ইঙ্গিত বহন করে। এ গ্রন্থে তাঁর ‘মা’ শিরোনামের কবিতাটি চমৎকার। আর মাকে নিয়ে যাই লেখা হোক না কেনো তাকে অবহেলা করার কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া তাঁর ‘জেগে ওঠো’ কবিতাটি সমাজের নির্যাতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, শোষিত মানুষের মুক্তির মিছিলের শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। বর্তমান বাস্তবতায় এ রকম কবিতা বেশি বেশি লেখা প্রয়োজন। কারণ শ্রমজীবী মানুষের সামগ্রিত মুক্তিই সভ্যতার আলোকে উজ্জ্বল করে তোলতে পারে। এ কবিতার তিনি বলেছেন, ‘শোষণ করে গড়ছে তারা বিশাল বিশাল বাড়ি,/ নামীদামী পোশাক-প্রসাধন আর দামী দামী গাড়ি।/ প্রতিবাদ করার কেউ নেই তাদের ইচ্ছেমতো চুষে,/ একদিন তারা পড়বে ঠিকই শ্রমিক শ্রেণির রোষে।/ জাগরে শ্রমিক, উঠরে জেগে ঘুমাবি আর কত,/ গর্জে উঠো আদায় করো দাবি তোমাদের যত।’
মুহাম্মদ মুহিদ : এ গ্রন্থে তাঁর ১০টি কবিতা ছাপা হয়েছে। এ কবিতাগুলিতে কালের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর আবেগ-অনুভূতি ও চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। তাঁর কল্পনাশক্তি ও অভিজ্ঞতা নানাভাবে ওঠে এসেছে কবিতায়। হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে তিনি সমাজকে বুঝার প্রয়াস পেয়েছেন। এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘ফুলগুলি ঝরে নীরবে ভাঙে স্বপ্নের বুক,/ হতাশার বিস্তার ঘটে জল গড়ানোর মতো করে।/ বিশুদ্ধতার জমিনে জমে পাপের পলি,/ নকল আলোর ঝলকানিতে সাজে অন্ধগলি।’ সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার ভেতর দিয়েই চলমান জীবন। মানুষ হিসেবে আমরা এর বাইরে যেতে পারি না। তবে অন্ধকার ঠেলে আলোর জগতের দিকে যাত্রাই মানুষের মূল লক্ষ্য। তবে এ লক্ষ্যের দিকে যাত্রাপথে নানা বাঁক পরিবর্তনকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তার এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘সোনালি দিনের গল্প/ কালে কালে অভিন্ন রয় না বইয়ের পাতায়,/ মানুষের ইচ্ছের ইতিহাস পাল্টে কত/ অস্পষ্ট বোধের পাহাড় জমে।’ কাল থেকে মহাকালের দিকে যাত্রায় মানুষ অনেক কিছুই দেখে এবং উপলব্ধি করে। এক কবিতায় বলা হয়েছে, ‘মহাকালের আলোর গোলক হাসে সরস উল্লাসে,/ রুদ্রের বিছানায় উষ্ণ অনুভব-সবুজ/ নাচে হাওয়ার বৃক্ষ ও প্রান্তরে।’ এ জগতের মায়াজালে মানুষের ছায়াও আটকে যায় কোনো কোনো সময়। তারপরও এক হৃদয়জ তাড়নায় আমরা ছায়ার পেছনেই ঘুরি। মুহাম্মদ মুহিদ তাঁর এক কবিতায় বলেছেন, ‘অনন্ত অন্ধকারে ছায়াগুলি অদৃশ্য হয়ে যায়।/ ইচ্ছের বাগানের ফুল ঝরে পড়ে অবহেলায়,/ দেখা হলো না আর/ জীবনের ভাঁজে ভাঁজে গুঁজে থাকা অতৃপ্ত বাসনার গোলাপ।’
মো. ওয়াছি উদ্দিন তালুকদার রায়হান : এ গ্রন্থে তাঁর ১০টি কবিতা ছাপা হয়েছে। তাঁর কবিতায় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর অবস্থা ও অবস্থান, মুক্তিযুদ্ধে মানুষের অনন্য সাধারণ ভূমিকা, অবরুদ্ধ নয়মাসে মানুষের দুঃখ-দুদর্শা, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক-দালাল রাজাকার-আলবদর গোষ্ঠীর দৌরাত্ম প্রভৃতি বিষয়গুলোকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলেছেন। তাঁর কবিতায় ওঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের নানা অনুসঙ্গ। বিশেষ করে ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে ধারণ করেছে তাঁর কবিতা। রাজনীতির নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারার বিষয়ও স্থান পেয়েছে তাঁর কবিতায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলার কথা তিনি ক্ষোভের সাথে তোলে ধরেছেন তাঁর কবিতায়। তাঁর এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘ইদ্রিছ আলী ঝুড়ি বুনে/ সাহসী শাহজাহান ইটের ভাটায় ইট পোড়ায়। তাতে কোনো দুঃখ নেই তফাজ্জল মিয়ার/ তবু তার চোখ হয়ে ওঠে ছলছল/ নীরবে ঝরে বিজয়ী সে চোখের গরম নোনাজল/ বিজয়ের দিনে অনুযোগে বলে,/ ‘মুক্তিযুদ্ধ কিভাবে কিনে নেয় মাসুদ সিদ্দিকীর দল।’ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভৎস রাজনীতি ও রাজনীতি ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার তাঁর কবিতা। তাঁর সাহসী উচ্চারণ ‘ভয়ার্ত চোখ আর কতোকাল রবে ভয়ের আঁধারে/ অসুক প্লাবনে আর কতো ভাসবে সাদা রঙের প্রাণ?/ চোখ রাঙিয়ে তাকাও একবার সম্মুখ পানে।/ হারামিরা মাথাগুলো গুজবেই শ্মশানে কিংবা গোরস্তানে।’ মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভীষিকাময় দিনের কথা ওঠে এসেছে তাঁর কবিতায়। তিনি স্মৃতিচারণ করেছেন এসব বিষয় নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিদিনের মতো মুঠোফোনে সেই একজনের কণ্ঠ/ স্বাধীনতা দিবসেও পরবাসী চোখের ঘুম ভাঙালো/ বড় আব্বু আজকে আমাদের স্বাধীনতার দিন/ তোমাদের কোনদিন?/ স্বাধীনতার শুভেচ্ছা তোমাকে/ ঘুমের ঘোরেই জবাব দিলাম সবুজ প্রজন্মকে,/ আমাদের প্রতিদিনই স্বাধীনতার দিন।’ অপর এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘পিপাসার শবযাত্রায় খুঁজে পাই,/ পাশের বালিশে নিথর দেহে/ চিকন শ্যামা চেনা মানুষটি শুয়ে আছে/ সমস্ত ঘরজুড়ে/ ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাজার রকম মায়ার ধূপ।’ তাঁর কবিতায় দেশপ্রেম ও ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় চমৎকার ভাবে ফুটে ওঠেছে। আদর্শবাদী মানুষকে হত্যা করা যায়, প্রতিষ্ঠান পোড়ানো যায়, কিন্তু আদর্শকে ধ্বংস করা যায় না- এই শ্বাশত সত্যকেও বুকে ধারণ করেছে তাঁর কবিতা। শত হতাশার মাঝেও কবিতা মানুষকে সাহসী করে তোলে। মানুষ আশায় বুক বাঁধে। তিনি তাঁর এক কবিতায় বলেছেন, ‘একখানা জীবন আমার বুকে ধুঁকে বেঁচে থাকে,/ বিবর্ণ দুইখানা চোখকে দুইখানা এনার্জি বাল্ব করে/ মন ঘরে জ্বালিয়ে রাখার আশায়,/ একখানা বিধ্বস্ত মুখকে এক ফালি চাঁদ রূপে।/ মন গগনে চিরস্থায়ী আবাসন গড়ে দেয়ার কল্পনায়।’
এম মোসাইদ খান : এ গ্রন্থটি তিনি সম্পাদনা করেছেন এবং এতে তাঁর ১০টি কবিতা ছাপা হয়েছে। তাঁর কবিতায় তিনি সমাজ ভাবনা, জীবনবোধ ও যাপিত জীবনের নানা চিত্র বৈচিত্রকে শিল্পময় করে তোলেছেন। সমাজের নানা অসংগতি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মনস্তান্তিক জটিলতা প্রভৃতি সবকিছুই এসেছে তাঁর কবিতায়। তাঁর এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘পুরাতন ভাঙা চশমায় নতুন অন্ধকার/ নির্বীক পৃথিবীর/ অবাক চোখ দখলদার হাতের মৃত্যু ব্যবসা।’ চরিত্রহীন মানুষের ইতরামী তাকে পীড়া দেয়। কবিতার ভাষায় তিনি তুলে ধরেন মানুষ নামধারী পশুদের অপকর্ম। তিনি বলেন, ‘নাড়ির গিট্র আঙ্গুলের ভাঁজ/ ছিঁড়ছে কতো হেঁচকা টানে/ পশুর ভেতর দৌড়ে মানুষ/ ডুবছে দেখো স্বার্থস্নানে।’ সমাজের নানা অবক্ষয় ও অধপতন ধরা পড়েছে তাঁর কবিতায়। চমৎকার ্উপমা উৎপেক্ষা চিত্রকল্পের ব্যবহার তাঁর কবিতাকে শক্তিশালী করেছে এবং প্রাণসঞ্চার করেছে। এক কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘ঝড়ের উৎসবে বৃষ্টি মাঝে রাজ-রাজ কপালে/ অনাদরী হাতের ফাঁক গলে/ তারারা খসে পড়ে সুদুর গৃহে,/ নির্বোধ কাঁপে ডুবে থাকে দিনমান/ রাতের পেয়ালায় লাল-নীল চোখ।’ তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও প্রতি পলে পলে শিকড়ের টান অনুভব করেন। যেমন- ‘মনন মজ্জায় শিকড়ের টান,/ দেখি মমত্ববোধের দীর্ঘ মিছিল।’ অন্য এক কবিতায় তিনি বলেছেন, একচোখা আলোর মোহময় ভঙ্গিতে/ মঞ্চ মাতিয়ে রাখে নিরূপম ছায়া/ সুখের সপ্তডিঙ্গায় কতো দুঃখের বিলাস। প্রমত্তা অসুখে যতো সুখ সুখ ভান/ চামড়ার গভীরে লাল-নীল কষ্ট।’

ময়নূর রহমান বাবুল এর একগুচ্ছ কবিতা

b

 

 

 

 

 

 

  আপন ঘরে অন্য কেউ

যে ঘরে তুমি বসবাস করো সুহাসিনী
আসলে সে ঘরটা তোমার নয়
যে মাঠে তুমি খেল, হাটা চলা করো
সে মাঠের খেলায় অন্যের থাকে জয়।
যে পুকুরে সাঁতার দাও,
যে নদীতে নৌকা চালাও
সে জলে তোমার হয়না ঠাঁই
চারিদিকে বিত্ত-বৈভব আছে অনেক
তোমার আসলে কিছুই নাই।
যে গল্পে বার বার বিরহ কাহিনী
সে গল্পে তোমার নাম পাই।

মায়াডোরে বাঁধা নিত্য খেলা
সুখ ভরা সংসার-
যে ঘর চির চেনা, যে ঘরে সবই আছে
সে ঘরখানি নয় তোমার।
তোমার কাহিনীতে রচিত যে গল্প
যে গল্পে তোমার অবয়ব
সে গল্পে বীর দর্পে চলে
অন্যসব কুশীলব।

সেই ছেলেটি

হালকা গড়ন, ঝাকড়া চুলে
টানা টানা কালো চোখে
সাইকেলেতে প্যাডেল মেরে
রোজ সকালে আসতো যেতো…

মাষ্টার বাবুর ধারাপাতে
গান গাইতো সে রেডিওতে
রাজপথেও মিছিল দিতো
লেখা-পড়ায় কবিতা গানে
সবকিছুতেই প্রথম হতো…

সেই ছেলেটি আমায় একদিন
চিঠি দিল। অনেক কথা লিখা তাতে-
কী লিখেছে ?
অতশত মনে যদিও আজ পড়েনা
নির্ঘাৎ তাহা ছিলো প্রেমের !
এই বয়সের ছেলেরাতো তাহাই করে।
সেই চিঠিতে আমার খুশী উথলে উঠে
প্রেম যমুনায় জোয়ার আসে…

সেই ছেলেটি ভালো ছিলো-
এত্তো ভালো, সকল কাজে।
আসলে সে দেয়নি চিঠি
ইহা আমার কল্পনাতেÑ
যখন তারে দেখতাম আমি
আসতো যেতো সামন দিয়ে
আমার তখন মনে হতো :
এই বুঝি সে বলবে কথা, দেবে চিঠি
চিঠি কিংবা কথা কিছু দেয়নিতো সে
তবু আমার বুকের মাঝে
তার কথাটা সদাই বাঝে
ঝাকুনি দেয়, মিছিল করে…

সেই ছেলেটি যুদ্ধে গেল, একাত্তরে
মা’র পা’য়েতে সালাম দিল, দোয়া নিল
আমার দিকে চায়নি তখন, ব্যস্ত ছিলো !
জড়িয়ে ধরে মেশিন গানে। এগিয়ে গেলো

আমি তাহার পথের দিকে চেয়ে থাকি-
দূর অনন্তে চোখের পলক শেষ দিগন্তে-
আজও আমি চেয়ে আছি… ফিরেনি সে.. ।

খোঁজা

আজ সায়াহ্নে পিল পিল করে মনে
তোমাকেতো কোথাও খোঁজে পাই না
নাগালের চতু:সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছ তুমি
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটে বেড়াও এখন
স্বাধীনতার স্বাধ তুমিই কেবল পেয়েছ
সব ধরা-ছুঁয়ার বাইরে তোমার অবস্থান..

আমি এখনো শ্লোকের পর শ্লোক আর
লাইনের পর লাইন আবৃত্তির ঢেউ তুলি
আমার ভরা কণ্ঠের জোরালো আওয়াজে
সারা সভা প্যান্ডেল থর থর কেঁপে উঠে
শ্রোতাদের মুহুর্মুহু হাততালি বাজে অবিরাম
কিন্তু তোমার কেন এতো নিরবতা
কেন তুমি থাকো এতো শুনশান ?

নিরব ছিলে তুমি তখনো আবার সাহসীও
শুধু সাহসী নয় তুমি ছিলে প্রচন্ড বিপ্লবীও
শিকল ভাঙার কতো যে গান গেয়েছ
শক্ত শিকল তুমি ভেঙেছও বার বার
তবু তোমার কেন যে ছিল না
ছুঁ মেরে শক্তিধর ঈগলের মতো
আমাকে অনায়াসে তুলে নেবার

স্মৃতিগুলো আমার

কর্পূর দেয়া ছিলনা বলে আমার তোরঙ্গে
পুরনো স্মৃতিগুলো সব
তেলাপোকা, উইপোকা, পোকামাকড়ে মিলে
খেয়ে দেয়ে ভষ্ম করেছে।
কতো মধুর স্মৃতি ছিলো
জমানো কতো সোনার স্মৃতি
রূপোর স্মৃতি মণিমুক্তা খচিত।

সুখের স্মৃতিগুলো আজ নাই
খেয়েছে ইঁদুরে অথবা-
কর্পূরের মতো মিলিয়ে গেছে
মিশে গেছে বাতাসে।

দুলি অঞ্জলি, কেউ এখন আর স্মৃতিতে নেই
সুনা হিরু’র নাম ই তো আর মনে নেই আজ..

সামনে বাকি অনেক কাজ,
সামনে আগাই, পিছন ফিরে তাকাই
সাথে আছে কিছু বিরহের স্মৃতি
মনে পড়ে শুধু হারানোর কথা-
কুরে কুরে মোচড় মারে শুধু-
বিচ্ছেদের ব্যথা, হারানোর বেদনা
ও গুলো খায়নি ঘূণে, তিতা বলে
মিষ্টি স্মৃতিগুলো একেবারেই আজ আর নাই
টক্ ঝাল বিস্বাদের গুলোই শুধু বয়ে বেড়াই।

দু:খ তবু দাও

এই মেঘলা মেদুর বরষা দিনে
তোমার হাসিতে সুখ দিতে না পারো
চোখের জল তবে ফিরিয়ে নাও।

এই শিউলি ফোটা সেফালী ঝরা
শিশির ভেজা রূপালী শরতে
গোলাপ দিতে যদি না পারো
জুঁই চম্পা আর চামেলীতো দাও।

সোনালী হেমন্তে সোনার দোলায়
শীত সকালের মিষ্ঠি পিঠায়
কুল কামিনির গন্ধ না দাও

পলাশ ফোটা শিমুল রঙে
কৃঞ্চচূড়ার লাল আঙিনায়
দাঁড়িয়ে তুমি বারেক ফিরে
আমার দিকে একটু তাকাও

সুখ যদি না পারো
দু:খ তবু দাও।

জীবনের বিষয়গুলো

জীবনে অনেক সত্য আছে
স্পষ্টকরে যা যায় না বলা
জীবনে অনেক বাঁধা আছে
চাইলেও তা যায় না দলা।

জীবনে অনেক ব্যাথা আছে
কোথায় ব্যাথা যায়না বুঝা
জীবনে অনেক হারিয়ে যায়
কখনোও তা হয়না খোঁজা।

জীবনের অনেক কষ্ট থাকে
সুখের দিনে যা পড়েনা মনে
জীবনের অনেক স্মৃতি কথা
ভেসে উঠে তা ক্ষনে ক্ষনে।

Developed by: