
লোকটা জানলোও না
লোকটা জানলোও না……
সেও নিয়ন হাতে হেঁটেছিল আঁধার মিছিলে_
প্রতিশ্রুতির মাধ্যাকর্ষণে, আলোক কেন্দ্রের দিকে
গায়ের ঘাম, পায়ের ধূলোয়, বানিয়েছিলো অলীক আকাশ
আর দেবতা বানিয়েছিলো, সংগোপনে প্রসাদ খোর দের ।
সে স্বপ্নেও ভাবেনি তার ঘাম,ধূলো, রক্ত, আবেগ…
আকাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়বে তারই অরক্ষিত মাথায়…।
লোকটা জানলোও না……
তার ঘাম-রক্তে গড়া দেবতার লকলকে জিহ্বা
চেটে পুটে খাবে তারই থেঁতলানো লাশ…
তার স্বজনের চোখের বরফ কিনবে অল্পদামে
শোকের হাটে বিকোবে কয়েক লাখী মলম…।
আবারও ঘাম, পায়ের ধূলো, রক্ত, আবেগ_
আর প্রসাদ খোর দেবতার বিলাসী মন্দিরের স্বপ্ন ।
লোকটা জানলোও না……
আজও তার অসহায় সন্তানও হাঁটে সেই আঁধার মিছিলে
নতুন নিয়ন হাতে, কানে বাধ্য সময়ের পদধ্বনি
ঝরা পাতার হুঙ্কারে, মেকী স্বপ্ন চয়নে …..
আবারও অলীক আকাশ , সেই দেবতা, মন্দির, প্রাসাদ…
হাসি চাপা আশঙ্কায় আকাশ ভাঙ্গার পুনরাবৃত্তি ।।
নীল আকাশের নীচে
গ্রাম জোড়া আগ্নিদগ্ধ ধ্বংসস্তূপে_
জেগে আছে স্পষ্ট নির্ভয় গণতন্ত্রের ছাপ…।
অবাধ আগুনে সুষ্ঠু দহন …
মাথা গোঁজার ঠাইয়ের ছাই এ হাসে মৌলিক অধিকার ।
রংবেরঙের ঝাণ্ডা ধরা মুষ্ঠিবদ্ধ দগ্ধ হাতগুলো তে
‘আমার থেকে দামি’ বার্নলের সিক্ত প্রলেপ…।
উল্টে যাওয়া ভাতের হাঁড়িতে অন্নসংস্থান…
পুড়ে কুঁকড়ে যাওয়া যানবাহনে উন্নয়নের গতি…
বেকার ছেলেমেয়ের পোড়া শংসাপত্রে নিশ্চিত কর্মসংস্থান
জামাকাপড়ের ভস্মস্তূপে জেগে ওঠা সংস্কৃতি, শালীনতা
গর্ভস্থ ভ্রূণকেও বিরোধী দলের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ।
নিরপেক্ষ আগুনের সার্বভৌমত্বে _
দলমত নির্বিশেষে সফল গৃহদাহ পরিষেবা…।
সাম্যবাদী ভাবনায় রঙ-অহং বিভেদ ঘুচিয়ে…
কালো কালো সাম্রাজ্যে সর্ব হারার বিজয় সম্মেলন
একক ছাদ ছেড়ে একত্রে নীল আকাশের নীচে ।।
পাশাপাশি
তোর কবরে আল্লা বাঁচে_
মোর শ্মশানে ভগবান।
মন্দিরেতে শঙ্খ সাঁজে_
মসজিদে ঐ আজান গান।
মোর সন্ধ্যে রামায়ণ-গীতা…
তোর হাদিস কোরানে_।
বল দেখি কে বলছে সেটা_
পুণ্য হবে রক্তস্নানে?
তুই ডুবে যা ঈদ-মহরমে…
আমার থাক হরেক পাবন।
বল দেখি্ কোন ধর্ম জ্ঞানে_
ভাই করে ভায়ের দহন ?
লয়ে পেটে ক্ষুধার আগুন_
সবাই ছুটি কর্মস্থানে।
জ্বলবে যখন হয়ে দ্বিগুন_
সেটা কোন ধর্ম মানে?
তোর-আমার ভিন্ন রুচি_
কাজ নেই ভাই অপমানে।
আমি নাহয় হিন্দু-ই থাকি_
তুই থাক ভাই মুসলমানে।।
সবাই সমান
বৈষম্যের এক রুদ্রবীণায়_
বেঁধেছো যে সাম্যের সুর,
কেমনে বাজবে উদারতায়_
ঘুচবে সকল নিকট-দূর?
বর্ণ-ধর্ম-লিঙ্গ- জাতে_
টেনে বাঁধা যে সুবিধাবাদ,
কেমনে পড়বে সকল পাতে
সাম্য-সুধার নিবিড় স্বাদ?
মাতৃ-ভূমির ধাক্কা, চাকায়_
লুটায় মানুষ, হারায় প্রাণ,
ধর্ম বিষের ধংস-লীলায়_
বিধর্মে হানে মৃত্যু বাণ।
সাম্যের গানই গাইবে যদি_
ঘোচাও বিভেদ,সকল টান।
মানবতা ঢেউ ভরুক নদী_
হোকনা মানুষ সবাই সমান।।
আদিম ক্ষুধা
আদিম গুহাবাসী মানুষ_
হিংস্র জঙ্গল, পাথুরে আগুন…
কাঁচা মাংসের ঘ্রাণ_
আধ ঝলসানো নির্বিচার রক্ত।
খাদ্য সংগ্রাহক থেকে উৎপাদক_।
বিবর্তনের পথে লক্ষ-কোটি বছর…
এখনও জঙ্গল, ইঁট-কাঠ-পাথরে…
মানব বৃক্ষের গায়ে জিন্সের বাকল,
মানবতা ও সুযোগ সন্ধানে গুহাবাসী,
ধর্ম প্রস্তর ঘর্ষণে অপ্রত্যাশিত দাবানল,
শিক্ষা, বিজ্ঞান ও বিশ্বায়নের কল্যাণে
পাথর হাতিয়ার থেকে উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র।
হাতে, মনে, ও যৌনাঙ্গে এখনও জেগে আছে
কাঁচা হিমোগ্লোবিনের অদম্য আদিম ক্ষুধা!